প্রতীকী ছবি।
ট্রে়ডমিলে দৌড়তে দৌড়তেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হল? কিংবা সকালে হাঁটতে গিয়েই বিপত্তি? কেন এমন হচ্ছে? কয়বয়সি হোক বা পশ্চাশোর্ধ্ব— এই ব্যামো যেন কাউকে ছাড়ছে না। যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে এমন অঘটন ঘটেই চলেছে। নিয়মিত শরীরচর্চা করেও কেন লাভ হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনে। ওঠাও স্বাভাবিক।
খবরের কাগজে, অনলাইন মাধ্যমে, টিভির পর্দায় সারা ক্ষণ শরীরচর্চা করার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। এ দিকে সিদ্ধার্থ শুক্লার মতো স্বাস্থ্য সচেতন কমবয়সি তারকা যখন হঠাৎ সকলকে চমকে দিয়ে বিদায় নিচ্ছেন, তখন সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ তো আরও জোরাল হচ্ছে। শরীরচর্চা করে কি তা হলে কোনও লাভ নেই? বিষয়টা এতটা সহজ নয় বলে মনে করেন শহরের বিশিষ্ট শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সুমনা দত্ত বর্মণ। ‘‘আপনি রোজ নিয়ম করে শরীরচর্চা করছেন মানেই যে আপনি ফিট, সেই ধারণা ভুল। এমন হতেই পারে অনেক রোগ আপনার শরীর চুপিসাড়ে বাসা বেঁধে রয়েছে। আপনি যখন জানতে পারছেন, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে,’’ বললেন সুমনা।
যে কোনও বয়সে, যে কোনও মানুষের শরীরচর্চা শুরু করার আগে কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে। সেগুলি কী, জানাচ্ছেন সুমনা।
১। শরীরচর্চা করে গেলেই হবে না। প্রত্যেক বছর এক বার অন্তত সব রকম মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। শরীরে কোথাও কোনও রকম সমস্যা আছে কি না দেখে নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময়ে কোনও রকম শারীরিক অসুবিধা হচ্ছে না বলেই কেউ পরীক্ষা করান না। কিন্তু তাতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কারও কোনও ধমনী বন্ধ রয়েছে কি না, রক্ত জমাটের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা না করলে জানা সম্ভব নয়।
২। সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা শুধু একটি অংশ। সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে ভাবেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে যা ইচ্ছে খাবার খাওয়া যায়। কিন্তু জাঙ্ক ফুড বা প্রসেস করা খাবার বা বেশি পরিমাণে ভাজাভুজি খেলে শরীরের যে পরিমাণে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়, তা শুধু ব্যায়াম করে সারানো সম্ভব নয়।
৩। শরীরচর্চা করার পাশাপাশি পরিমাণ মেপে ব্যালান্সড ডায়েটও খুব প্রয়োজন। শরীরে সব রকম পুষ্টিগুণ যাতে যায়, তার জন্য প্রয়োজন মতো ভিটামিন-মিনারেল সাপ্লিমেন্টও খেতে হবে। তবে বলে রাখা ভাল, কোন সাপ্লিমেন্ট কোনও ওষুধের সঙ্গে খেলে শরীরে অন্য কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা-ও দেখে নেওয়া প্রয়োজন। একেক জনের শরীর একেক রকম। এই কারণেই শারীরিক পরীক্ষা আরও দরকার হয়ে পড়ে।
৪। শুরুতেই অনেক ক্ষণ ধরে ব্যায়াম করা অনুচিত। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে। এবং শরীরকে সময় দিতে হবে মানিয়ে নেওয়ার। যার যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে। প্রত্যেক দিন শরীরচর্চা করাও ঠিক নয়। অনেকে ভাবেন শরীরচর্চা করার সময় আমাদের প্রতিরোধশক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। আদপে তা নয়। আসলে ব্যায়াম করার সময়ে আমাদের মাংসপেশিগুলি অক্সিডেটে়ড পরিস্থিতিতে থাকে। পরে শরীরকে সময় দিতে হয়, স্বাভাবিক হওয়ার। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম, ঘুম এবং সঙ্গে পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া করলে তবেই প্রতিরোধ শক্তি সবচেয়ে ভাল হয়। তাই সপ্তাহে তিন দিন এনডিয়োরেন্স ট্রেনিং এবং সপ্তাহে দু’দিন ওয়েট ট্রেনিং প্রয়োজন। অথবা পাঁচ দিনই দু’রকম মিলিয়ে করতে পারেন।
৫। পরিবারের কারও কোনও রকম হৃদ্রোগের ঘটনা রয়েছে কি না, তা দেখে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। অনেকেই এই বিষয়টা অবহেলা করেন।
বেশি শরীরচর্চার কুফল
দীর্ঘ ক্ষণ কার্ডিয়ো করা হৃদ্যন্ত্রের পক্ষে ভাল নয়। যাঁরা সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা করে দৌড়ন, তাঁদের শারীরিক ফিটনেস ভাল হলেও হৃদ্যন্ত্রের চার পাশের পেশিগুলি কিন্তু আরও সঙ্কুচিত হয়ে আসে। তাতেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে।
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জন্য হাল্কা থেকে মাঝারি কার্ডিয়ো বা অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এবং সঙ্গে ওয়েট ট্রেনিং সবচেয়ে ভাল। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নড়াচ়ড়া করে শরীর সুস্থ রাখতেই হবে। অন্তত এক মাস নিয়মিত করার পর ফল পাবেন। তবে মনে রাখবেন, এটা ছেড়ে দিলে কিন্তু ততটাই তাড়াতা়ড়ি রক্তচাপ বেড়ে যাবে।
পঞ্চাশের উপর বয়স হলে
চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়ে শরীরচর্চা শুরু করতে হবে। একটি ‘ফিট সার্টিফিকেট’ নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কম বয়সে অনেকে নিজে বাড়িতে ব্যায়াম শুরু করেন এবং পরে প্রশিক্ষক রাখেন। বয়স বাড়লে উল্টোটা প্রয়োজন। শুরু করা উচিত অভিজ্ঞের নজরে থেকে। পরে নিজেও করা যায়। অনেকের এই সময়ে হাড়ের সমস্যা থাকে। তাই এমন ব্যায়াম করতে হবে যাতে হাড়ের জয়েন্টগুলি সচল থাকে। ওয়েট ট্রেনিং সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। অনেকে মনে করেন, এত বয়সে কী করে ওজন তুলবেন। কিন্তু ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। হাল্কা ওজন নিয়ে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে ‘বোন ডেনসিটি’ ভাল থাকবে। হা়ড় ক্ষয়ে যাওয়ার গতি কম হবে। তাই অনেক সমস্যা তুলনামূলক ভাবে কমবে।