ছবি: শাটারস্টক।
সব স্মার্টফোনেই এয়ারপ্লেন মোড রয়েছে। কিন্তু এয়ারপ্লেন অর্থাৎ বিমানে সফর করার সময় সবাই স্মার্টফোনটিকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন কি?
সাধারণত এয়ারপ্লেন মোডে স্মার্টফোন সমস্ত নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমান সফরে যেহেতু এমনিতেই ফোনে নেটওয়ার্ক থাকে না। তাই অনেকেই আলাদা করে নিজের ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন না। বা রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু উড়ান প্রশিক্ষকেরা বলছেন, বিমানে সফরকালে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখাটা জরুরি। কারণ, তা না হলে বিমান আকাশে ওড়াকালীন ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল ক্রমাগত নেটওয়ার্কের খোঁজ করবে এবং বিমানের নিজস্ব ইলকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তির কাজে বাধা সৃষ্টি করবে।
আপনার মনে হতেই পারে, তাতে কী আর এমন অসুবিধা হবে? একটি ফোন থেকে নির্গত সিগন্যাল কী এমন ক্ষতি করতে পারে! বিষয়টি হল, একটি ফোন থেকে নির্গত সিগন্যাল বিশেষ কোনও সমস্যা তৈরি না করলেও ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীর ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল যদি এক সঙ্গে নেটওয়ার্কের খোঁজ করতে থাকে তবে তা বিমানের যোগাযোগ এবং দিক নির্ণায়ক প্রযুক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। তা থেকে ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইন্ডিয়ার উড়ান প্রশিক্ষক রাজা গোপাল। তিনি বলছেন, ‘‘আধুনিক বিমান ওই ধরনের ঝুঁকি কমাতে পারে ঠিকই। তারও একটা সীমা আছে। একটা প্রমাণ সাইজের বিমানে কম করে দেড়শো যাত্রী থাকেন। সকলেই যদি ভাবে একা আমার ফোন আর কী ক্ষতি করবে, তা হলেই ভাবুন বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।’’
তবে কি বিমান সফরে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে! রাজা গোপাল জানাচ্ছেন, বড় সঙ্কটের ঝুঁকি খুবই কম। তবে তা বিমানের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে। ককপিটের সঙ্গে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের যে যোগাযোগ প্রক্রিয়া তাকে ব্যাহত করতে পারে। বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে রাজা গোপাল বলছেন, ‘‘বিমান ওঠা-নামার সময়ে বিশেষ করে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা জরুরি। প্লেনের গতি এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা উচ্চতার জন্য ওই সময়ে ফোন বিভিন্ন টাওয়ার থেকে সিগন্যাল নিতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকে টাওয়ার। অন্য দিকে, বিমানও সেই সময়ে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকে। রেডিয়ো অল্টিমিটারের মাধ্যমে ৪ গিগা হার্টজ় রেঞ্জে চলে ওই যোগাযোগ প্রক্রিয়া। যা প্রায় মোবাইলের ফাইভ জি সিগন্যালের সমান। মোবাইলের সিগন্যাল সেই যোগাযোগকে ব্যাহত করতে পারে।’’
রাজা গোপালের মতে, ‘‘বিমান সফরে ফোনকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখার কাজটা আদতে খুব ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিমানে যারা সফর করছেন, তাদের প্রত্যেকের এবং আপনার নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এটা করা জরুরি।’’ তবে এ ছাড়াও বিমান সফর কালে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে আরও সমস্যা হতে পারে। হায়দরাবাদের গ্লেনিগলস হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মনীন্দ্র বলছেন, ‘‘যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি ছা়ড়াও বিমানসফরে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। বিমান সফরে বহু যাত্রীই কিছুটা উদ্বেগে থাকেন। ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা বিমানযাত্রীদের উদ্বেগ আরও বা়ড়িয়ে দিতে পারে।’’
চিকিৎসকেরা বলছেন, বিমান সফরের সময়টুকু বরং ফোনের ব্যবহার না করে বিশ্রামে কাজে লাগান। হালকা মেজাজের বই পড়তে পারেন। ঘুমোতে পারেন এমনকি, মেডিটেশনও করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।