এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দশ বছর আগে খাগড়াগড়, পাঁচ বছর আগে ডোমকল। এই দুই নাশকতার ঘটনার পরে সব স্তরে নজরদারি বাড়ানোর যে তৎপরতা দৃশ্যত দেখা গিয়েছিল, বাস্তবে তা কতটা কার্যকরী? সম্প্রতি আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখা আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) অসমে যে ভাবে চুপচাপ ঘাঁটি গড়তে শুরু করেছিল এবং পশ্চিমবঙ্গে স্লিপার সেলের সন্ধান করছিল, তা দেখে এই প্রশ্নই উঠেছে। আরও প্রশ্ন, প্রতি বার কেন স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটা বড় অংশ বিষয়টি আগাম জানতে ব্যর্থ? এর পাশাপাশি বড় আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, এবিটি-র ধৃত সদস্যদের জেরা করে জানা গিয়েছে, বাংলা-অসম সীমানায় নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তারা ভারতের পূর্ব সীমান্তে অস্থিরতা বাড়াতে তৎপর। সেখানেও অন্যতম লক্ষ্য হল, ভারতের মাটিতে স্লিপার শাখা প্রস্তুত করে রাখা। যাতে প্রয়োজন পড়লে হাতে হাতিয়ার তুলে নিতে পারে শাখার সদস্যরা।
অসম পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গি দমন অভিযানে সম্প্রতি ধরা পড়েছে শাহিনুর ইসলাম। ধুবুড়ি জেলার বিলাসিপাড়া থেকে এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে ওই জঙ্গি। এই নিয়ে এবিটি-র মোট ১১ জন ধরা পড়ল। পুলিশের মতে, এবিটি-র দলে অন্তত ২৬-২৭ জন ছিল। বাকিদের খোঁজে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্র। নজর রাখা হচ্ছে ধৃতদের ব্যবহার করা মোবাইল অ্যাপ ও সমাজমাধ্যমে।
অসমে গত কয়েক মাসে ধরা পড়েছে আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা হ্যারিস ফারুকি, জইশ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি। এ বারে পরপর পাকড়াও এবিটি জঙ্গিরা। উদ্ধার হয়েছে জঙ্গিদের অস্ত্রভান্ডারও। এবিটি-র সঙ্গে জয়েশের যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি বাংলার পুলিশের দলও জেরা করছে ধৃতদের। কোচবিহার ওআলিপুরদুয়ার জেলার অসম সীমানাবর্তী এলাকায় বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে, অসমের কোকরাঝাড়, ধুবুড়ি এবং বরপেটার সঙ্গে যেখানে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা আছে, সেখানে কারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন, তাঁদের উপরে নজর রাখা হচ্ছে।
এবিটি-র বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আরও বেশি করে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা নিয়ে। গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়তা বাড়াতে চাইছে পাক গোয়ন্দা সংস্থা আইএসআই। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকা বেশ কিছু খারিজি মাদ্রাসাকে ব্যবহার করতে চাইছে তারা। উদ্দেশ্য, সেখানকার পড়ুয়াদের বুঝিয়েসুজিয়ে তাদের বিভিন্ন বেআইনি কাজে ব্যবহার করা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘এটি একটি দীর্ঘকালীন প্রস্তুতি। যার প্রথম ধাপ হল মগজ ধোলাই। পরের ধাপে ওই পড়ুয়াদের মধ্যে কিছু ছাত্রকে বেছে নিয়ে অন্য দেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রয়োজন পড়লে তাঁদের নাশকতার কাজে ব্যবহার করা।’’
সূত্রের মতে, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষ করে বাংলাদেশে পালাবদলের পরে এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। আইবি বা সেনা গোয়েন্দাদের তরফে মনে করা হচ্ছে, এই গোটা এলাকায় যে জঙ্গি ‘নেটওয়ার্ক’ ছড়িয়ে পড়ছে, তা বড় কিছু ঘটাতেও পারে। তা খাগড়াগড় বা ডোমকলের মতোই হতে পারে।