cima

CIMA: শিল্প প্রাসঙ্গিক থাকে কিসের জোরে? আলোচনা সিমা গ্যালারিতে

কোন গুণে বেঁচে থাকে শিল্প? চর্চাই শেষ কথা? নাকি এর পিছনে থাকে সময়ের হাত? নানা প্রশ্ন উঠে এল সিমা গ্যালারির আলোচনায়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ২১:৩৬
রাজনীতি হোক বা শিল্প, ভাবনা কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না। সে ভাবনাই উঠে এল শনিবার সিমা গ্যালারির আলোচনাসভায়।

রাজনীতি হোক বা শিল্প, ভাবনা কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না। সে ভাবনাই উঠে এল শনিবার সিমা গ্যালারির আলোচনাসভায়। —নিজস্ব চিত্র

রাজ্য অস্থির। সিজিও কমপ্লেক্সে উত্তাল। এসএসকেএমে প্রস্তুতি। নাকতলা থেকে লালবাজার— কপালে ভাঁজ দিকে দিকে। শনিবার সন্ধ্যায় সে সবের মধ্যেই আরও গভীরে গিয়ে ভাবার প্রসঙ্গ উঠল।

রাজনীতি হোক বা শিল্প, ভাবনা কোনও গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না। আর থাকার কথাও নয়। সে বার্তাই যেন উঠে এল সিমা গ্যালারির সভা থেকে।

Advertisement

শিল্প নিয়েই কথা হওয়ার কথা ছিল। তা-ই হয়েছে। শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্তরাই অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু শিল্প বাকি জগতের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কী ভাবে শিল্পচর্চার মোড় ঘোরে সমাজের বাকি সবের সঙ্গে যুক্ত থেকে, ফিরে ফিরে এল তা-ও।

কিসের জোরে যুগের পর যুগ প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে শিল্প? ভাবনা না কি যুগের দাবি— তা নিয়েই গড়াল আলোচনা। তার সঙ্গেই জুড়ে গেল ভাবনা তৈরি হওয়ার প্রসঙ্গ। যুগের দাবি নির্ধারিত হওয়ার চিন্তা।

শুরুতেই গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকার বললেন, ‘‘আমরা একটি অস্থির সময়ে বাস করছি। আর আজকের দিনটি বিশেষ ভাবে অস্থির।’’ তারই মধ্যে কিছু ক্ষণ শান্ত হয়ে আরও একটু গভীরে গিয়ে ভাবা এবং আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছে এই গ্যালারি। চারপাশে অস্থিরতা যতই থাকুক, তার মধ্যেই যে তৈরি হয় শিল্পীর ভাবনা এবং দর্শকের শিল্পকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। আর সময়ের সঙ্গে নতুন ভাবে তৈরি হতে থাকে দুই-ই।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী ও শিল্পচর্চার ঐতিহাসিক শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়, শিল্প সমালোচক ঋতা দত্ত, লেখিকা অঞ্জনা বসু, কলা ভবনের অধ্যক্ষ পঙ্কজ পনওয়ার, চলচ্চিত্র পরিচালক মৈনাক ভৌমিক এবং শিল্পী সমীর আইচ। তাঁদের মুখে নানা ভাবে উঠে এল শিল্প বেঁচে থাকার নানাবিধ অর্থ। শিল্প বেঁচে থাকা মানে কি শুধু তা মনে রাখা? নাকি মনের উপর যে শিল্প দাগ কাটে, তাকেই আসল বেঁচে থাকা বলে?

নীলাদ্রিবাবু শুরুতেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন। তাঁর বিশ্বাস, শিল্পীর গুণ এবং দর্শকের তা অনুভব করার ক্ষমতা, দুইয়ে মিলে বাঁচিয়ে রাখে শিল্পকে। তবে শিল্পের অর্থই নতুন করে ভাবা প্রয়োজন বলে মনে করেন ঋতাদেবী।

সিমা গ্যালারির মুখ্য প্রশাসক প্রতীতি বসু সরকার যখন আলাপ করাচ্ছিলেন শনিবারের সভার আলোচনার বিষয়টির সঙ্গে, তখন তাঁর মুখেও উঠে আসে সমাজ, রাজনীতি ও শিল্পের মধ্যে সম্পর্কের কথা। রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়তে থাকা এ সময়ে কোথায় বিরাজ করে শিল্পের গুরুত্ব, তা নতুন করে ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়তার বার্তা ধরা থাকে তাতে। ঋতাদেবী সে কথার সূত্র ধরেই জানান, চারপাশে সব কিছুর সংজ্ঞাই বদলাচ্ছে। তা ভাবা প্রয়োজন। তার প্রেক্ষিতে কি বদলাবে শিল্পের সংজ্ঞাও? ওঠে প্রশ্ন।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী ও শিল্পচর্চার ঐতিহাসিক শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়, শিল্প সমালোচক ঋতা দত্ত, লেখিকা অঞ্জনা বসু, কলা ভবনের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কনওয়ার, চলচ্চিত্র পরিচালক মৈনাক ভৌমিক এবং শিল্পী সমীর আইচ।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী ও শিল্পচর্চার ঐতিহাসিক শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়, শিল্প সমালোচক ঋতা দত্ত, লেখিকা অঞ্জনা বসু, কলা ভবনের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কনওয়ার, চলচ্চিত্র পরিচালক মৈনাক ভৌমিক এবং শিল্পী সমীর আইচ। —নিজস্ব চিত্র

শ্রেয়সীদেবী তুললেন শিল্পীর ভাবনার প্রসঙ্গ। তাঁর কার্যক্ষমতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা। সমীরবাবু এক অর্থে সায় দিলেন তাতে। শিল্পী বললেন, ‘‘আর্টে হার্ট থাকতে হবে। যে আর্টে হার্ট নেই, তা আমার কাছে আর্ট নয়।’’ হৃদয় দিয়ে শিল্প সৃষ্টির কথা বললেন বটে। তবে সে হৃদয়ের মধ্যে ধরা থাকতে হবে শিল্পীর চারপাশ। পড়তে হবে বর্তমান সময়ের আভা। সে ভাবনা আরও একটু এগিয়ে নিয়ে গেলেন মৈনাকবাবু। শুধু শিল্পীর হৃদয় নয়, দর্শকের হৃদয়ের কথাও উঠে এল তাঁর বক্তব্য। জানালেন, তাঁর কাছে শিল্প সেটিই, যা অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে। অর্থাৎ, প্রকৃত শিল্প ছুঁয়ে যাবে অন্যের মন।

তবে কি জগৎ, সময় কী চাইছে তা-ই নির্ধারণ করবে শিল্পের গুরুত্ব?

সমীরবাবু কিন্তু একেবারে একমত নন। বরং তিনি সময়ের নিরিখে নিজের মন বোঝার উপরে জোর দিতে চান। যে নিজের মনকে গুরুত্ব দেবে না, তার শিল্প অন্যের মনে দাগ কাটবে না কি তবে? নতুন ভাবনারও জন্ম হবে না? উত্তপ্ত এই দিনে সেখানেই যেন জন্ম নিল শিল্পের সংঘাতের প্রসঙ্গ। সকলের মুখে ঘুরেফিরে উঠে এল মন ও মস্তিষ্কের মিলমিশ এবং বিপরীতে যাওয়ার কথা। শুধু সাময়িক ভাবনা যে সেরা শিল্পের জন্ম দেয় না, সে কথাও। কখনও আলোচনায় উঠে এলেন ইংরেজি রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। কখনও আবার এল সমকালীন জুডিত বাটলারের তত্ত্ব।

নানা জনে নানা প্রেক্ষিতে দেখলেন শিল্পকে। শিল্পীর ভাবনাও সে ভাবেই এগোয়। কিন্তু শৈলীর গুরুত্ব তাতে কমে যায় না। কথার পিঠে তা-ও উঠে এল। সৌন্দর্যই কি শুধু শিল্প হবে? উত্তর মিলল তারও। যা ধাক্কা দেয়, তা-ও যে শিল্প। আর এ ভাবেই গড়াল শিল্পের নানা আঙ্গিক, শিল্পচিন্তার নানা দিকের গুরুত্ব।

আর সব ধরনের বর্ণনার সঙ্গেই জড়িয়ে-পেঁচিয়ে রইল প্রেক্ষিত। যা কি না তৈরি হয় সময়ের নিরিখে। শিল্পের ভাবনা আর যুগের দাবি, কোথাও কোথাও হাত মেলাল। কোথাও আবার যুগের আগে এগিয়ে গেল শিল্পীর গুরুত্ব। ঢুকে পড়ল রাজনীতিও।

আলোচনা শেষ হইয়াও তাই হইল না শেষ। সবের মধ্যে গুরুতর জায়গা করে নিল সময়।

আরও পড়ুন
Advertisement