—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বুড়ো আঙুলের নখের কোণে উঁচু হয়ে থাকা একটুখানি চামড়ার অংশ, তাই নিয়ে যত মাথাব্যথা। পোশাক খোলা কিংবা পরার সময়ে, স্নান সেরে তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে গেলে, এমনকি, ঘুমোনোর সময়ে গায়ে দেওয়া চাদরে হালকা খোঁচা লাগলে এমন অবস্থা হয় যে, মাথার টিকি পর্যন্ত ঝনঝন করে ওঠে। ঘুমের মধ্যেই চোখের জলে- নাকের জলে অবস্থা হয়। অন্য উপায় না পেয়ে অনেকেই ‘নিপুণ দক্ষতায়’ নিজের দাঁত দিয়ে সেই ছাল কেটে, অতিরিক্ত ওই অংশটি সমান করে ফেলতে চান। কিন্তু সে আর হয় কোথায়? ‘শিল্প’ করতে গিয়ে তো আরও বিপদ! গোড়া থেকে তো কাটা যায়-ই না। উল্টে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে। তেলে-জলে কিংবা ক্রিমে— কিছুতেই তাকে আঙুলের চামড়ার সঙ্গে আর ‘শুইয়ে’ রাখা যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই উঠে থাকা চামড়ার অংশটিকে বলা হয় ‘হ্যাংগনেল্স’। অর্থাৎ, ঝুলন্ত নখ।
‘হ্যাংগনেল্স’ ঠিক কী?
নাম শুনে মনে হতে পারে, এটি নখেরই অংশ। আদৌ তা নয়। নখের পাশে থাকা ত্বকেরই ক্ষুদ্র একটি অংশ হল এই হ্যাংগনেল্স। নখের কিউটিকল বা গোড়া থেকে ওই চামড়াটি আলাদা করে উঠে এলে, বাতাসের সংস্পর্শে তা ত্বকের অন্যান্য অংশের তুলনায় শক্ত হয়ে যায়। আর এই ‘হ্যাংগনেল্স’ যত শক্ত হয়, আঙুলে খোঁচা খাওয়ার আশঙ্কাও ততই বাড়তে থাকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শরীরের একাধিক স্নায়ু এসে শেষ হয়েছে আঙুলের ডগায়। তাই এই অংশটির ত্বক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, এ ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে বলে অনেক সময়েই ‘হ্যাংগনেল্স’-এর সমস্যা বাড়ে।
আরও কী কী কারণে আঙুলের পাশ থেকে চামড়া ওঠার সমস্যা দেখা দেয়?
আঙুলের চামড়া নানা কারণে শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। যেমন, বার বার জল দিয়ে হাত ধুলে, কাপড় কাচা বা বাসন মাজার সাবানে থাকা রাসায়নিক আঙুলে লাগলে, এমনকি নখের পাশে অতিরিক্ত নেলপলিশ রিমুভার লাগলেও এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, প্রতিটি জিনিসই নখের পাশের চামড়াকে শুষ্ক করে তোলে।
যাঁদের নখ, নখের কোনে থাকা কিউটিকল দাঁত দিয়ে টেনে ছেঁড়ার অভ্যাস রয়েছে, তাঁদের আঙুলেও ‘হ্যাংগনেল্স’ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সালোঁয় গিয়ে ম্যানিকিয়োর করার সময়ে কর্মীরা একটি যন্ত্র দিয়ে নখের কিউটিকলগুলিকে জোর করে পিছনের দিকে ঠেলে দেন। এই অভ্যাস থেকেও কিন্তু নখের পাশ থেকে ছাল ওঠে।
এ ‘রোগের’ আছে কি কোনও চিকিৎসা?
‘হ্যাংগনেল্স’ নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। জামাকাপড়ে বার বার খোঁচা লাগে। ওই অংশে মশলাপাতি লাগলে জ্বালা করে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে ঘরোয়া একটি টোটকা আছে। নখের আশপাশের চামড়া নরম করে রাখতে পারলে এই ধরনের কষ্ট অনেকটাই নিরাময় করা যায়। তার জন্য কী করতে হবে?
১) ঈষদুষ্ণ জলে আঙুলগুলো ডুবিয়ে কিছু ক্ষণ বসে থাকতে হয়। যদি অবস্থা গুরুতর হয়, সে ক্ষেত্রে ওই ঈষদুষ্ণ জলের মধ্যে অল্প পরিমাণে হোয়াইট ভিনিগার মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। যাতে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ রোধ করা যায়। তবে, জল এবং ভিনিগারের অনুপাত হবে ৩:১। এর চেয়ে বেশি যেন না হয়।
২) ত্বকের ওই অংশের চামড়াটি নরম হয়ে গেলে তার পর জীবাণুমুক্ত করতে কিউটিকল কাটার কাঁচি দিয়ে তা অত্যন্ত সাবধানে কেটে ফেলতে হবে।
৩) এর পর ওই জায়গায় ভাল করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে নখের পাশের ত্বক যেমন নরম থাকবে, তেমনই সহজে শুষ্কও হয়ে পড়বে না। হ্যাংগনেল্স’ সারতে মোটামুটি ৩ থেকে ৫ দিন সময় লাগে। তার মধ্যেই ক্ষত শুকিয়ে আঙুলের চামড়া আবার আগের মতো হয়ে যায়।