মুকুটমণিপুর মেলায় ফ্যাশন শোয়ের মঞ্চে আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রীও। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও সরকারি উদ্যোগে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঁকুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী মুকুটমণিপুর মেলা। নানা ধরনের পোশাক, হাতের কাজের জিনিস, গৃহস্থালির নানা সামগ্রী, হরেক রকম খাবারের সঙ্গে মেলায় এ বারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ফ্যাশন শোয়ে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের র্যাম্প ওয়াক। মুকুটমণিপুরে রাজ্যের প্রথম আদিবাসী ফ্যাশন শোয়ের মঞ্চে ঝড় তুললেন রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না মান্ডিও।
ফ্যাশন শো-এর মাধ্যমে আদিবাসী বা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, পোশাক, রীতি-রেওয়াজ তুলে ধরার ভাবনা থেকেই এমন উদ্যোগ বলে জানান মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি।জীবনের প্রথম বার র্যাম্পে হেঁটে নিজেও আপ্লুত তিনি। তাঁর কথায়, “আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতিতে বিভিন্ন পরব অনুযায়ী শাড়ি পরার যে ধরন, সে বিষয়ে সকলে জানেন না। সহরাই, বাঁধনা, করম-সহ বিভিন্ন উৎসব ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। প্রতিটি উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আদিবাসী পুরুষ ও মহিলাদের ভিন্ন ভিন্ন পোশাক রয়েছে। এই মঞ্চে ছোট ছোট করে সেই সব দেখানোর চেষ্টা করেছি।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের ‘পাঞ্চি’ শাড়িও রাখা হয়েছিল। মনের ভয়, জড়তা কাটিয়ে সকলের সামনে র্যাম্পে হাঁটার প্রাথমিক আদবকায়দা ছেলেমেয়েদের শিখিয়ে দিয়েছিলেন জ্যোৎস্না নিজেই। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছেন স্থানীয় নৃত্য প্রশিক্ষক অর্ণা মান্ডি। আনকোরা আদিবাসী জুটিদের র্যাম্প ওয়াক করতে দেখার পর, মেলায় আসা পর্যটকদের মুখে ছিল শুধুই প্রশংসা। বাঁকুড়ার খাতড়া আদিবাসী কলেজ থেকে এগারো জোড়া আদিবাসী পড়ুয়াকে বাছাই করে তাঁদের সাত দিন ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরই মঞ্চে আনা হয়েছে বলে জানিয়ছেন উদ্যোক্তারা।
আদিবাসী ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে তাঁদের সঙ্গে মঞ্চে হাঁটতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রীকেও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শুধু সাঁওতাল বলে নয়, যে কোনও জাতির ক্ষেত্রেই গায়ের রং নিয়ে একটা বিভেদ থাকে। কালো মেয়েদেরও সুন্দর লাগে, তাঁরাও যে র্যাম্পে হাঁটতে পারেন সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলাম।” লাইট, ক্যামেরার মাঝে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলে তাঁরাও নতুন কিছু করে দেখানোর সুযোগ পেতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মুকুটমণিপুর মেলা কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা খাতড়ার মহকুমাশাসক নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ফ্যাশন শোয়ের মাধ্যমে স্থানীয় আদিবাসী তরুণ-তরুণী ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সুযোগ পেলেন, তেমনই এই অনুষ্ঠান ঘিরে পর্যটন শিল্পেও জোয়ার এল।”