নবাবের শহরে সেরা খাবারের সন্ধানে। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর সময় শহরের ভিড়, কোলাহল, দুর্গাপুজোর জাঁকজমক ছেড়ে একদল মানুষ প্রতি বছরই ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। কেউ বেছে নেন পাহাড়, কেউ আবার সমুদ্র। কারও আবার পছন্দের তালিকায় থাকে দেশের প্রাচীন শহরগুলি। সেখানকার রূপ-রস-গন্ধ ও লুকিয়ে থাকা নানা রহস্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। আপনার এ বারের গন্তব্য কি লখনউ?
‘বাদশাহী আংটি’র শহর, কবাবের শহর, ইতিহাসের শহর, চিকনকারির শহর— যে নামেই ডাকুন না কেন, লখনউ থাকবে লখনউয়েই। নবাবি গন্ধমাখা এ শহরের নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রামানুজ। কথিত, লক্ষ্মণের রাজধানী ছিল এই নগরী। সেখান থেকেই তার নাম লক্ষ্মণাবতী বা লক্ষ্মণপুরী। একাদশ শতকে এই জনপদের পরিচয় ছিল ‘লখনপুর’ বা ‘লছমনপুর’ নামে। সেখান থেকেই ক্রমে ‘লখনউ’।
নবাবের শহর লখনউয়ে ঘুরতে গেলে সেখানকার খাবার চেখে না দেখলেই নয়। খাদ্যরসিকদের জন্য কিন্তু এই শহরটি স্বপ্নরাজ্যের সমান। লখনউয়ের প্রতিটি গলির পাশ দিয়ে হাঁটলেই নাকে আসবে খাবারের সুবাস। বিরিয়ানি থেকে কবাব, মিষ্টি থেকে রকমারি চাট— রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাহারি খানাপিনার দোকান অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। তবে লখনউয়ে ঘুরতে যাওয়ার আগে জেনে নিন, কোন কোন খাবারের বিপণিতে ঢুঁ না মারলে নবাবের শহরে আপনার সফরটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
তুন্ডে কবাবি: কবাবপ্রেমী হলে লখনউয়ের এই ঠিকানায় যেতে ভুলবেন না যেন। তুন্ডে কবাব কিংবা গলৌটি কবাবের জন্ম এই লখনউতেই। এই শহরের অলিগলিতে বিক্রি হয় গলৌটি কবাব। তবে সেরা স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে এই ঠিকানায়। সেখানে রুমালি রুটি কিংবা মোগলাই রুটির সঙ্গে নরম তুলতুলে মটন গলৌটি কবাব, সঙ্গে ধনেপাতা-পুদিনার চাটনি আর পেঁয়াজ। এ স্বাদ এক বার পেলে মনে থেকে যাবে বহু দিন। এক প্লেট (৪ পিস) গলৌটি কবাবের দাম পড়বে ১৩০ টাকা। খেয়ালি গঞ্জের মোহনমার্কেটের এই দোকানটি সকাল ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ওয়াহিদ বিরিয়ানি: ১৯৫৫ সাল থেকে এই দোকানের রমরমা লখনউ জুড়ে। এখানকার চিকেন বিরিয়ানির স্বাদ ভোলার নয়। কলকাতার মতো আলু, ডিম না থাকলেও এখানকার বিরিয়ানি বেশ সুগন্ধি ও মশলাদার। অর্ধেক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম পড়বে ১১০ টাকা। সঙ্গে পাবেন রায়তা ও সালান। যদিও নরম তুলতুলে মাংসের টুকরো দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আলাদা করে কোনও পদের প্রয়োজন পড়বে না। তবে ইচ্ছে করলে চিকেন মশালা ও চিকেন টেংরি কবাব চেখে দেখতেই পারেন। সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই দোকানটি খোলা থাকে। তুন্ডে কবাবি দোকানের ঠিক পাশেই এই রেস্তরাঁটি খুঁজে পাবেন আপনি।
ইদরিস বিরিয়ানি: লখনউয়ের এই দোকানটি বিরিয়ানির অন্যতম প্রাচীন দোকান। তেমন কোনও রেস্তরাঁ নয়, রাস্তার ধারে ছোট এই খাবারের দোকানের বিরিয়ানির স্বাদ নিতে হলে আপনাকে কিন্তু ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়াতে হবে। এখানকার চিকেন ও মটন বিরিয়ানি, দু’টিই সমান জনপ্রিয়। সুস্বাদু ইয়াখনির (মশলাদার ঝোল) মধ্যে চাল ফুটিয়ে এই বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। খুব বেশি মশলাদার না হওয়ায়, সকলেরই পছন্দ হয় এখানকার বিরিয়ানির স্বাদ। জহোরি মোল্লা, রাজাবাজার থানার কাছের এই দোকানটির বিরিয়ানি বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এক জনের খাবারের খরচ পড়বে প্রায় ২০০ টাকা।
রহিম’স কুলচা নেহারি: মটন নেহারি খেতে হলে লখনউয়ের এই ঠিকানায় ঢুঁ মারতেই হবে। এখানকার নেহারির স্বাদ এক বার চেখে দেখলে বহু দিন মনে থেকে যাবে। এর সঙ্গে গরমাগরম কুলচা পেলে তো কথাই নেই। তবে নরম তুলতুলে কুলচা নয়, এখানে পাবেন কড়কড়ে খোমানি রুটির মতো কুলচা। শাহগঞ্জের আকবরি গেটের এই দোকানটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ফুল প্লেট মটন নেহারির দাম ৩০০ টাকা। এ ছাড়াও এখানকার বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট, চিকেন আফগানিও বেশ জনপ্রিয়।
রয়্যালস্ ক্যাফে: লখনউ ঘুরতে গেলে বলিউডের তারকারা পর্যন্ত এই দোকানে এক বার হলেও ঢুঁ মারেন। এখানকার চাট লখনউ জুড়ে বেশ জনপ্রিয়। রয়্যাল্স ক্যাফের বাস্কেট চাট এক বার খেলে তা ভোলার নয়। আলু টিক্কি, দই বড়া, পাপড়ি, দই, ছোলা, নানা রকম চাটনি ও মশলা আলুর তৈরি বাস্কেট বা ঝুড়ির ভিতর পরিবেশন করা হয়। এক চামচ মুখে পুরলেই টক, মিষ্টি, ঝালের বিস্ফোরণ হবে আপনার মুখে। দাম পড়বে ২৫০ টাকা। হজরতগঞ্জে মহাত্মা গান্ধী মার্গের এই দোকানটি সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা অবধি খোলা থাকে।