R G Kar Protest effect on Puja

পুজোর আগে ম্লান সালোঁর ‘ঔজ্জ্বল্য’! চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার চান রূপটানশিল্পী, কর্মীরা

গত এক মাস ধরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। সেই আঁচ এসে পড়েছে পুজোর আনন্দ এবং উদ্যোগেও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৩
Protests Over Kolkata Doctor\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s Murder Disrupt Durga Puja Festivities, Makeup Artists to Salon staff Seek Justice

পুজোর আগে চুল কাটানো কিংবা ফেসিয়াল করানোর ভিড় নেই সালোঁয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ফি বছর এই সময়ে চুলে নতুন ছাঁট পড়ে যায়। সারা বছর সাধারণ কলপ করলেও উৎসব উপলক্ষে অনেকেই সালোঁয় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রং করান চুলে। কেরাটিন, স্মুদনিং, বোটক্সের মতো ট্রিটমেন্ট করানোর ধুম লেগে যায়। কিন্তু এ বছরটা অন্য রকম। পুজো উপলক্ষে নতুন কী ফেসিয়াল এল, কোন নায়িকার মতো চুলের ছাঁট হবে কিংবা সেই ছাঁটে তাঁকে মানাবে কি না, সে সব নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না কলকাতায়। এই বছর সালোঁর প্রদীপ কি তা হলে একেবারেই নিষ্প্রভ?

Advertisement

গত এক মাস ধরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। সেই আঁচ এসে পড়েছে পুজোর আনন্দ এবং উদ্যোগেও। বিচার শেষ হলে তবেই উৎসবে যোগদান, না কি বিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেও পুজোর আনন্দে ভাসা উচিত, এই তর্কে আড়াআড়ি বিভক্ত বঙ্গ নেটাগরিকেরা। সেই ছাপ পড়ছে পুজোর বাজারে। ঠোকা লেগেছে ছোট-বড় সালোঁয়।

বস্তুত, পঞ্চমী কিংবা ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত কেনাকাটা চললেও পুজোয় চুলের নতুন ছাঁট, রঙের বাহার কিংবা রূপটান কেমন হবে, সে সব নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় মাসখানেক আগে থেকে। উৎসবের এই সময়টা ঘিরেই চলে মূল ব্যবসা-বাণিজ্য, বিকিকিনি। স্কুলপড়ুয়া থেকে সদ্য কলেজে পা দেওয়া তরুণ-তরুণী, চাকুরে থেকে ব্যবসায়ী, ছয় থেকে ষাট— সবাই মোটামুটি পুজোয় কী ‘লুক’ হবে তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। চাহিদা বুঝে শহরের বিভিন্ন সালোঁয় নানা রকম পরিষেবার উপর ছাড়ও দেওয়া হয় ঠিক এই সময়ে। কিন্তু এ বছরের প্রশ্ন হল, সেই পরিষেবা নেওয়ার খদ্দের কোথায়?

পুজোর মাসখানেক আগে থেকে সালোঁর বাইরে থিকথিক ভিড় দেখতে অভ্যস্ত শহর থেকে মফস্সল। কিন্তু এ বার সালোঁর বাইরে এবং ভিতরে খদ্দেরের সংখ্যা হাতেগোনা। হাজরা মোড়ের কাছে অনেক দিনের পুরনো সালোঁর এক কর্মী বলেই ফেললেন, “খুব অনিশ্চিত!’’ তাঁর কথায়, “অন্যান্য বছর এই সময়ে আমাদের ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে। পুজোর সময়ে নানা রকম প্যাকেজের ব্যবস্থাও করা হয়। এ বছরও প্যাকেজ রয়েছে। কিন্তু কাস্টমার কই! ফোন করে তো খোঁজখবরও নিচ্ছেন না কেউ।”

ঘরে-বাইরে নানা রকম ব্যস্ততা সামলে নিয়মিত সালোঁয় যাওয়ার সময় পান না তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সেঁজুতি। এখন তো অফিসের পর প্রায় দিনই প্রতিবাদ মিছিল, কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। সালোঁয় সেঁজুতি সাধারণত ‘থ্রেডিং’ করাতেই যান। হাত-পায়ের অবাঞ্ছিত রোম তুলতে ‘ওয়্যাক্স’-ও করান। তবে মাঝেমাঝে। সালোঁর কর্মীরা মাঝেসাঝে ফেসিয়াল, চুলে স্মুদনিং কিংবা কেরাটিন করানোর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। কিন্তু দিন কয়েক আগে সালোঁয় গিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন সেঁজুতি। তিনি বলেন, “থ্রেডিং করানোর পর একটি মেয়ে (সালোঁ-র) তো প্রায় জোর করেই ‘পেডিকিয়োর’ করিয়ে দিলেন। মিছিলে হাঁটতে হচ্ছে তো। পায়ের পাতায় মাসাজ করলে আরাম হবে তাই।”

হেয়ার কাট, স্পা, থ্রেডিং, ওয়্যাক্সিং কিংবা ফেসিয়াল, ডি-ট্যান, পেডিকিয়োর বা ম্যানিকিয়োর— পুজোর আগে এই সব সার্ভিস মিলিয়ে প্যাকেজ করে শহরের বিভিন্ন সালোঁ। আবার, অনেক জায়গায় বিভিন্ন সার্ভিসের উপর ছাড়ও দেওয়া হয়। পুজোর আগে গ্রাহকের চাহিদা বুঝে নানা রকম সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করে সালোঁগুলি। এ বছরও নিউ আলিপুরের কাছে একটি সালোঁ পুজো উপলক্ষে চুল এবং ত্বকের নানা ধরনের পরিষেবা দিয়ে তাদের প্যাকেজ সাজিয়েছে। কিন্তু যাঁদের জন্য এত কিছু, তাঁরা কই? সালোঁর এক কর্মী উদ্বেগের সঙ্গে বললেন, “জানি না কী হবে! খুব ভয়ে দিন কাটছে। যে কারণে এত কিছু হচ্ছে, সেই বিষয়টা তো এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আবার ব্যবসার কথাও তো ভুলে থাকতে পারছি না। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়। বিচার এলে কিছু আশা করা যেতে পারে।”

পুজোর সময়ে দিনরাত এক করে সালোঁয় কাজ করেন সুপর্ণা। নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। বছরের অন্যান্য সময়ে যে সময়ে সালোঁয় যেতে হয়, পুজোর সময়ে তেমন বাঁধাধরা সময়ই থাকে না। সালোঁয় যাওয়ার সময় স্থির থাকলেও ফেরার সময়ের ঠিক থাকে না। রোজগারের বাড়তি অংশ দিয়ে সুপর্ণা বছরে এক বার হলেও পরিবারের সকলের সঙ্গে ঘুরতে যান। তিনি জানালেন, “এ বছর লোকজনের আসা যাওয়া কম। তবে নিয়মিত যাঁরা সালোঁয় আসেন, তাঁরা আসছেনই। কিন্তু তাঁর এ বছর তো ঘুরতে যাওয়া হবে না। কিন্তু বিচার তো আসবে,” বলেন তিনি। সঙ্গে এ-ও জানালেন, সাঁলোর কাজ শেষ করে রাতে যাদবপুরের প্রতিবাদ মিছিলে তিনিও পা মেলাচ্ছেন।

একই সুর শোনা গেল ভবানীপুর এলাকার আরও এক সালোঁকর্মীর মুখে। তাঁর কথায়, “অন্যান্য বার পুজোর আগে অ্যাপয়েনমেন্ট চেয়ে কত জন যে সালোঁয় ফোন করেন, তার ইয়ত্তা নেই। এই বছরটাই অন্য রকম। তেমন কিছুই হচ্ছে না। পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকার সার্ভিসের উপর বিশেষ ছাড় থাকলেও সেই সুবিধা নেওয়ার লোকই নেই।”

“আরজি করের ঘটনার বিচার চাই।” প্রত্যেক রূপটানশিল্পী এবং সালোঁ কর্মীর গলাতেই একই সুর। একই সঙ্গে রয়েছে উদ্বেগ এবং রুজিরোজগার সংক্রান্ত ভয়।

আরও পড়ুন
Advertisement