সাত পুরুষকে উৎসর্গ করে, আগামী সাত পুরুষের জন্য খাওয়া হয় এই চোদ্দ শাক। ছবি : সংগৃহীত
আশ্বিন মাসের চতুর্দশী তিথিতে অর্থাৎ, দীপান্বিতা কালীপুজোর আগের দিন অনেক বাড়িতেই চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি। কথিত আছে পঞ্চভূতে বিলীন হওয়ার পর এ দিনেই নাকি পিতৃপুরুষরা মর্ত্যের কাছাকাছি আসেন। তাঁদের উদ্দেশেই বাড়িতে জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, সেই প্রথারই অংশ হিসাবে খাওয়া হয় চোদ্দ শাক। আকাশ, জল, বায়ু, অগ্নি, মাটি— প্রকৃতির এই পাঁচ উপাদানের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছেন আমাদের পিতৃপুরুষেরা। এই রীতি পালনের মধ্যে দিয়েই তাঁদের ছুঁয়ে থাকা যায়। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা চোদ্দ রকম শাক জলে ধুয়ে, সেই জল বাড়ির চারদিকে ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
আমাদের আগের সাত পুরুষকে উৎসর্গ করে, আগামী সাত পুরুষের জন্য খাওয়া হয় এই চোদ্দ শাক। জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, পলতা, শুলকা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী। মূলত এই চোদ্দ রকমের শাক রান্না করা হয়।
সব লোকাচারের পিছনেই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে। শরতের শেষ এবং হেমন্তের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। নানা রকম রোগের উপদ্রব বৃদ্ধি পেতে থাকে। জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, পলতা, শুলকা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণীর মতো শাক ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ।
আবার হেমন্তের শুরুতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়তে থাকে। পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচতেই বাজি পোড়ানো হয়। বাজির ধোঁয়ায় তারা বেশি ক্ষণ থাকতে পারে না। খাবারে বা চোখ-মুখে পোকা যাতে না হয়, তাই প্রদীপ বা আলো জ্বালানো হয়। অর্থাৎ, পোকা দূরে রাখতেই এ সময়ে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি।
কোন কোন শাকের কী কী গুণ?
জয়ন্তী— উদরাময়, জ্বর, বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণ করে।
শাঞ্চে— রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
হিংচে— পিত্তনাশক।
ওল— অর্শ, রক্ত আমাশা, বাত, চর্মরোগ কমায়।
পুঁই— হজমে সহায়ক।
বেতো— কৃমিনাশক।
সর্ষে— যকৃৎ, চোখ যত্নে রাখে।
কালকাসুন্দে— অর্শ, কাশি দূর করে।
নিম— যে কোনও চর্মরোগ নাশ করে।
পলতা— শ্বাসযন্ত্র ভাল রাখে।
শুলকা— হৃদ্যন্ত্র ভাল রাখে।
গুলঞ্চ— উচ্চ রক্তচাপ, যকৃৎ যত্নে রাখে।
ভাঁটপাতা— ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
শুষণী— স্মৃতিবর্ধক।