ছেলেমেয়েরা গরমের ছুটিতে বাইরে যাওয়ার বায়না ধরেছে, তাদের ইচ্ছেপূরণ তো করতেই হবে! শহর, অথচ নিরিবিলি, কলকাতার গরম আর কোলাহল থেকে দূরে ছুটি কাটানোর কোনও অচেনা ঠিকানার খোঁজ করছেন? কলকাতার ভ্যাপসা গরম থেকে মুক্তি পেতে রইল ৭টি পাহাড়ি ঠিকানার হদিস।
খজ্জিয়ার: হিমাচল প্রদেশের অপূর্ব সুন্দর শৈলশহর খজ্জিয়ার। শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর আদর্শ ঠিকানা এটি। এখানকার প্রকৃতির সবুজঘন রূপ, নিঃস্তব্ধতা এবং একান্ত অবকাশ আপনার মনকে শান্ত করবে। ঘুরতে যেতে পারেন খজ্জিয়ার হ্রদে। খজ্জি নাগ মন্দিরে পুজোও দিতে পারেন। পুজো দিন বা না দিন, পাহাড়িয়া এলাকার প্রায় আটশো বছরের পুরনো মন্দিরের পরিবেশটি কিন্তু ভুলেও মিস করবেন না।
খজ্জিয়ারে ইচ্ছে হলে ট্রেকিংয়ে যেতে পারেন। পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে চড়ে পাহাড়ি গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এখান থেকে কৈলাস পর্বত স্পষ্ট দেখা যায়। খজ্জিয়ারকে বলা হয়, ‘ভারতের সুইৎজ়ারল্যান্ড’। তুষারপাতের সময় খজ্জিয়ারের সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো।
দাওয়াইপানি: দাওয়াইপানির অর্থ হল 'ঔষধি জল'। দার্জিলিংয়ের ঘুম স্টেশন থেকে মিনিট কুড়ির দূরত্বের এই গ্রামের নামকরণ হয়েছে সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির থেকে। নদীটির জল নাকি নানা রকম খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। গ্রামের মানুষ ওই জল পান করেই নাকি রোগমুক্ত থাকেন। তবে রোগমুক্তি হোক না হোক, দাওয়াইপানিতে ছুটি কাটাতে গেলে চোখের আরাম হবেই হবে।
গোটা গ্রামটি থেকেই দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্পষ্ট দেখা যায় নামচির চারধাম। সূর্য ডোবার পর উল্টো দিকের পাহাড়ে দেখতে পাবেন অসংখ্য প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে কেউ। ওগুলি আসলে প্রদীপ নয়, রাতের দার্জিলিঙের মনকাড়া ছবি ভাসে চোখের সামনে। কাছেই রয়েছে গ্লেনবার্ন, লামাহাট্টা ও তাকদহ চা-বাগান। চাইলে এক দিন গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন দার্জিলিং শহরটাও।
রাবংলা: দক্ষিণ সিকিমের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হল রাবংলা। মাঝেমাঝেই জলভরা মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামে এখানে। বছরের বিভিন্ন সময়ে রোদ্দুর আর বৃষ্টির টানাপড়েন চলে । পাহাড়ের বুক জুড়ে দিগন্তবিস্তৃত চা-বাগান, মনাস্টারি, বুদ্ধমূর্তি দেখে মন হারিয়ে যেতে বাধ্য আপনার । কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, সিনিওলচু ও কাবর— রাবংলা থেকে হিমালয়ের এই চার মাথা স্পষ্ট দেখা যায়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভেসে বেড়ানো নীল আকাশ, পাকদণ্ডী পথ, ঠান্ডা বাতাস, সব মিলিয়ে সিকিমের এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরে এসে আপনার মনে ভরে যাবে।
রাবংলায় আপনার একঘেয়েমি, ক্লান্তি ধুয়েমুছে একেবারে সাফ হয়ে যাবে। এখান থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টেমি চা-বাগান। ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন যাঁরা, তাঁরা ট্রেক করেও আসতে পারেন এখানে। এ ছাড়াও রাবংলা থেকে কিছুটা দূরে রালাং মনাস্টারি রয়েছে।
পঞ্চগনি: গরমে স্বস্তির খোঁজ করতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে মহারাষ্ট্রের পঞ্চগনি। মুম্বইয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে এই শৈলশহরের অবস্থান। মহাবালেশ্বর থেকে যেতে সময় লাগবে প্রায় আধ ঘণ্টা।
দুপুরের দিকে রোদ ঝলমলে পাহাড়ের দৃশ্য আর সন্ধ্যা নামলেই হালকা হিমেল হাওয়া! ঘুরে আসতে পারেন ধোম বাঁধ, পারসি পয়েন্ট, সিডনি পয়েন্ট, টেবলল্যান্ড, লিঙ্গমালা ঝর্না। গরমের ছুটি জমবে বেশ ভালই।
কুর্গ: পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে কোদাগু জেলায় পাহাড়ঘেরা এক অনন্ত স্বপ্নের যায়গা নাম কুর্গ। তার শরীর জুড়ে সবুজের আধিক্য এবং কাবেরীর স্পন্দন। ইদানীং টুরিস্ট স্পট বাছতে গিয়ে কর্নাটকের এই মনোরম জায়গাটিতে বাঙালি একটু বেশিই ‘টিকমার্ক’ বসাচ্ছে।
উঁচুনিচু পাহাড়, আঁকাবাঁকা পথ, বিরামহীন ছোট ছোট ঝর্না, নদী, একরের পর একর জমিতে কফি চাষ— শহুরে কোলাহলের বাইরে যেন এক টুকরো স্বর্গ। মিলবে রিভার র্যাফটিং, জ়িপলিং, ট্রেকিং ও কায়াকিং-এর সুযোগ।
সান্তুক: গরম হোক কিংবা শীতকাল, পাহাড়ের এই অংশ ঘুরে আসার জন্য একদম আদর্শ। দার্জিলিং অথবা গ্যাংটক থেকে ফেরার পথে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকে। আবার দুই-তিন দিনের ছুটি থাকলে পরিবারের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন সান্তুক থেকে।
শহরের কোলাহল থেকে বহু দূরে, পাহাড়ের কোলে এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। রেয়িং এবং পায়ুং নদী ও পাহাড়ের মাঝে সুন্দর এই গ্রাম। ফার্ন, পাইনের বিশাল জঙ্গল, কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে। কালিম্পং থেকে গাড়ি ভাড়া করে এই গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
চোপতা: চোপতা উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত। কেদারনাথ থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটামিটার দূরে এই বিখ্যাত তীর্থস্থানটি রয়েছে। চোপতা কেদারনাথ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি অংশ। রাজ্য বন বিভাগের পূর্বানুমতি নিয়ে আপনি এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন। চোপতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সুন্দর বাগিয়াল বা তৃণভূমি।
চোপতা থেকে ৪০টিরও বেশি চূড়া দেখা যায়। ত্রিশূল, নন্দাদেবী, চৌখাম্বা, বন্দরপুঞ্চ, তিরসুলি, নীলকন্ঠ, মেরু, সুমেরু এবং গণেশ পর্বত এদের মধ্যে অন্যতম। এই শৈলশহর পাখিদের জন্য স্বর্গরাজ্য। ২৪০টিরও বেশি প্রজাতির পাখির আনাগোনা রয়েছে এই শৈলশহরে। এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর, চোপতা যাওয়ার সবচেয়ে ভাল সময়।
সব ছবি: সংগৃহীত।