মানুষের জিভে নতুন স্বাদ। ছবি: সংগৃহীত।
মিষ্টি, টক, নোনতা, তিতো এবং উমামি (ইংরেজিতে যাকে সেভরি বলা যেতে পারে। না নোনতা, না মিষ্টি)— এই পাঁচ স্বাদকোরক সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল ছিলেন সকলে। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা একটি গবেষণা সেই ধারণার ভিত খানিক নাড়িয়ে দিল। মানুষের জিভে এক নতুন স্বাদ আবিষ্কারের দাবি করেছেন গবেষকরা। ‘নেচার কমিউনিকেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই গবেষণা।
এত দিন জিভের ৫টি মৌলিক স্বাদের কথা জানতেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এই পাঁচটি স্বাদ ছাড়াও জিভ ‘অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড’-এর অন্য রকম স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। এর আগে বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, জিভ অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের প্রতি সংবেদনশীল। কিন্তু কী ভাবে এই সংবেদনশীলতা তৈরি হয়, তা অজানা ছিল। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রথম বার জিভের এই নতুন স্বাদ গ্রহণের বিষয়টি আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানীরা এই নতুন স্বাদকোরকের নাম দিয়েছেন ‘ওটিওপিওয়ান’। এটি জিভের সংবেদীকোষে থাকা এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন।
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের স্বাদ একেবারেই উপভোগ্য নয়। তবে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড মানবদেহের জন্য উপকারী নয় একেবারেই। এর স্বাদ অম্ল বলা চলে। গবেষণা বলছে, ‘লিকোরিশ ক্যান্ডি’ নামে একটি খাবারে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের স্বাদ পাওয়া যায়। নেদারল্যান্ড , উত্তর জার্মানিতে এই খাবার খাওয়ার চল রয়েছে। গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক এমিলি লিম্যানের কথায়, ‘স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কোনও দেশে বাস করলে হয়তো এই স্বাদটির সঙ্গে পরিচিত হওয়া সহজ ছিল। হয়তো অনেকে পছন্দও করতেন। তবে নতুন কোনও স্বাদের ক্ষেত্রে সর্বজনীর স্বীকৃতি পাওয়া সহজ নয়।’’ ১৯০৮ সালে এক জন জাপানি রসায়নবিদ ‘উমামি’ নামের স্বাদটির কথা প্রথম জানান। এই স্বাদ পাওয়া যায় সয়া সস্, সামুদ্রিক শৈবাল, ফিশ সস্, অ্যাকোভিস মাছের মতো কিছু সামুদ্রিক খাবারের। উমামি স্বাদ আবিষ্কারের কয়েক দশক পরে তা মৌলিক স্বাদের স্বীকৃতি পায়। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, দেরিতে হলেও অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের স্বাদও সর্বজনস্বীকৃত হবে।