মোবাইলের প্রতি খুদের আসক্তি কী ভাবে দূর করবেন? ছবি: শাটারস্টক
মোবাইলের প্রতি শিশুদের আসক্তি বরাবরই ছিল। তা বাড়ছিলও। কিন্তু কোভিডের পরবর্তী সময় পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ হয়েছে। বাড়িতে থাকলেই কখনও পড়াশোনা করার জন্য কিংবা কখনও গেম খেলার জন্য কখনও আবার ইউটিউব দেখার জন্য তাঁরা ফোনে মুখ গুঁজে বসে থাকছে।
এ সময়ের শিশুরা কেন স্মার্টফোন বা ট্যাবে এত বেশি আকৃষ্ট- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মা-বাবা দু’জনই চাকরিজীবী। কর্মব্যস্ততার কারণে তাঁরা সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মা-বাবার আদর-যত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হন। আর সে জন্যই বাচ্চাদের অবসর সময় কাটানোর জন্য অভিভাবকরাই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিচ্ছেন। এই অবস্থাতেই তারা মোবাইলের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যে তার কুপ্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর।
অভিভাবকদের এমন সামান্য ভুলে শিশুর বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুদের মানসিক বিকাশ। মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে চোখের নানা রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। মনোবিদদের মতে, এই আসক্তির কারণে একটু বড় হলে এই শিশুরা বেশির ভাগই মানুষের সঙ্গে মিশতে চাইবে না। বাইরে খেলাধুলোর বদলে ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করবে। আস্তে আস্তে একাকিত্ব পেয়ে বসবে তাদের। পরিবার থেকে একটু সচেতন থাকলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। এর জন্য অভিভাবকদের শিশুদের উপর খানিকটা বাড়তি নজর দিতে হবে।
১) দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশুকে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিন। এ ছাড়া শিশু স্মার্টফোনে কী করছে বা কী দেখছে— তার প্রতিও নজর রাখতে হবে। তাদের অবসর সময়টা অন্য কাজে ব্যবহার করুন। খেলাধুলো, নাচ, গান যে বিষয় শিশুর আগ্রহ আছে সে সব বিষয় মন দিতে উৎসাহী করে তুলুন খুদেকে।
২) শিশু যদি অনলাইনে ক্লাস করে, তাহলে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সে কী করছে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া স্মার্টফোন থেকে আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারনেট প্রোভাইডারদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
৩) শিশুর স্মার্টফোনের আসক্তি কাটাতে আপনাকে ওর জন্য সময় বার করে নিতে হবে। সন্তানের হাতে স্মার্ট ডিভাইস তুলে দিয়ে আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে যাবেন না। ওর জন্য দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন। ওই সময় শিশুর মনের কথা শুনুন, শিশুর সঙ্গে খেলুন, ওর সঙ্গে গর্প করুন।
৪) আপনি যদি খুব বেশি প্রযুক্তিতে আসক্ত হন, তা হলে স্বাভাবিক ভাবে আপনার সন্তানও সেটিই করবে। তাই আগে আপনার নিজের আসক্তি দূর করুন। শিশুর সামনে কাজের প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।
৫) প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধা দুটোই সন্তানকে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন। প্রযুক্তি নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক আলোচনায় সঙ্গী হোন নিজ সন্তানের। অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কী বিপদ হতে পারে, সে সব নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন। ওর মন অন্য দিকে ঘোরাতে আপনাকেই উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। মাঝে মাঝে ওকে বেড়াতে নিয়ে যান, ওর সঙ্গে সময় কাটান। ওকে বই কিনে দিতে পারেন। বই পড়া শুরু করলে মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমবে।