ছোট থেকেই জিনিসের মূল্য বোঝাতে হবে খুদেকে।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঋষা। পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে ক'দিন আগেই, ভাল ফল হওয়ায় মা-বাবার কাছে বায়না, ফোন কিনে দিতে হবে। বাবা-মা ফোন কিনে না দেওয়ায় রাগারাগি, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর, এ সব চলল কয়েকটা দিন। শেষমেশ মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে মেয়ের হাতে নতুন ফোন তুলে দিলেন বাবা। সন্তানকে স্নেহ, সময় না দিতে পারার ‘অপরাধবোধ’ থেকে অথবা স্রেফ আবদার মিটিয়ে ছেলেমেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে অভিভাবকেরা দামি জিনিসপত্র তুলে দিচ্ছেন তাদের হাতে। পছন্দের খাবার বাড়িতে ঘন ঘন অর্ডার করা, ব্যয়বহুল জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, এ সবও একই রকম ভাবে চলতে থাকে। বায়না পূরণ না হলে বাড়ির খুদে সদস্যটি অস্থির হয়ে যায়। কখনও-কখনও আবার অভিভাবকদের অপদস্থও করে ফেলে সে। খুদের জেদকে প্রশ্রয় দিতে শুরু করলে কিন্তু পরবর্তী সময় ওর পক্ষে খারাপই হবে।
পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, সব কিছুরই প্রভাব পড়ে শিশুমনে। বাড়ির বড়রা যদি নিজেদের ভাল থাকা নির্ধারণ করেন কতটা দামি জিনিস তাঁর কাছে আছে, তা দিয়ে, তা হলে শিশুমনও সে শিক্ষাই পাবে।
কী ভাবে শিশুর মনোভাবে বদল আনবেন?
১) শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। ওর কাউন্সেলিং জরুরি। ওকে বোঝাতে হবে, সকলের পক্ষে সব ধরনের খরচ করা সম্ভব নয়। কোনও এক বার দামি রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া বা ব্যয়বহুল কোনও জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার অর্থ যে ঘন ঘন সেটাই হবে, এই ধারণাটা ভুল।
২) ছোট থেকেই জিনিসের মূল্য বোঝাতে হবে খুদেকে। সেই মূল্যবোধ তৈরি হলে তবেই সে ভবিষ্যতে সব রকমের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখবে। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও নিজেদের সংযত রাখা জরুরি। কারণ, অভিভাবককে দেখেই কিন্তু ছোটরা শেখে।
৩) কোনও কিছু না পাওয়া বা তা কষ্ট করে অর্জন করার মূল্য খুদেকে বোঝাতে হবে। শিশু কোনও সাফল্য পেলেই তার হাতে উপহার তুলে দেওয়া কিংবা ব্যর্থতায় শাসন, কোনওটাই মাত্রাছাড়া হলে চলবে না।
৪) শিশু কোনও আবদার করলে সঙ্গে সঙ্গেই তা পূ্রণ করার প্রয়োজন নেই। শিশু অতিরিক্ত বায়না করলে তাকে ধৈর্য ধরতে শেখান। যখন যা চাইছে, সঙ্গে সঙ্গে হাতে তুলে দেবেন না।
৫) দামি উপহারের চেয়েও সন্তানকে অভিভাবকদের সময় দেওয়াটা অনেক জরুরি। দিনভর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে অপরাধবোধ থেকে দামি উপহার দেওয়ার চেষ্টা না করাই ভাল। বরং, খুদেটিকে সময়, জিনিস ও স্নেহের মূল্য বোঝানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন।