KP Singh

৯১ বছরে প্রেমে পড়লেন ডিএলএফের প্রধান! বৃদ্ধ বয়সে কেন নতুন করে সঙ্গীর খোঁজ করেন অনেকে?

সম্প্রতি ডিএলএফ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান কেপি সিংহ জানিয়েছেন যে, তিনি ৯১ বছর বয়সে নতুন করে প্রেম খুঁজে পেয়েছেন। এত বয়সেও কেন প্রেমের দিকে ঝোঁকেন মানুষ?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ১১:২১

কথায় বলে, প্রেমে পড়ার কোনও বয়স হয় না। যে কোনও বয়সে নতুন করে জীবন শুরু করাই যায়। তবে প্রচলিত একটি ধারণা, বেশি বয়সের পুরুষরা কমবয়সি প্রেমিকাই বেশি পছন্দ করেন। শুধু ধারণা নয়। বাস্তবেও এর ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। বলিউডে শ্রীদেবী-বনি কপূর, করিনা কপূর-সইফ আলি খান, মিলিন্দ সোমন-অঙ্কিতা কোনওয়ার। টলিউডে দীপঙ্কর দে-দোলন রায়। সম্প্রতি বাংলার ক্রিকেট দলের প্রাক্তন কোচ অরুণলাল-বুলবুলও কিন্তু এই তালিকায় নিজেদের নাম যুক্ত করেছেন। চোখের সামনে অজস্র উদাহরণ, তবুও আমাদের চারপাশে কোনও বেশি বয়সি ব্যক্তি অল্পবয়সি কারও প্রেমে পড়লেই সবার যেন বড্ড সমস্যা!

সম্প্রতি ডিএলএফ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান কেপি সিংহও জানিয়েছেন যে, তিনি ৯১ বছর বয়সে আবার জীবনে নতুন করে প্রেম খুঁজে পেয়েছেন। দীর্ঘ ৬৫ বছর বিবাহিত থাকার পর গত ২০১৮ সালে ক্যানসারে স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর নতুন করে তিনি প্রেমে পড়ার খবর ঘোষণা করেছেন। কেপির প্রেমিকার নাম শীনা। যদিও তাঁর বয়স সম্পর্কে কিছু জানাননি শিল্পপতি। ‘‘আমি খুবই ভাগ্যবান। এক জন হাসিখুশি মহিলা এখন আমার সঙ্গী। তাঁর নাম শিনা। তিনি আমার জীবনের সেরা মানুষের মধ্যে এক জন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার ছ'মাস আগে আমাকে বলেছিলেন যাতে আমি জীবনে হাল না ছেড়ে দিই। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, আমার সামনে আরও অনেকটা জীবন পড়ে আছে। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিতে বলেছিলেন যে আমি জীবনে হাল ছাড়ব না। আমার বৌ বলেছিলেন, এই জীবন আর ফিরে আসবে না। এই কথাগুলি আমার সঙ্গে থেকে গিয়েছে। আমাকে সংস্থার হাল টিকিয়ে রাখতে হবে, তাই স্ত্রীর মৃত্যুতে বিষণ্ণ হয়ে পড়লে চলবে না।’’

Advertisement
Love

বৃদ্ধ বয়সে সঙ্গীহারা হওয়ার পর বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে প্রেম অনেকটাই সাহায্য করে। ছবি: শাটারস্টক।

কেপি সিংহকে টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ দিগ্বিজয় সিংহ। তিনি লিখছেন, ‘‘অনেক শুভেচ্ছা কে পি ভাই। বয়স কোনও ব্যাপার নয়।’’

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং অনুসারে, বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য একাকিত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিষয় দু'টি তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসের মত অনুযায়ী, বেশি বয়সে, পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই বিভিন্ন কারণে সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই কারণগুলি মধ্যে রয়েছে:

১) বয়স্ক বা দুর্বল হয়ে যাওয়া

২) পরিবারের সদস্য হিসাবে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলা

৩) অবসরপ্রাপ্তির পর কর্মজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া

৪) সঙ্গী কিংবা সমবয়সিদের মৃত্যু

৫) অসুস্থতার কারণে শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়া

বিশেষজ্ঞদের মতে, উপরের কারণগুলির জন্য বৃদ্ধ বয়সে মানুষ বিষণ্ণতা, একাকিত্ব, উদ্বেগে ভুগতে শুরু করেন। সঙ্গীর অভাবে নিজের মনের মধ্যে চলা উথালপাথাল আর কারও সঙ্গে ভাগ করতে না পেরে শারীরিক ও মানসিক, দু’দিক থেকেই আরও দুর্বল হয়ে পড়েন তাঁরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাকিত্ব যে কোনও বয়সে যে কাউকে গ্রাস করতে পারে, তাই বৃদ্ধ বয়সে কাউকে পাশে পাওয়া ভীষণ প্রয়োজন।

বৃদ্ধ বয়সে প্রেমে পড়ার ভাল দিক

বৃদ্ধ বয়সে সঙ্গীহারা হওয়ার পর বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে প্রেম অনেকটাই সাহায্য করে। কেবল কারও উপর নির্ভর করার জন্যই নয়, মন-মেজাজ ভাল রাখতেও এর জুড়ি নেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশি বয়সে প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার পর মানুষ দীর্ঘজীবী হয়েছে। বয়স বাড়লে অনেকের ক্ষেত্রে সন্তারাও মুখ ফিরিয়ে নেন তাঁদের থেকে। তাঁরাও নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর অবসর পান না তাঁরা। তাই সেই সময়ে এক জন সঙ্গীর খোঁজ করলে মন্দ কী? ৯১ বয়সে কেপি সিংহের প্রেমে পড়ার স্বীকারোক্তি আবার উস্কে দিয়েছে সেই প্রশ্ন।

আরও পড়ুন
Advertisement