Anuttama Banerjee

‘ভাল না লাগলেও না বলতে পারি না, ভয় পাই’, সঙ্কট কাটবে কী করে? কী বললেন মনোবিদ?

‘কী করে বলব! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই পর্বের বিষয় ‘না বলতে পারি না!’

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:০২
মনের গহীনে কোনও দ্বিধা থেকে ‘না’ বলতে পারছেন না, সেই অন্ধকারেই আলোর পথ দেখালেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মনের গহীনে কোনও দ্বিধা থেকে ‘না’ বলতে পারছেন না, সেই অন্ধকারেই আলোর পথ দেখালেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

জীবনে নানা ক্ষেত্রেই তো নানা রকমের প্রস্তাব আসে। বয়স অনুযায়ী তার ধরন পাল্টে যায়। কখনও বন্ধুদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে রাত্রিবাস, জীবনে প্রথম বার কোনও কিছুর স্বাদ গ্রহণ করার প্রস্তাব। আবার কখনও কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর দেওয়া ভালবাসার প্রস্তাব। ছোট থেকেই এক ধারার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠা অনেকেরই ‘না’ বলতে সঙ্কোচ হয়। ভাবেন ‘না’ বলার পরের সঙ্কটের কথা। সমাজ, সামাজিকতা এবং সমাজমাধ্যম এই চেনা পরিসরের বাইরেও নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার ভয় কাজ করে কারও কারও মধ্যে। সময় নষ্ট হচ্ছে জেনেও পড়াশোনার সময়ে বন্ধুর ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেতে হচ্ছে। কারও কাছে অপ্রিয় হওয়ার ভয়ে, না কি গুছিয়ে কথা বলতে না পারা, মনের গহীনে কোনও দ্বিধা থেকে ‘না’ বলতে পারছেন না, সেই অন্ধকারেই আলোর পথ দেখালেন মনোবিদ। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘না বলতে পারি না!’

যেমন প্রথম বর্ষের ছাত্র অরিজিৎ লিখেছেন, “নিজের পড়ার চাপ সামলে বন্ধুদের সাহায্য করি। তা-ও পরীক্ষার সময়ে বন্ধুরা আমার দেখেই লেখে। ওদের শিক্ষায় ঘাটতি তো থাকছেই। সঙ্গে আমারও তো ক্ষতি হচ্ছে।” এমনই আর একটি চিঠি এসেছে, যেখানে লেখা রয়েছে, “কলেজের বড় দিদিরা আমাকে দিয়ে তাদের প্রজেক্টের কাজ করিয়ে নিচ্ছে। প্রথমে খারাপ না লাগলেও পরে বুঝতে পারি ওরা আমার উপর জোর খাটাচ্ছে। সব বুঝতে পারছি, কিন্তু না বলতে পারছি না।”

Advertisement

এমন সমস্যায় পড়েছেন চাকুরিরত এক ব্যক্তিও। তাঁর বক্তব্য, “অনেকে খুব গুছিয়ে না বলতে পারেন। আমি এমনিতেই অন্তর্মুখী। না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।”

জীবনে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে, বিভিন্ন ঘটনায় ‘না’ বলতে পারা জরুরি জেনেও বলতে না পারার ভয় কাটিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিলেন মনোবিদ।

কোথায় গিয়ে আটকায় আমাদের?

অনুত্তমার মতে, “একটু থেমে নিজেকে জিজ্ঞাসা করেই দেখা যেতে পারে, এই না বলতে পারা নিয়ে যে দ্বিধা, তার উৎস কোথায়। যদি উল্টো দিকের মানুষটিকে রূঢ় না হয়ে, দৃঢ়তার সঙ্গে না বলা যায়। সেই চেষ্টা করে দেখা যাক না।”

নিজের কাছে পরিষ্কার থাকা

মনোবিদের মতে, “উল্টো দিকের মানুষটিকে খারাপ বোধ করানোর জন্য ‘না’ বলছেন, না কি আপনার পক্ষে তাঁর প্রস্তাব রাখা অসম্ভব হচ্ছে বলে ‘না’ বলছেন, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন। অন্যের কাছে প্রিয় হতে গিয়ে নিজের মনের উপর যে পরিমাণ চাপ তৈরি হয়, তাতে নিজের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠা হয় কি? ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।”

না বলার মানে কি বন্ধুত্বে ছেদ পড়া?

অনুত্তমার উত্তর, “জীবন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন কিছু পরিস্থিতির মুখে এনে দাঁড় করায়, যেখানে একসঙ্গে সকলকে সমান গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কখনও না কখনও কাউকে ‘না’ বলতে হয়, ফেরাতে হয়। ‘না’ বলতে পারলাম না, তার মানেই কিন্তু তার প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই, এমনটাও নয়। আবার ‘না’ বলতেও পারলাম না, পাশাপাশি তাদের দেওয়া কথাও রাখতে পারলাম না। তাতেও কিন্তু উল্টো দিকের মানুষের কাছে অপ্রিয় হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তার আগেই সজাগ হওয়ার প্রয়োজন আছে। কোনও কিছু না ভেবে, আগে ‘না’ বলতে হবে। তার পর গুছিয়ে নিন। নিজেকেও যে সময় দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, উল্টো দিকের মানুষটিকে নির্দ্বিধায় জানাতে হবে সে কথা।”

Advertisement
আরও পড়ুন