রাতে ঘুম আসে না কেন? আলোচনায় মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- সংগৃহীত
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সময় থেকেই রাত জেগে পড়াশোনা করার অভ্যাস। স্কুল পেরিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে রাতে না ঘুমোনো একেবারে নিয়মে পরিণত হয়েছে। সারা দিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম, খাওয়াদাওয়া— সব মিটিয়ে ফোন স্ক্রল করতে বসলে কখন যে রাত ভোর হয়ে যায়, হুঁশ থাকে না। আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ঘুম না আসার যে নির্দিষ্ট কোনও কারণ রয়েছে তা-ও নয়। তবু রাতের পর রাত, দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না। এর ফলে যে কাজের ক্ষতি হচ্ছে বুঝতে পারেছেন। কিন্তু কাউকে নিজের সমস্যার কথা বলে উঠতে পারছেন না। এই বিষয় নিয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘ঘুম আসে না’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর প্রশ্ন পাঠানো যায়। বহু চিঠি এসে জমাও হয় তাঁর কাছে। সময় সীমিত তাই সেখান থেকে বেছে নিতে হয় বেশ কিছু চিঠি। ২২ বছরের নিকিতা যেমন লিখেছে, “রাতে ঘুমোনোর ইচ্ছেটাই করে না। ফোন ঘাঁটতে থাকি। ভোর চারটে নাগাদ ঘুমোতে যাই। পরের দিন শরীর খারাপ লাগে। ফোন রেখে দিলেও প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় নানা কথা মাথায় ঘুরতে থাকে। মায়ের বকুনি খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেও ঘুম আসতে চায় না। দীর্ঘ দিন ধরে রাতে ঘুম না হওয়ায় শরীরে প্রভাব পড়ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু কাউকে বলতে পারছি না।” একই রকম সমস্যার কথা লিখেছে মধুরাও। তাঁর বক্তব্য “রাত জেগে ফোনে নানা বিষয় ঘাঁটতে গিয়ে সকালে উঠতে দেরি হয়। সকালে জলখাবার না খেয়েই কাজে দৌড়তে হয়। শরীর খারাপ হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু নিজের জন্য সময় বলতে তো ওই রাতটুকুই। ঘুম না এলে কী করব?”
এই সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন অনুত্তমা। বললেন, “সবার আগে উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে শিখতে হবে। নিজের মনকে শান্ত করতে হবে। স্মার্টফোন বা বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহারে উপকার হয়তো হয়েছে। কিন্তু এ কথাও সত্যি যে তা আমাদের একাগ্র হতে ভুলিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও ওই একঘেঁয়ে কাজে নিয়োজিত হতে মন চায় না। ঘুম কিন্তু এক অর্থে একঘেঁয়েমি। যেমন ধরা যাক পিঠ চাপড়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময়ে যে ছন্দ, তা-ও কিন্তু খুব একঘেঁয়ে। তার মধ্যে বিভিন্ন রকম ছন্দ নেই। চলন নেই। অর্থাৎ উত্তেজনাহীনতা। দু’চোখে ঘুম আনতে গেলে যা অত্যন্ত প্রয়োজন। সারা ক্ষণ কোনও না কোনও কাজে নিযুক্ত থেকে মাথাকে সক্রিয় করে রাখলে ঘুম আনার চেষ্টা ব্যর্থ হবেই। বরং নির্দিষ্ট একটা সময় পর মস্তিষ্ককে নিস্তেজ করে ফেলতে চেষ্টা করুন। গান নয়, এমন কোনও মিউজ়িক শুনুন যার মধ্যে একঘেঁয়েমি রয়েছে। দেখুন না ঘুম আসে কিনা।”