Anuttama Banerjee

ব্যবসায়ী হতে গেলে কতটা লড়াই করতে হয় মেয়েদের? মনোবিদের কাছে অকপট রুমি এবং মোনালিসা

লক্ষ্মীপুজোর রেশ ধরে রাখতে ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ নামক পর্বে অনুত্তমার সঙ্গী হয়েছেন রুমি বিশ্বাস এবং মোনালিসা মান্না। তাঁরা দু’জনেই উদ্যোগপতি। রুমি এবং মোনালিসার গল্পের হাত ধরেই এগিয়েছে পর্ব।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৫২
symbolic image.

মনোবিদ অনুত্তমার সঙ্গে (বাঁ দিকে থেকে) উদ্যোগপতি মোনালিসা মান্না এবং রুমি বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত।

সদ্য পেরিয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। কিছু দিন আগেই গেল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। সামনেই দীপাবলি। চলছে উৎসবের মরসুম। এই উদ্‌যাপনের আবহে ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রতি সোমবারের মতো এ দিনও উপস্থিত ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জীবনের জটিল কোনও সমস্যার সমাধান করতে নয়, বরং আড্ডা দিতে। সব উৎসবেরই ভরকেন্দ্রে থাকে আড্ডা। তবে আড্ডা তো আর একা হয় না। সম্ভবও নয়। তাই লক্ষ্মীপুজোর রেশ ধরে রাখতে ‘বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী’ নামক পর্বে অনুত্তমার সঙ্গী হয়েছেন রুমি বিশ্বাস এবং মোনালিসা মান্না। তাঁরা দু’জনেই উদ্যোগপতি। নিজেদের উদ্যোগে দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসা। সফলও হয়েছেন। রুমি এবং মোনালিসার গল্পের হাত ধরেই এগিয়েছে এ বারের পর্ব।

Advertisement

পড়াশোনা করে চাকরি করবে মেয়ে। বাবা-মায়েদের চোখ জুড়ে থাকে এমনই কিছু স্বপ্ন। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত মেয়ে যদি জোর গলায় বলে, "চাকরি নয়, ব্যবসা করতে চাই"? মেয়ের মুখে ব্যবসা করার ইচ্ছা প্রকাশ পাওয়ার পর কি বাবা-মায়েরা সমর্থন করেন? লোকেরাই বা কী বলে? রুমির অভিজ্ঞতা জানতে তাই শুরুতেই মনোবিদ এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তাঁর দিকে। রুমি বলেন, ‘‘বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনে কী করতে চাই, সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তাই যখন বুঝলাম, চাকরি নয়, ব্যবসা করতে চাই, বাবা প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ফলে ছেলে-মেয়ের পার্থক্যটা প্রথমেই ভেঙে গিয়েছিল। আমি জানতাম, যা করতে হবে, আমাকে একাই করতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনায় ভাল ছিলাম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা বাড়তি চাপ পরোক্ষ ভাবে ছিল। সকলের আশা ছিল, আমি তেমন কিছু একটা হব। কিন্তু বাবা সব সময় আমাকে সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। আমি যাতে আমার পছন্দের কাজটা করতে পারি, সে বিষয়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আর তাই বোধ হয় আজ আমি এখানে।’’

রুমির কথা শেষ হলে মনোবিদ একই প্রশ্ন রাখলেন মোনালিসার কাছেও। মোনালিসার কথায়, ‘‘ব্যবসা করব, সেটা কখনওই ভাবতাম না। আমি ছোট থেকে কখনও এটা শুনিনি যে, ব্যবসাও জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। গতানুগতিক ভাবেই আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। পড়াশোনা শেষ করার পর আমি বুঝতে পারি, কোথাও গিয়ে আমার মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। চাকরি করলে হয়তো মোটা অঙ্কের টাকা জমত। কিন্তু তাতে হয়তো আমি ভাল থাকতাম না। তবে গয়না বানাব, এটা কখনও ভাবিনি। নিজে পরব বলে টুকটাক গয়না বানাতাম। সেখান থেকেই ব্যাপারটা শুরু হয়।’’

চাকরি নয়, ব্যবসা করতে চাই, এই ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করলেও তা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না অনেকেই। পরিবার আদৌ মানবে তো! সেই সংশয় যেন মনের মধ্যে উথালপাথাল করে। রুমির মতো বাবার সমর্থন সকলের সঙ্গে থাকে না। আবার মোনালিসার মতো মনের জোরও সব সময় সকলের হয় না। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ব্যবসা করতে চান। তাঁদের জন্য মোনালিসা এবং রুমির কোনও বিশেষ পরামর্শ আছে কি না, তা জানতে চাইলেন মনোবিদ। রুমি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, কেউ যদি সত্যিই ব্যবসা করতে চান, তা হলে তাঁর এগিয়ে যাওয়া উচিত। তবে ব্যবসার সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দায়িত্বশীলতা। যেটাই করা হোক, তাতে পৃথিবীকে যেন এগিয়ে নিয়ে যায়। পৃথিবী যেন পিছিয়ে না পড়ে।’’ মোনালিসারও একই মত। তবে তাঁর বাড়তি সংযোজন, ‘‘আমার মনে হয়, ব্যবসা শুরু করার আগে কাজটা শেখা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে কাজ রপ্ত করতে পারলে ভাল। সেই সঙ্গে পেশাদার হয়ে ওঠাও জরুরি। নিয়ম এবং শৃঙ্খলা মেনে কাজ করতে পারলে সাফল্য ধরা দেবেই।’’

আরও পড়ুন
Advertisement