এই ধরনের কাফে দেশে এই প্রথম। ছবি: আকাশ দেবনাথ
ডাকঘর বা পোস্ট অফিস শুনলে অনেকেরই প্রথমে মাথায় আসে, প্রাচীন অফিসঘর, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা, ধীরগতির ব্যবস্থাপনা কিংবা গুরুগম্ভীর পরিবেশের মতো বিষয়। কিন্তু কলকাতা জেনারেল পোস্ট অফিসে এ যেন কার্যত উলটপুরাণ। পোস্ট অফিস সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ভেঙে ফেলতে কলকাতার জেনারেল পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ নিলেন এক অভিনব উদ্যোগ। ডাকঘরের অভিজ্ঞতাকে গ্রাহকের মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য সম্প্রতি পোস্ট অফিসের প্রাচীন অট্টালিকার ভিতরেই চালু করা হয়েছে একটি ‘থিম কাফে’!
ডাকঘর সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে ‘শিউলি’ নামে একটি বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে মূলত ডাকঘর সম্পর্কিত হরেক রকমের সামগ্রী বিপণনের বন্দোবস্ত করা হয়। এ বার সেই বিভাগের অধীনেই আট জন কর্মচারী নিয়ে শুরু হল 'শিউলি পোস্টাল কাফে'। পার্সেল পাঠানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি সুসজ্জিত এই কাফের ভিতরে রয়েছে চা-জলখাবারের ব্যবস্থা। মিলবে হরেক রকমের মুখরোচক খাবার ও নির্দিষ্ট কিছু পানীয়। যাবতীয় খাবার তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের তরফেই। পাশাপাশি রয়েছে ডাক বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একাধিক উপহার সামগ্রী কেনাকাটার ব্যবস্থা। মিলবে রকমারি ডাকটিকিট, টি-শার্ট, কফি মগ, কিংবা বাহারি ফোটো ফ্রেমও। পার্সেল পাঠাতে এসে যদি বাহারি কাগজে মুড়ে দিতে চান কেউ, সামান্য টাকার বিনিময়ে ডাকঘরের তরফ থেকেই তা করে দেওয়া হবে। বাকি সব সামগ্রীর সঙ্গে এখানে মিলবে গঙ্গোত্রী থেকে সংগৃহীত বোতলবন্দি গঙ্গার জলও।
এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “প্রাথমিক ভাবে এটি কোনও ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়। আমরা আসলে ডাকঘরের গোটা অভিজ্ঞতাটিকেই বদলে দিতে চাইছি। আমরা চাই, আরও বেশি মানুষ এখানে আসুন। শুধু ডাকঘরের কাজের জন্যই নয়, নিছক আড্ডা দিতেও যে কেউ চলে আসতে পারেন এখানে। আপাতত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকছে কাফে।” দেশের মধ্যে এই ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম বলেও জানান তিনি।
ডাকঘর সূত্রে খবর, উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই লোকমুখে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কাফেটি। ডাক বিভাগের এক কর্তা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব খুবই বেশি। এই উদ্যোগ সেই ঐতিহ্যকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। এমনকি এখানে যে সব আসবাব ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলিও ডাক বিভাগের পুরানো আসবাব পুনর্ব্যবহারযোগ্য করেই বানানো। আমাদের আশা, কলকাতা বলতে মানুষ যেমন ভিক্টোরিয়া কিংবা জাদুঘর বোঝেন, আমাদের কাফেটিও সেই রকমই একটি সর্বজনবিদিত স্থান হয়ে উঠবে।” গোটা কাফেটিকেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে ডাক বিভাগের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একাধিক সামগ্রী ও তৈলচিত্র দিয়ে। মাথার উপরে রয়েছে ঝাড়লণ্ঠন, দেওয়ালে সাজানো রয়েছে ঝুমঝুমি লাগানো বর্শা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ডাক হরকরা' গল্প অথবা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতাটির কথা মনে পড়তেই পারে এই বর্শাটিকে দেখে। কাফে হিসেবে কতটা সফল হবে এই উদ্যোগ তা ভবিষ্যৎ বলবে, কিন্তু সুউচ্চ খিলান, গম্বুজে তৈরি এমন রেস্তরাঁ যে কলকাতার বুকে বিরল, তা অনস্বীকার্য।