মনের চাপ প্রভাব ফেলছে যৌন জীবনে
গত বছর গুজরাত আত্মঘাতী হন বছর ৪২ বছরের এক ব্যক্তি। হালে ছেলের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি চিঠি খুঁজে পান তাঁর মা। চিঠি থেকে স্পষ্ট, নিহত ব্যক্তির আত্মঘাতী হওয়ার পিছনে কাজ করেছিল তাঁর যৌন অক্ষমতা। তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভারতীয় পুরুষরদের ক্ষেত্রে যৌন অক্ষমতা বা ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ হালে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী বলছেন চিকিৎসক এবং মনোবিদরা?
১৩-১৪ বছর বয়স থেকে যে কোনও বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনটাই বলছেন চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এর পিছনে দু’ধরনের কারণ আমরা দেখতে পাই। প্রথমটা মানসিক। দ্বিতীয়টা একেবারেই শারীরিক। তবে দুটোরই ভাল চিকিৎসা আছে। ফলে কেউ যদি বিষয়টা গোপন না করে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন, তা হলে বহু ক্ষেত্রেই সহজে সারিয়ে ফেলা যায় এই সমস্যা।’’
কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে আদৌ সচেতনতা আছে কি? মনোবিদ জয়িতা সাহা বলছেন, ‘‘রক্ষণশীল মানসিকতার কারণে এখনও এই সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলতে চান না। চিকিৎসক বা মনোবিদের কাছে না গিয়ে অনেকেই আবার হাতুড়েদের কাছে হাজির হন। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়।’’ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে সারা দেশে ৪৪৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন যৌন অক্ষমতা এবং সন্তান উৎপাদনে অক্ষম বলে। তাঁদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ছিলেন ৭২ জন পুরুষ। ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১০২ জন পুরুষ। এই তালিকার মধ্যে থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার বড় কারণ সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতা। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’।
কেন এই সমস্যায় ভোগেন পুরুষরা? কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘থাইরয়েড, ডায়াবিটিসের মতো অসুখ থাকলে এই সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই বিষয়টা মানসিক। তার পিছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করে। উদ্বেগ বা অবসাদ তো আছেই, তা ছাড়া হঠাৎ কোনও মানসিক আঘাত পেলে বা পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতেই পারে।’’ আমফানের মতো ঘটনা যখন ঘটল, তখন বহু পুরুষের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তিনি। এমনকি লকডাউন এবং করোনা সংক্রমণের দিনগুলোর প্রথম দিকে বহু পুরুষই পারিপার্শ্বিক চাপের কারণে যৌন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন বলেও তাঁর মত।
সমস্যা যখন মনে, তখন তা সারিয়ে ফেলা তুলনায় সহজ। সমস্যা শুধুমাত্র শারীরিক কারণে হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় বলে জানাচ্ছেন জয়িতা। ‘‘২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যাটা মানসিক। মনোবিদের সঙ্গে কথা বললেই, তার অনেকটা সারিয়ে ফেলা সম্ভব।’’ বলছেন জয়িতা। তবে তিনি এর পাশাপাশি একটা বড় সামাজিক সমস্যাও তুলে ধরেছেন। ‘‘বহু পুরুষের এই সমস্যার পিছনে পর্নোগ্রাফির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই ধরনের ভিডিয়ো আসক্তি তৈরি করে দেয়। শুধু তাই নয়, একটা ‘পারফরম্যান্স প্রেশার’ও তৈরি হয়। নিজের থেকে এবং সঙ্গের মানুষটার থেকে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সেই চাহিদা ছুঁতে না পারলেই, মন ক্রমশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়,’’ বলছেন জয়িতা।
চিকিৎসায় এই সমস্যা কতটা সারিয়ে ফেলা সম্ভব? কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এখন চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। খুব সহজেই এর সমাধান সম্ভব। ‘‘সমস্যা হয় একটু বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে। তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই মনের যৌন চাহিদার সঙ্গে শরীর তাল মেলাতে পারে না। তাঁদের সমস্যা বাদ দিলে, বাকিদের ক্ষেত্রে ততটাও কঠিন নয়, এই সমস্যা সারিয়ে তোলা।’’ বলছেন তিনি। ‘‘বদলাতে হবে নিজেদের মন। অনেককেই বলতে শুনেছি, ‘বিয়ে দিয়ে দাও, সব ঠিক হয়ে যাবে’। এমন হয় না। বরং তাতে সমস্যা বাড়ে।’’ বলছেন জয়িতা সাহা।
আর মনকে প্রস্তুত রাখবেন কী ভাবে? জয়িতার কথায়, ‘‘অ্যালকোহল, ধূমপান— এগুলো থেকে দূরে থাকুন। কাজের চাপ বাড়িতে নিয়ে আসবেন না। তা হলেই মন ভালো থাকবে।’’ এই সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠিটা শুধু শরীরে নয়, লুকিয়ে আছে মনেও। আর সেটা শুধু সমস্যায় ভোগা মানুষটার মন না, সামগ্রিক ভাবে তাঁর চারপাশের মানুষের মনেও। ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ নিয়ে সকলের কিছু বদ্ধমূল প্রাচীনপন্থী ধারণার বদল করে ফেলতেই পারলেই, সমস্যার অনেকটাই সেরে যাবে বলে বিশ্বাস করেন মনোবিদ সহ চিকিৎসক।
আরও পড়ুন: ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারেন খুব সহজেই
আরও পড়ুন: কখন ব্যায়াম করলে ওজন কমবে সবচেয়ে বেশি