গান শুনতে শুনতে পড়াশোনা করা খারাপ? ছবি: সংগৃহীত।
কানে ইয়ারফোন গুঁজে পছন্দের গান শুনতে শুনতে অঙ্ক কষার অভ্যাস ছিল। তা নিয়ে মা-বাবার কাছে প্রবল বকাও খেতেন। মাধ্যমিকে অঙ্কের ফল খারাপ হওয়ার সব দায় নাকি ওই গানেরই। কিন্তু পাশে বসা সহপাঠীটিরও তো একই অভ্যাস ছিল! সে কী করে অঙ্কে এত নম্বর পেল? ওই বয়সে জটিল সেই ধাঁধার উত্তর পাননি। পাছে কাজে গোলমাল হয়ে যায়, তাই বড় হয়েও গান শুনতে শুনতে কাজ করার সাহস হয়নি। গান শুনতে শুনতে কাজ করলে কি সত্যিই একাগ্রতা নষ্ট হয়?
এই বিষয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে, নেটপ্রভাবী রাজন সিংহ বলছেন, পড়াশোনা করতে করতে গান শোনা উচিত নয়। কারণ, এই অভ্যাসের ফলে পড়ার বিষয়বস্তু আত্মস্থ করতে সমস্যা হয়। পড়া ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। রাজনের মতে, গান এবং পড়াশোনা একসঙ্গে করা আসলে দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো। একজনেরই মাথা এবং কান দু’টি কাজের সঙ্গে সমানতালে যুক্ত থাকে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। সহজ বিষয়বস্তু বুঝতে বা আত্মস্থ করতে অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু আইনেরও তো ফাঁক আছে। রাজন বলেন, “যদি গানের বদলে যন্ত্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে কাজ বা পড়াশোনা করেন, তা হলে এই ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
মনোবিদেরা বলছেন, গান শোনার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক— দু’রকম প্রভাবই রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সঙ্গীত মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু খুব জোরে, জটিল ভাষার কিংবা দ্রুত লয়ের গান শুনতে শুনতে কাজ করলে লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পড়াশোনা মাথায় রাখতেও সমস্যা হতে পারে। তুলনায় ধীর লয়ের যে কোনও যন্ত্রসঙ্গীত ভাল। কোনও কাজে ব্যাঘাত ঘটায় না। বরং মনোযোগ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
পড়াশোনা করতে করতে গান শোনার অভ্যাস এক এক জনের উপর এক এক রকম প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া কোন বিষয় নিয়ে পড়ছেন কিংবা কী ধরনের গান শুনছেন, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন, পরিচিত গান বা ধীর লয়ের কোনও যন্ত্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে কাজ করলে বা অঙ্ক কষলে সমস্যা হয় না। বরং তা পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটাতে সাহায্য করে। আবার, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। কিন্তু অঙ্ক যদি জটিল হয় কিংবা কোনও কাজ নিয়ে যদি প্রবল মাথা খাটাতে হয়, সে ক্ষেত্রে গান শুনতে শুনতে কাজ করা বেশ সমস্যার।