kidney

Kidney: ভাল থাকুক কিডনি

কিডনির অসুখে ডায়েটের নিয়মকানুন অনেক। তবে তা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণাও কম নেই।  তাই কিডনির রোগে কী খাবেন আর কী বাদ দেবেন, জেনে নিন বিশদে

Advertisement
সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৫২

কিডনি আমাদের দেহের এমন একটি অঙ্গ, যার কোনও অসুখ ধরা পড়ে অনেকটা দেরিতে। অর্থাৎ প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত সে সম্পর্কে খুব একটা সচেতন হই না আমরা। অনেক ক্ষেত্রেই একটি কিডনি বিকল হলেও কাজ চলতে থাকে অন্যটি দিয়ে, ফলে ক্ষতি সম্পর্কে আগে থেকে আঁচ করা যায় না। অন্যান্য রোগের মতোই কিডনির অসুখেও খাওয়াদাওয়ায় অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। জল খাওয়ার পরিমাণে চলে আসে বিধিনিষেধ। আর রোগী যদি ডায়ালিসিসের পর্যায়ে চলে যান, তা হলে আবার আর এক রকম ডায়েট। প্রি-ডায়ালিসিস এবং ডায়ালিসিস— বিষয়টি এই দু’টি পর্যায়ে ভেঙে আলোচনা করা যেতে পারে।

ডায়ালিসিসের আগে ও পরে

Advertisement

কিডনির কাজ অনেকটা ছাঁকনির মতো। তা হল, শরীরে জমা বর্জ্য পদার্থ বার করে দেওয়া। কিডনির রোগে হাই-প্রোটিনযুক্ত খাবার কম খেতে বলার মূল কারণ, এতে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, অ্যাসিড ও অন্যান্য বর্জ্যের অনুপাত বেশি। ফলে বিকল কিডনির উপরে চাপ পড়ে বেশি। সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে কিডনি যদি কৃত্রিম ভাবে ফের কাজ করতে শুরু করে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু প্রোটিনের পরিমাণ ফের স্বাভাবিকে ফিরিয়ে আনাই যায়।

নেফ্রোলজিস্ট ডা. ললিত আগরওয়াল প্রথমেই মনে করিয়ে দিলেন, ডায়ালিসিস শুরু হওয়ার আগে ও পরের ডায়েট কেন সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া উচিত। ডায়ালিসিস শুরু হয়েছে মানে, সেই রোগীর কিডনি প্রায় ৯০ শতাংশ বিকল হয়ে গিয়েছে। তাই কৃত্রিম কিডনির সাহায্যে তার রক্ত পরিশোধিত করা হচ্ছে। ‘‘কিডনি বিকল হলে প্রোটিন কম খেতে হয় বলে অনেকের ধারণা, ডায়ালিসিস চলাকালীনও লো-প্রোটিন ডায়েট চালিয়ে যেতে হবে। এটা কিডনির অসুখে সবচেয়ে বড় মিথ। কোনও রোগীর সপ্তাহে দু’-তিন বার করে ডায়ালিসিস চলছে মানেই কিডনির কাজ হচ্ছে, কৃত্রিম ভাবে। এবং তার সঙ্গে বেশ কিছু পরিমাণে প্রোটিনের ক্ষয়ও হচ্ছে। তখনও যদি শরীরে প্রোটিনের জোগান না দেওয়া হয়, পেশি দুর্বল হয়ে রোগী অশক্ত হয়ে পড়েন,’’ বললেন ডা. আগরওয়াল।

ডায়েট ও মিথ

কিডনির অসুখে শরীরে যাতে অতিরিক্ত জল না জমে, সে কারণে যে কোনও ধরনের লিকুইড ইনটেকের পরিমাণই কমাতে বলা হয়। অনেকে জল খাওয়ার পরিমাণ কমালেও সুপ, ফলের রস, ডাল ইত্যাদির মাধ্যমে তরল খাবার খেয়ে ফেলেন। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেগুলিও।

আবার ডায়ালিসিস চলছে এমন রোগীদের প্রোটিন-নির্ভর ডায়েট করতে বললে দেখা যায়, অনেক সময়ে তাঁরা শুধু চিকেন কিংবা মাছ খেয়ে থাকছেন। প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য ১-১.২ গ্রাম প্রোটিন জরুরি। প্রোটিনের উৎস বলে পরিচিত খাবারেও প্রতি ১০০ গ্রামে ১৮-১৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ফলে এক টুকরো চিকেন ব্রেস্ট কিংবা মাছ খেলে সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রোটিন শরীরে যায় না। তা ছাড়া কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট না খাওয়ার ফলে সেখান থেকেও এনার্জি আসে না। এ ক্ষেত্রে প্রোটিন ভেঙে পেশি গঠনের পরিবর্তে ক্যালরির উৎস হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ রোগীর পুষ্টি সুষম হয় না। কারণ প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজন অনুযায়ী ৩৫-৪০ ক্যালরি প্রয়োজন হয়। প্রাণিজ প্রোটিনে আবার বেশি পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড মেলে, যা নিরামিষাশী হলে পাওয়া যায় না। অনেক সময়ে আয়রন এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় রোগীদের, জানালেন ডা. আগরওয়াল।

পটাশিয়াম-সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রান্নার পদ্ধতিতে বদল আনা যায়। রান্না করার আগে আনাজ কেটে ধুয়ে নেওয়া বা ফুটিয়ে নিয়ে জলটা ফেলে দেওয়া যেতে পারে। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস বললেন, ‘‘কিডনির রোগীদের ডায়েট পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর। সে রোগীর ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ, থাইরয়েড ব অন্য কোনও রোগ আছে কি না, তা বিচার করেই ডায়েট চার্ট তৈরি করা প্রয়োজন। সাধারণত ডায়ালিসিসের আগে লো-প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয় এবং ডায়ালিসিস শুরু হয়ে গেলে হাই-প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয়। ডায়ালিসিসের ভাগ অনুযায়ীও (হিমোডায়ালিসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস ইত্যাদি) ডায়েটের হেরফের হয়।’’ প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীর হিমোডায়ালিসিস করা হয়, যার সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত হয়। পেরিটোনিয়াল বা ওয়াটার ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রে আবার পরিষ্কার জল প্রবেশ করিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয়। ডা. আগরওয়াল জানালেন, ওয়াটার ডায়ালিসিসের প্রচলন তুলনায় অনেক কম।

সাবধানতা ও সুরক্ষা

নিয়মিত ইউরিন কালচার করে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নির্ণয়, হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে যদি লাইফস্টাইল বা অন্যান্য কারণে ইতিমধ্যেই কিডনি ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সময় থাকতে কিডনির রোগ সম্পর্কে সচেতন হন।

আরও পড়ুন
Advertisement