R G Kar Case Hearing

পুলিশের ‘কৌশলী’ হর্নের মাঝেও কী বলার চেষ্টা করছিলেন ‘ধর্ষক-খুনি’? নতুন কিছু বলতে চেয়েছিলেন?

পর পর তিন দিনের আয়োজনের পর সোমবার ফের ‘কৌশল’ বদল করল পুলিশ। হর্ন বাজিয়ে এবং গাড়িতে চাপড় মেরে আদালত চত্বরে জোরালো আওয়াজ তৈরি করে কার্যত মুখ বন্ধ রাখা হল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৯
What did RG Kar accused trying to say in Sealdah Court on Monday

সোমবার শিয়ালদহ আদালতে প্রবেশের সময় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের মুখ বন্ধ রাখতে ‘কৌশলী’ কলকাতা পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।

কোনও রকম ‘বাঁধন’ কার্যত ছিল না প্রথম দু’দিন। সেই সুযোগে চিৎকার করে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য, অভিযোগ করেছিলেন আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত ‘ধর্ষক-খুনি’। দু’দিনের একই ঘটনাক্রমের পর সতর্ক হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কালো কাচের গাড়ির ব্যবস্থা করে আটকানো গিয়েছিল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের চেঁচামেচি। পর পর তিন দিনের সেই আয়োজনের পর সোমবার ফের ‘কৌশল’ বদল করল পুলিশ। হর্ন বাজিয়ে এবং গাড়িতে চাপড় মেরে আদালত চত্বরে জোরালো আওয়াজ তৈরি করে কার্যত মুখ বন্ধ রাখা হল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। কান ‘ঝালাপালা’ করা সেই শব্দে শোনা গেল না ‘ধর্ষক-খুনি’র কোনও কথা!

Advertisement

আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার বিচার-পর্বের দ্বিতীয় দিন থেকে ধৃত সিভিকের ‘কন্ঠরোধ’ শুরু হয়েছিল। তখন যতটুকু সুযোগ পাচ্ছিলেন, কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন ধৃত। কখনও মৃদু স্বরে, কখনও হাতের ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, তাঁকে ‘বলতে দেওয়া হচ্ছে না’! সোমবারও সেই চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা শোনা না-যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, সোমবারও কি একই কথা বলতে চাইছিলেন ধৃত? না কি নতুন কোনও ‘বিস্ফোরক তথ্য’ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন? তৈরি হয়েও এসেছিলেন তার জন্য? এর জবাব অবশ্য মিলল না।

সোমবার বিচার-পর্বের পঞ্চম দিন ছিল। আঁটসাঁট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল শিয়ালদহ আদালতে। দুপুর ২টো নাগাদ ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে আদালতে পৌঁছয় পুলিশের গাড়ি। প্রবেশপথে গাড়ি থামতেই মুহূর্তের মধ্যে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নামিয়ে ভিতরে নিয়ে চলে যান পুলিশকর্মীরা। ধৃতকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার সময়েই আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়িগুলির হর্ন তারস্বরে বাজতে শুরু করে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশকর্মীরাও সমবেত ভাবে গাড়ির ছাদে চাপড় মারতে থাকেন। ফলে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় আদালত চত্বরে।

পুলিশের এই আচরণ মনে করিয়ে পড়িয়েছে ১১ বছর আগে কুণাল ঘোষের পর্বকে। সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর কুণালও পুলিশের গাড়ি থেকে সরকার-বিরোধী নানা মন্তব্য করতেন। তাতে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। তাঁর স্বর চাপা দিতে তখনও পুলিশকে গাড়ি চাপড়াতে দেখা গিয়েছিল। আরজি কর-কাণ্ডে ফিরে এল সেই দৃশ্যই।

গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। ঘটনার ৫৮ দিন পর গত ৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার বহু প্রমাণ হাতে রয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে নাম থাকার পর থেকে বার বার মুখ খোলার চেষ্টা করছেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। কখনও ভরা এজলাসে ধৃত দাবি করেছেন, তাঁকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কখনও আবার প্রিজ়ন ভ্যান থেকে চেঁচিয়ে দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। সোমবার বিচার শুরুর দিন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল)-র নাম বলেছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে ফাঁসিয়েছেন। ধৃত বলেছিলেন, ‘‘আমাকে কোনও কথা বলতে দেয়নি। বড় বড় অফিসার সব! আমি নাম বলে দিচ্ছি। বিনীত গোয়েল আমাকে ফাঁসিয়েছে। বিনীত গোয়েল, ডিসিডিডি স্পেশ্যাল সাজিশ করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাদের সরকারও ওদের সমর্থন করেছে।’’

তার আগে চার্জ গঠনের দিনেও শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন ধৃত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আসলদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সরকার ও ‘ডিপার্টমেন্ট’ (পুলিশ) তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ধৃতের কথায়, ‘‘আমি রেপ অ্যান্ড মার্ডার করিনি। আমি বললাম যে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে সেখানেও যেতে দিল না। সরকার আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমাকে ভয় দেখাচ্ছে যে তুমি কিছু বলবে না। ডিপার্টমেন্ট আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি পুরোপুরি নির্দোষ।’’

ওই দুই ঘটনার পরেই তৎপর হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। ধৃতের মুখ বন্ধ রাখতে তাঁকে কালো ‘টিন্টেড’ কাচে ঢাকা সাদা রঙের একটি এসইউভি-তে করে আদালতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। গত সপ্তাহে পুলিশের সেই আয়োজন কাজে এসেছিল। সোমবার সফল হল পুলিশের নতুন কৌশলও! ব্যর্থ হল ধৃত সিভিকের কিছু বলার চেষ্টা।

আরও পড়ুন
Advertisement