‘ইনফোকম ২০২৩’-এর মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ় আলি এবং স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক, বাজেট, নাকি কন্টেন্ট? সিনেমা সফল হয় ঠিক কিসের গুণে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ মুশকিলের। অন্তত এই সময়ে দাঁড়িয়ে তো বটেই। বছর দশেক আগেও বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করলেই সেই ছবিকে 'সফল' বলা হত। কিন্তু ওটিটি স্ট্রিমিংয়ের যুগে সাফল্যের সংজ্ঞা খানিক বদলে গিয়েছে। এখন তো অনেক ছবিই প্রেক্ষাগৃহে নয়, ওটিটিতে মুক্তি পায়। এমনকি হলে মুক্তি পেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলে আসে। ফলে প্রেক্ষাগৃহে না গিয়ে বাড়ি বসে মুঠোফোনে সেই সিনেমা দেখে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সে দিক থেকে বক্স অফিসের মাপকাঠিতে সিনেমার সাফল্য বিচার করা বেশ কঠিন। তা হলে ‘সফল সিনেমা’র নতুন সংজ্ঞা কী? এবিপি প্রাইভেট লিমিটেড আয়োজিত ‘ইনফোকম ২০২৩’-এর দ্বিতীয় সন্ধ্যায় সিনেমার সাফল্য নিয়ে কথা বললেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বলিউড পরিচালক ইমতিয়াজ় আলি এবং অভিনেতা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। শুক্র সন্ধ্যায় এই ত্রয়ী জানালেন, ‘সফল সিনেমা’ বলতে তাঁরা কী বোঝেন?
সৃজিতকে টলিউডের অন্যতম সফল পরিচালক বললে অত্যুক্তি হয় না। ‘হিট’ সিনেমা বলতে তিনি কী বোঝেন? সৃজিত বলেন, ‘‘ছবি বানানোর পর নিজে যদি পুরোটা বসে দেখতে পারি, সিনেমা দেখতে দেখতে যদি ভুলে যাই, এ সিনেমার জন্ম দিয়েছি আমি, তা হলে আমি ধরে নিই সিনেমা সফল। আর একটা বিষয়কেও এগিয়ে রাখব এ ক্ষেত্রে। সেটা এই, দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ হল কি না। সব সিনেমার স্বাদ এক রকম হয় না। ‘দশম অবতার’ যে জঁর-এর সিনেমা, ‘কাকাবাবু’ সেই একই পরিসরে পড়ে না। সুতরাং দর্শককে দু’রকম সিনেমার আনন্দই আলাদা করে দিতে পারলাম কি না, আমার কাছে সফল সিনেমার সেটাও একটা মাপকাঠি।’’
‘যব উই মেট’, ‘যব হ্যারি মেট সজল’, ‘তামাশা’, ‘রকস্টার’-এর পরিচালক ইমতিয়াজ় আলি তাঁর ছবিতে ভালবাসার গল্প আঁকেন। তাঁর ছবি যেন সিনেমা নয়, কিশোর প্রেমিকের প্রেমিকার প্রতি ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে লেখা এক প্রেমপত্র। তাঁর ছবিতে ভালবাসা, প্রেমের পদ্য লিখে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন ইমতিয়াজ। কিন্তু তাঁর কাছে ‘সফল সিনেমা’ মানে কী?
ইমতিয়াজ়ের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘প্রোডিউসার বিশ্বাস করেন, ভরসা রেখে যে টাকা ঢেলেছেন তার কতটা ঘরে ফিরল। সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমা ব্যবসা করেছে, মানেই অনেকের কাছে তা পৌঁছেছে। তা ছাড়া আমি তো বড় স্ক্রিনের জন্য সিনেমা বানাই। ভাবিও বড় পর্দার জন্যেই। ফলে দর্শক ভিড় করে প্রেক্ষাগৃহে আমার সিনেমা দেখল কি না, সেটা আমার জন্য জরুরি।’’
বড় পর্দার পাশাপাশি বাংলা এবং হিন্দি সিরিজেও চুটিয়ে কাজ করছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তবে তিনি অভিনেতা। পরিচালকরা সিনেমার সাফল্য যে ভাবে দেখবেন, তিনি সে ভাবে ভাবেন না। স্বস্তিকার কাছে ‘সফল সিনেমা’ মানে আজ থেকে ৫-১০ বছর পরেও যে ছবি নিয়ে কথা হবে। আলোচনা করবেন দর্শক। তাঁর কথায়, ‘‘‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, ‘জাতিস্মর’ নিয়ে আজও কথা বলেন দর্শক। বিদেশে গেলেও অনেকে এই ছবিগুলিতে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। ভাল লাগে। মনে হয়, সাফল্য তো চোখে দেখা যায় না। কিন্তু ওই অনুভূতিগুলিই আসল প্রাপ্তি।’’