Relationship

‘হানিমুন পিরিয়ড’ চলে গেলে সম্পর্কে নতুন প্রেম আসবে কী করে?

শুরুর দিনগুলো খুব ভাল। এই সময়টা পেরিয়ে গেলেই শুরু হয়ে যায় ছোটছোট ঝগড়া আর অশান্তি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৪৫
প্রেম বেঁচে থাকতে পারে বহু বছর।

প্রেম বেঁচে থাকতে পারে বহু বছর। ফাইল চিত্র।

বিয়ে হয়েছে কয়েক মাস আগে। এত দিন সঙ্গের মানুষটার ভুল গুলো বিশেষ চোখে পড়ত না। কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে, ‘মানুষটার অনেক কিছুই খারাপ’। ভিজে তোয়ালেটা সোফায় রাখে কেন? এত ঝাল খায় কেন? স্লিপার পরে হাঁটলে ফটফট আওয়াজ হয় কেন? আপনি যখন ঘুমাতে চান, আপনাকে ঘুমাতে না দিয়ে প্রেমের কথা বলে কেন? আপনি যখন প্রেমের কথা বলতে চান, তখন ও ঘুমাতে চায় কেন? মোট কথা, মানুষটার অনেক খুঁত। যা এর আগে আপনি টের পাননি।
বেশির ভাগ প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়। শুরুর দিনগুলো খুব ভাল। যাকে বলে, ‘হানিমুন পিরিয়ড’। এই সময়টা পেরিয়ে গেলেই শুরু হয়ে যায় ছোটছোট ঝগড়া আর অশান্তি। অন্যজনের খুঁতগুলো বেশি করে চোখে পড়ে। কিন্তু এই ‘হানিমুন পিরিয়ড’কে বাঁচিয়ে রাখা যায় আরও বহু দিন। রয়েছে তার কয়েকটা সহজ রাস্তা।
সহিষ্ণুতা দেখান: সম্পর্কের গোড়ায় সব ভালটুকু উজাড় করে দেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। কিন্তু সময় যত এগোয়, সাদৃশ্যের প্রসাধনগুলো আস্তে আস্তে সরে গিয়ে দু’জনের পার্থক্যটা পরস্পরের সামনে আসতে শুরু করে। এই সময়টা সম্পর্কটার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনটাই বলছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দু’জনের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকবে না, কোনও সমস্যা হবে না— এটা অবাস্তব ভাবনা। এই ভিন্নতার প্রতি সহিষ্ণু থাকাটাই এখানে আসল। সহিষ্ণুতাটা থাকলেই সম্পর্ক শক্তপোক্ত হবে। শুরুর দিনের ভাললাগাটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।’’
চাহিদা কমান: সম্পর্কের গোড়ায় একটা ‘ইউফোরিয়া পিরিয়ড’ তৈরি হয়। তখন অত চাহিদা থাকে না। কিন্তু এই পর্যায়টা কাটার সঙ্গে সঙ্গেই পরস্পরের থেকে চাহিদা বাড়তে থাকে। এমনটাই বলছেন মনোবিদ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় সারেঙ্গি। তাঁর পরামর্শ, ‘‘অন্য মানুষটা সব কিছুতে আপনাকে স্বর্গ দেবে— এটা ভাবা অন্যায়। বরং ধরে নিন, আগে জীবন যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী এর সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে আপনার জীবনে এসেছেন। তিনিও নিজের ভালমন্দ নিয়েই এসেছেন। তাঁর থেকে চাহিদা কমান, ভাল থাকবেন দু’জনেই। সম্পর্কের নতুনত্বের আমেজটাও থেকে যাবে।’’
আবেগের কথা বাঁচিয়ে রাখুন: কথা যেন থেমে না যায় দু’জনের মধ্যে। কথা মানে, শুধু কেজো কথা নয়, অন্তরঙ্গতার কথাও। এমনই পরামর্শ অনুত্তমার। ‘‘পরস্পরের প্রতি যে আবেগ বহন করছি, সেটা প্রদর্শন করতে পিছপা হবেন না। পরস্পরের জন্য ‘এক্সক্লুসিভ’ কথা বাঁচিয়ে রাখুন। এমন কিছু কথা থাকুক, যা শুধু পরস্পরকেই বলতে পারেন। সম্পর্কের বয়স বাড়তেই পারে। কিন্তু তাকে অন্তরঙ্গতার পর্যাপ্ত জল-হাওয়া দিলেই, শুরুর দিনগুলোর ‘ম্যাজিক’টা কখনও ফুরিয়ে যাবে না,’’ বললেন অনুত্তমা।
নিজেকে ভাল রাখুন: নিজে ভাল থাকলে, অন্য মানুষটাকে ভাল রাখা সহজ হয়ে যায়। বলছেন ইন্দ্রাণী। তিনি বললেন,‘সম্পর্ক একটা সময় গিয়ে আটপৌরে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার মানেই শুরুর দিনগুলোর উত্তেজনা হারিয়ে যাবে— তা নয়। অন্য মানুষটাকে ভাল রাখতে পারলে, সেটা কখনও হারায় না। অন্যজনকে ভাল রাখার জন্য নিজেকে ভাল রাখাটা খুব দরকারি। কখনও ভাববেন না, আপনার ভাল থাকার দায়িত্বটা অন্যজন নিজের কাঁধে তুলে নেবেন। বরং সেটা নিজের দায়িত্ব বলে ভাবুন। দেখবেন, দু’জনেই ভাল থাকবেন’’।
বিয়ে শেষ কথা নয়: প্রেমের দিনগুলোয় যতটা উত্তেজনা, অন্যকে ভাল রাখার প্রচেষ্টা থাকে, বিয়ের পর অনেকের ক্ষেত্রেই সেটা কম যায়। এতে সম্পর্কের ক্ষতি হয় বলে মনে করেন অনুত্তমা। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ে শেষ কথা নয়। বিয়ে হয়ে গেল মানেই, অন্য মানুষটার আর কোথাও যাওয়ার নেই, যা পাওয়ার আমি পেয়ে গিয়েছি— এমন ভাবনা খুব ভুল। এমন ভাবনা মাথায় ঢুকে গেলে অন্য মানুষটাকে ভাল রাখার উৎসাহ থাকে না। এক সময় বিষয়টা এমন জায়গায় এসে দাঁড়ায়, এক বাড়িতে থাকি, কিন্তু আর একসঙ্গে থাকি না। মন দুটো পরস্পরের থেকে অনেক দূরে সরে যায়। এটা হতে দেবেন না’’, পরামর্শ অনুত্তমার।
নতুন দেখার চোখ: মনে রাখতে হবে, বছরের প্রতিটা দিন এক রকম যায় না। প্রতিটা দিন আলাদা আলাদা ভাবে দেখুন। পুরনো যা কিছু, তাকেও নতুনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করুন। এমনই বলছেন ইন্দ্রাণী। নতুন কিছু দেখার চোখটা খুলে রাখলে, সম্পর্কের নতুনত্বও কখনও ফুরিয়ে যাবে না। প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে বিশ্বাস করেন ইন্দ্রাণী।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement