শপিংয়ের আসক্তি কাটানোর উপায় জেনে নিন। ছবি: সংগৃহীত।
অনলাইনে শপিং করা নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমবয়সিরাই এতে বেশি আসক্ত। দেখবেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে, বাস, মেট্রো বা ট্রেনে বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীই অনলাইন শপিং সাইট খুলে স্ক্রল করে যাচ্ছেন। কিছু জিনিস পছন্দের তালিকায় রেখে দিচ্ছেন, আবার কিছু সঙ্গে সঙ্গেই কেনার জন্য অর্ডার দিয়ে ফেলছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি কেনাকাটির এই পদ্ধতিকে এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে, বাড়ি বসেই দিব্যি অর্ডার করে পছন্দের জিনিস কেনা যায়। দোকানে গিয়ে ভিড় ঠেলতে হয় না। এই প্রযুক্তির এটি যেমন ভাল দিক, তেমনই খারাপ দিকও রয়েছে। সেটি হল এই যে, অনলাইনে কেনাকাটায় আসক্তি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। প্রয়োজন না থাকলেও গাদা গাদা জিনিস কিনে খরচ করে ফেলছেন কমবয়সিরা। আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, দিনভর ই-কমার্স সাইটেই চোখ রেখে বসে আছেন অনেকে।
এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, কেনাকাটা করার প্রতি এই যে আসক্তি তাকে বলা হয় ‘কমপালসিভ বায়িং ডিজ়অর্ডার’। অর্থাৎ, কেনাকাটা করা আর প্রয়োজনের তাগিদে নয়, বরং নেশার মতো হয়ে গিয়েছে। চাইলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার অনেক উপায় আছে।
১) ‘৪৮ আওয়ার্স রুল’ মেনে চলতে হবে। অনিন্দিতার পরামর্শ, যে জিনিসটি পছন্দ হচ্ছে সেটি সঙ্গে সঙ্গে না কিনে পছন্দের তালিকায় রেখে দিন। ৪৮ ঘণ্টা পরে যদি দেখেন তখনও সেটির প্রতি আগ্রহ রয়েছে বা কিনতে চান, তা হলেই কিনুন। দেখবেন, যদি কেবলমাত্র অভ্যাসের বশে জিনিসটি কেনার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তা হলে ৪৮ ঘণ্টা পরে সেটির প্রতি আর কোনও মোহই থাকবে না।
২) নিজেকে প্রশ্ন করুন, জিনিসটি কি সত্যিই আপনার খুব দরকার? সেটি আপনার কোন কাজে লাগবে? আপনার কাছে জিনিসটির কি সত্যিই বড় কোনও মূল্য রয়েছে? যদি প্রতিটি উত্তরই ‘না’ হয়, তা হলে ইচ্ছেকে দমন করুন।
৩) অনিন্দিতা বলছেন, “বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে ঘুরে ঘুরে এলোপাথাড়ি জিনিসপত্র অর্ডার দিয়ে কিনে ফেলার অভ্যাস তাঁদেরই থাকে, যাঁরা সঞ্চয়ের হিসাবটা ঠিক বোঝেন না। তাঁরা ভাবেন, ‘পয়সা রোজগার করছি, অতএব যা খুশি কিনে ফেলব’। কিন্তু সঞ্চয় করে রাখলে তার যে সুবিধা কতটা অথবা কী কী খাতে সঞ্চয় করলে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে, সে জ্ঞানটাই তাঁদের নেই।” সেই কারণেই প্রাত্যহিক খরচের একটা হিসাব করে রাখা ভীষণ জরুরি। তা হলেই আপনি বুঝতে পারবেন, কত টাকা মাসে রোজগার করছেন আর ঠিক কতটা খরচ করে ফেলছেন। তার মধ্যে অহেতুক খরচের পরিমাণ কতটা।
৪) ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’ খুব জরুরি। প্রতি দিনের খরচের উপর নির্ভর করে একটা বাজেট কষে নিন। সাধারণত, সেই বাজেটের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করুন। মনকে বোঝান, এর চেয়ে বেশি খরচ আপনি করবেনই না।
৫) কোন খাতে কী খরচ করবেন, কোথায় টাকা রাখবেন, কী ভাবে জমাবেন, তার সঠিক ধারণা না থাকলেও এমন ভুলভাল খরচের নেশা হয়ে যায়। তাই আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। অনিন্দিতার পরামর্শ, যে জিনিসটি কিনবেন বলে ভাবছেন, সেটির যদি সত্যিই কোনও দরকার না থাকে, তা হলে সেই টাকা বাঁচিয়ে রাখুন। প্রতি দিন অল্প অল্প করে বাঁচালে মাসের শেষে দেখবেন যে টাকাটা জমেছে তা আপনার কত কাজে আসছে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করুন ভেবেচিন্তে। পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্ক, নানা সরকারি বিমা সংস্থা, এগুলি টাকা জমানোর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি জায়গা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বেছে নিতে পরেন কোনও স্কিম। অল্প কিছুটা করে টাকা সেখানে জমাতে পারলে তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে। সম্ভব হলে স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রাখুন। যখনই আপনি সঞ্চয়ের পথে হাঁটবেন, তখনই দেখবেন অতিরিক্ত কেনাকাটার প্রতি আসক্তি কমে গিয়েছে।
৬) ফোনে প্রয়োজনীয় একটিই ই-কমার্স সাইট রাখুন। বাকিগুলি ‘আনইনস্টল’ করে দিন। সকলেরই অভ্যাস থাকে একাধিক সাইটে গিয়ে একই জিনিস খোঁজাখুঁজি করে দেখা। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সেই সাইটগুলির নোটিফিকেশন অনবরত পাঠাতে থাকে। আর আপনিও প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে যান। তাই অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে ঘোরাঘুরি করা আগে কমাতে হবে। প্রয়োজনে তেমন কোনও অ্যাপই রাখবেন না আপনার ফোনে।