ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমোলেই রোগা থাকতে পারবেন, এমনটাও নয় কিন্তু। ছবি: ফ্রিপিক।
দিনে-রাতে যখন পারছেন ঘুমোচ্ছেন, তাই বলে যে ওজন কমবে তা কিন্তু একেবারেই নয়। আবার উল্টো দিকে, যাঁরা রাত জেগে কাজ করছেন বা পেশা অথবা পারিবারিক কারণ যা-ই হোক না কেন, তার জন্য কম ঘুমোচ্ছেন, তাঁরা যে হঠাৎ করে মোটা হয়ে যাচ্ছেন, তেমনটাও নয়। আসলে কম ঘুম মানেই স্থূলত্ব আর বেশি ঘুম মানেই রোগা থাকা যায়, এই ধারণা ঠিক নয়। ঘুমের কম বা বেশিতে নানা শারীরিক সমস্যা ভোগায়। ওজন বাড়া বা কমা নির্ভর করে আরও কিছু বিষয়ের উপরে। অবশ্যই যার সঙ্গে ঘুমও জড়িত।
এখন মনে হতে পারে সেই বিষয়গুলি কী কী। সে নিয়ে আলোচনা করেছেন শিকাগো ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। কম ঘুম, অনিদ্রা, স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো নানা সমস্যার কথা এখন অনেকেই জানেন। গবেষকেরা দেখেছেন, যাঁদের ওবেসিটি বা স্থূলত্ব আছে, তাঁদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র শিকার। রাতের পর রাত জেগে থাকা, ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসা, স্লিপ অ্যাপনিয়ার নানা লক্ষণ। এর সঙ্গে অনিদ্রা বা ইনসমনিয়াও জড়িত। কথা হল, ঘুম কম হলে আনুষঙ্গিক কিছু শারীরিক সমস্যার উদয় হয়। যেমন, খিদে বেড়ে যায়, ক্লান্তি-ঝিমুনির পাশাপাশি ভাজাভুজি-মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে। ভেবেই দেখুন না, পেশার কারণে যখন রাত জাগতে হয় বা নিছক ওয়েব সিরিজ দেখে রাতের পর রাত জেগে কাটান, তখন মধ্যরাতের পরে ভালমন্দ খেতে ইচ্ছে করে নিশ্চয়ই। কেউ চকোলেট, কেউ আইসক্রিম বা ম্যাগি-চাউমিন-পিৎজ়া অর্ডারও দিয়ে ফেলেন । এই যে খাওয়ার প্রতি আসক্তি, তা-ই হল ওজন বাড়ার কারণ।
শিকাগোর গবেষকেরা আরও একটি বিষয় দেখেছেন। যত কম ঘুম, ততই সিদ্ধান্তের ভুল। বিষয়টা বুঝিয়ে বলা যাক। রাতে যখন জাগছেন আর প্রচণ্ড খিদে পাচ্ছে, তখন একটির জায়গায় দু’টি মিষ্টি খেয়ে ফেলতেও দ্বিধা করবেন না। সারা দিনে ডায়েটের কারণে যিনি আইসক্রিম ছুঁয়েও দেখেন না, তিনি রাত জাগলে বা কম ঘুমোলে তখন এই জাতীয় খাবারই বেশি খুঁজবেন। কারণ ঘুম কম হলে খিদে ও হজমের হরমোন ঘ্রেলিনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, একই সময়ে বাড়ে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের ক্ষরণ। একদিনে মনের উপর চাপ, শরীরে ক্লান্তি, তার উপরে খিদের হরমোনের কারণে ‘ওভারইটিং’ বা ‘বিঞ্জ ইটিং’-এর প্রবণতা বাড়ে। ওজন বাড়তে শুরু করে তখনই। এমনকি রাত জাগলে ইনসুলিনের কার্যকারিতাও কমে, তখনও চেহারায় মেদের প্রলেপ পড়ে।
এর থেকে বাঁচতে রাতে টানা ঘুমই জরুরি। সে জন্য রাত জেগে মোবাইল-ল্যাপটপ দেখা বন্ধ করতে হবে। পেশার কারণে রাজ জাগতে হলে, মধ্যরাতের পরে জল ছাড়া আর কিছু খাবেন না। ঘুমোতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার সময়টা একই রাখার চেষ্টা করুন, এতে ‘স্লিপ সাইকেল’ ঠিক থাকবে। আর ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।