ছবি: অমিত দাস।
স্কুলে এখন নতুন সেশন শুরু। নতুন ক্লাসে সেকশন বদল বাচ্চাদের। অনেক সময়েই পুরনো বন্ধুরা দলছুট হয়ে যাচ্ছে। এ সময়েই আবার ছোটদের প্লেস্কুল থেকে বড় স্কুলে যাওয়ার পালা। এই স্কুলবদল বা সেকশন বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেকেরই সমস্যা হয়। বড় স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময়ে আনন্দ সহকারে মা-বাবার হাত ধরে গেলেও, একা স্কুলে ঢোকার দিন যেন ওদের পা শক্ত হয়ে আসে। অনেকে টেনশনে বমি করে ফেলে। অনেক বাচ্চা আবার পরিত্রাহি চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে স্কুলের গেটেই। কিন্তু স্কুলে তো রোজ যেতেই হবে। আর এই ছোট ছোট বদলের সঙ্গে মানিয়েও নিতে হবে। তা হলে উপায় কী?
প্লেস্কুলে পড়ার সময় থেকেই প্রস্তুতি শুরু
বাচ্চাদের প্লেস্কুলে ভর্তি করানো হয় স্কুল যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করার জন্যই। কিন্তু তবুও বড় স্কুলে ভর্তি হয়ে তারা যেন অকূল সাগরে এসে পড়ে। অনেকে স্কুলে ঢুকতেই চায় না। অনেকে আবার গুটিয়ে যায়, মিশতে পারে না তেমন।
সবচেয়ে আগে প্লেস্কুল আর বড় স্কুলের মধ্যে পার্থক্যগুলো মাথায় রাখতে হবে:
এতগুলো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। বাচ্চাদের জায়গা থেকে যদি আমরা ভাবি, তা হলে ওদের সমস্যাগুলো বুঝতে সুবিধে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও নতুন কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক মাস সময় নেন। একটা শহর বদলে নতুন জায়গায় পড়াশোনা শুরু করার জন্য এখনও ছেলেমেয়েরা লড়াই করছে। সেখানে একটা চার-পাঁচ বছরের শিশু বড় স্কুলে গিয়েই মানিয়ে নেবে, এটা ধরে নেওয়া যায় না। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বলছেন, “ছোট স্কুল থেকে বড় স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতে ওর সঙ্গে গল্পের ছলে এই পরিবর্তনগুলো বোঝাতে হবে। রোজ স্কুলের সময়টা যে বাড়বে, ক্লাসে অনেক বন্ধু থাকবে, একটু একটু করে বড়দের মতো পড়াশোনা করতে হবে... এগুলো ওদের বলতে হবে, তবে ভয় দেখিয়ে নয়।” অভিভাবকদের অনুযোগ থাকে অনেক বিষয়ে। সেগুলো নিয়েও পায়েল পরামর্শ দিলেন—
অনেক বাচ্চাই নতুন সেকশনে গিয়ে নিজের বন্ধুদের পায় না। এ দিকে সেই সেকশনে ইতিমধ্যেই বাকিদের গ্রুপ হয়েই রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাটির একা লাগে। এ ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপিস্ট জলি লাহা বলছেন, “অনেক অভিভাবক আগে থেকেই বাচ্চাদের বোঝাতে শুরু করে, এ বার তার বন্ধু নেই এই সেকশনে। তার বদলে বরং বোঝান, নতুন কত বন্ধু হবে। মা-বাবারা প্যানিক করতে শুরু করেন, উঁচু ক্লাস, ‘চাপ বাড়ছে’। এই ‘চাপ’ শব্দটা বাচ্চাদের উপরে কতটা প্রভাব ফেলে সেটা ভাবেন না। অনেক সময়েই স্কুলে মায়েদের গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়, সেই অনুযায়ী বাচ্চারাও মেশে। সেটা আরও ক্ষতিকর। সাধারণত বাচ্চারা মিশুকে হয়। তারা সকলের সঙ্গে মিশতে, খেলতে চায়। কিন্তু অনেক বাড়িতেই মা-বাবারা হয়তো বলে দেন, ‘ও পড়াশোনায় ভাল না, ও দুষ্টুমি করে, ওর পাশে বসবে না...’ এগুলো বন্ধ করতে হবে।” সন্তানের মেলামেশার পরিধি বাড়াতে হবে। মাঝেমাঝে বিকেলে কোনও পার্কে নিয়ে গেলেন। সেখানে নতুন বাচ্চাদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলতে দিন।
এ ক্ষেত্রে সহায় হতে পারে ছোট ছোট ওয়ার্কশপ বা অ্যাক্টিভিটি ক্লাস। নাচ, গান, আঁকার স্কুলে ভর্তি করাতে পারেন। আবার এখন শহর জুড়ে পটারি, থিয়েটার ওয়ার্কশপ চলে। সেখানে নিয়ে গেলেও নতুনদের সঙ্গে মিশতে শিখবে বাচ্চা। এতে নতুন পরিবেশে তারা চট করে মানিয়ে নিতে শিখবে।