শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা শেখাবেন কী ভাবে, রইল পরামর্শ। ছবি: ফ্রিপিক।
শিশু দুষ্টুমি করলে কান মলা, থাপ্পড়, স্কেল দিয়ে পিটুনি, কোনও কিছুই বাদ যায় না। অনেক অভিভাবকই মনে করেন, এ সব না করলে সন্তান মানুষ হবে না। কিন্তু ধারণাটা এ কালে একেবারে উল্টে গিয়েছে। এতে শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বুঝেই স্কুলে মার এখন নিষিদ্ধ। তবে বাড়িতে কড়া শাসনের বিধি রয়েছে। শিশুরা অবাধ্য হলে বা অভিভাবকের মনের মতো কাজ না-করলে, খেতে না-চাইলে বা পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে অনেক অভিভাবকই কঠোর শাস্তি দেন বা বকাবকি করেন। এতে লাভ তো হয়ই না, উল্টে শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এই বিষয়ে পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, শৈশব থেকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথে অভিভাবকদের তিনটি ধাপ মনে রাখতে হবে। প্রথম ধাপ, সেই শিশুর আশপাশের জগৎ, তার পর তার যোগ্য সংমিশ্রণ ও তার পরের ধাপে তাদের পরিণত হয়ে ওঠা। এই সময়ে সন্তানের সঙ্গে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধন তৈরি করতে হবে। সেখানে বকাবকি বা মারধোর করলে, শুরু থেকেই সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকদের বাঁধনটা নড়বড়ে হয়ে যাবে। অভিভাবকত্বে শাসন যেমন থাকবে, তেমনি স্নেহের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ও থাকবে। আর শাসন যেন খুব কঠোর না হয়।
অথরিটেটিভ' অভিভাবকত্ব সন্তানের ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য সবচেয়ে অনুকুল, এমনটাই জানাচ্ছেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। দৈহিক শাস্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশু মনে। শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ ও অহংকে তা আঘাত করে ও শিশুকে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, এমন শিশু আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এতে অনেক শিশু মনে করতে থাকে হিংসা ও প্রতিশোধই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। শারীরিক অত্যাচারে ভোগা শিশু বড় হয়ে নানা অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়তে পারে।
শিশুকে কী ভাবে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখাবেন?
শিশুকে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্যগুলো আগে বোঝাতে হবে। তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং রুচিবোধ তৈরি করতে হবে। তার জন্য তার বন্ধু হন এবং তার মনোভাব বুঝুন।
কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়। না আদর, না শাসন। দু’টোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। শিশুকে শাসনের আগে বড়দের আগে দেখে নিতে হবে যে, তাঁদের নিজেদের ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না।
বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত হলে শিশুর জন্য বরাদ্দ সময় কমে যায়। এ থেকে যে ক্ষোভ শিশুমনে জন্মায় তা তাকে অনেক সময় বিশৃঙ্খল করে তোলে। তাই শিশুকে যতটা পারেন সময় দিন।
রোজকার রুটিনে তার জন্য কিছু কাজ বরাদ্দ করুন। নিজের জামা গোছানো, গাছে জল দেওয়া, বোতলে জল ভরা, নিজের ঘর পরিষ্কার রাখা, পড়ার টেবিল গোছানো— বাড়িতে এমন ছোট ছোট কাজ থাকে, যা ছোটরা করতে পারে। এমন কাজে তাকে ব্যস্ত রাখুন। এতে তার সময়ও কাটবে। নিয়মানুবর্তিতা শিখবে। মোবাইল বা টিভি দেখার স্ক্রিন টাইমও কমবে।
আঁকা, নাচ, গান, সাঁতারে অংশ নিতে দিন। এতে সে তার মনের খোরাক পাবে। নতুন জিনিস শেখার জন্য উৎসাহী থাকবে, এতে শৃঙ্খলাও শিখে যাবে নিজে থেকেই।