চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। ছবি: সংগৃহীত।
নীল আকাশে সাদা পেঁজা মেঘের ভেলা আছে। পুজো পুজো গন্ধটা বৃষ্টি পুরো ধুয়ে ফেলতে পারেনি। সকাল হলেই পাড়ার মণ্ডপে বেজে উঠছে ঢাক। আবাহন, বোধন, কলাবৌ স্নান, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো থেকে বিজয়া— সবই হচ্ছে নির্ঘণ্ট মেনে। সন্ধ্যা হলেই মণ্ডপে মণ্ডপে জমছে ভিড়। থিম না সাবেকি— সে নিয়েও লড়াই চলছে সমান তালে। আর যাঁরা কোনও কালেই ভিড় পছন্দ করেন না, প্রতি বছরের মতো তাঁদের পুজো পরিক্রমা চলছে টেলিভিশনের পর্দায়।
সবই ঠিক আছে। তবু এ বছরের পুজোটা অন্য রকম। তার কারণ অবশ্যই শহরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। কেউ আছেন উৎসবে। আবার কেউ ‘উৎ-শবে’। আরজি কর হাসপাতালে পড়ুয়া চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় বদলে গিয়েছে গোটা শহরের মানচিত্র। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। রাত-দিন দখল করে অভয়ার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন মেয়েরা। ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে আমরণ অনশনে বসেছেন পড়ুয়া চিকিৎসকেরাও। ‘গণইস্তফা’–র পথ বেছে নিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রথম দিন থেকে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের নানা রকম কর্মকাণ্ড ঘিরে বার বার উঠে এসেছে যাঁর নাম, তিনি চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। সপ্তমীর সন্ধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সরাসরি কথা হল চিকিৎসকের। পুজোর ক’দিন শহরের কোথায়, কী ভাবে পরিক্রমা করবেন, সে কথা জানালেন সুবর্ণ।
ধর্মতলার অনশন মঞ্চ:
অন্যান্য বার মণ্ডপে ঘোরেন কি না সে কথা খোলসা না করলেও সুবর্ণ জানিয়েছেন, কলকাতায় এখন যে পরিস্থিতি সেই অনুযায়ী তাঁর প্রথম গন্তব্য হল পড়ুয়া চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চ। যেখানে সাত পড়ুয়া চিকিৎসক বিচারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন। সপ্তমীর দিনটা তাঁর সেখানেই কাটবে। সুবর্ণ বলেন, “শুধু আমার নয়, গোটা চিকিৎসক গোষ্ঠীর কাছে এই অনশন মঞ্চ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।”
অভয়ার মা-বাবার ধর্নামঞ্চ
নতুন শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে অষ্টমীতে অঞ্জলি দেন অনেকেই। একটা সময়ে সোদপুরে, নাটাগড়ে অভয়ার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। ঢাকের আওয়াজ, আলোয় গমগম করত সেই বাড়ি। আজ সেই বাড়িতে নেমে এসেছে অন্ধকার। নিহত চিকিৎসকের মা-বাবাও বসেছেন ধর্নায়। তাই চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কাছে এ বছর অষ্টমীর গুরুত্ব একেবারেই আলাদা। ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা মিছিল করে যাবেন সোদপুরে।
মধ্য কলকাতা, কলেজ স্কোয়্যার জুড়ে পরিক্রমা
চিকিৎসকদের একটি দল যেমন ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে রয়েছেন, তেমন সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্য দলটি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে শুরু করেছেন ‘অভয়া পরিক্রমা’। সুর্বণ বলেন, “পুজোর ক’দিন বিকেল ৪টেয় ধর্মতলা ধর্নামঞ্চ থেকে একটি মিছিল বেরোবে। গতকালও মিছিল বেরিয়েছিল। ধর্মতলা থেকে সেই মিছিল গিয়েছিল শহরের দক্ষিণে। সেখানেও যথেষ্ট গোলমাল হয়েছে। ত্রিধারার মণ্ডপে স্লোগান দেওয়ার জন্য ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
বাগবাজার, টালা উত্তর কলকাতা
পরের দিন একই ভাবে বিকেল ৪টেয় ধর্মতলা থেকে সেই মিছিল বেরোবে। তা যাবে উত্তর কলকাতার দিকে। বাগবাজার, টালা হয়ে মিছিল পৌঁছবে সোদপুরে অভয়ার মা-বাবার ধর্নামঞ্চে। এ বছর ‘অভয়া পরিক্রমা’ করেই কাটবে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর পুজোর দিনগুলি।