গরমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আপনার গন্তব্য হতেই পারে কাশ্মীর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিচারে কাশ্মীরের কাছে যেন দেশ-বিদেশের সুন্দর শহরগুলিও ফ্যাকাশে দেখায়। হ্রদ, পাহাড়, উপত্যকা, ফল-ফুলের বাগান, সবুজ মাঠ, বার্চের বন, উইলো গাছ মিলেমিশে কাশ্মীর শুধু এ দেশেই কেন, গোটা পৃথিবীর ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যস্থল। হাতে খুব বেশি সময় না থাকলে কাশ্মীরের গুলমার্গ থেকেই ঘুরে আসতে পারেন।
বরফ দেখার জন্য প্রতি বছর শীতের মরসুমে জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গে হাজির হন পর্যটকেরা। নৈসর্গিক দৃশ্যের পাশাপাশি স্কিয়িং-সহ বিভিন্ন খেলাধুলোরও ব্যবস্থা থাকে এখানে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুলমার্গে একটি ইগলু ক্যাফেও চালু হয়েছে। সে সবের টানেই শীতের গুলমার্গের আমেজ উপভোগ করতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। তবে কেবল শীতেই নয়, গরমের দিনেও গুলমার্গ একই রকম মনোরম ও সুন্দর। হালকা বরফের সঙ্গে ফুলের সাজ এবং সবুজে ঢাকা গুলমার্গ দেখার সেরা সময় হল এপ্রিল থেকে মে মাস। গরমেও শীতের আমেজ উপভোগ করতে হলে ঘুরে আসুন এই ঠিকানা থেকে। জেনে নিন, গ্রীষ্মকালে গুলমার্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে কোন পাঁচটি কাজ করতেই হবে।
গন্ডোলা রাইড: এশিয়ার বৃহত্তম এবং সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেবল কার প্রকল্প, গুলমার্গ গন্ডোলা হল গুলমার্গের বিশেষ আকর্ষণ। কেবল কারে চড়ে এক বার পাখির চোখে গুলমার্গের সৌন্দর্য উপভোগ না করলে আপনার গুলমার্গ সফর অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কেবল কারে যাত্রার সময় পাহাড় এবং উপত্যকার নৈসর্গিক দৃশ্যগুলি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
গ্রীষ্মের সময়, গন্ডোলা রাইডে চড়ে প্রথম পর্যায় আপনি কংডোরি স্টেশনে পৌঁছতে পারেন। সেখানে আপনি প্রাণবন্ত রং-বেরঙের ফুল এবং সবুজ গালিচা বিছানো উপত্যকার সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারেন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা দ্বিতীয় পর্যায় কেবল কারে চড়ে আফারওয়াত চূড়ায় পৌঁছে যেতে পারেন। সেখানে ১৩ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় আপনি গরমেও তুষার-ঢাকা পর্বত এবং আলপাইন রিজের শোভা উপভোগ করতে পারবেন। এর বুকিং পাওয়া মুশকিল, তাই আসার আগে অনলাইনেই বুকিং করে আসতে পারেন।
আলপাইনে ট্রেকিং: ‘কাশ্মীর আলপাইনে লেক ট্রেক’ অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। চার দিকে পাইন বন, আলপাইন তৃণভূমি এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্য দিয়ে ট্রেক করে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন বিভিন্ন হ্রদের কাছে। আলপাইনে আলপাথর লেক রয়েছে। নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই লেকটি হিমায়িত অবস্থায় থাকে, তাই স্থানীয়রা এই হ্রদটির নাম দিয়েছে ফ্রোজেন লেক। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা কম। তাই নিরিবিলিতে শান্ত পরিবেশ উপভোগের সেরা ঠিকানা এই লেক।
লেকের নীলাভ জল, চার দিকের সবুজে ঢাকা উপত্যকা, গোলাপি ফুলের শোভা দেখতে দেখতে আপনার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে যাবে। কখনও মেঘে ঢাকা, কখনও রোদে ঝলমল করছে— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এই লেকের সৌন্দর্য। গন্ডোলা থেকে এই হ্রদের ধারে ট্রেক করে পৌঁছতে আপনার সময় লেগে যাবে প্রায় ১ দিন। তবে সময়ের অভাব থাকলে বেশ খানিকটা পথ কেবল কারে এসে বাকি পথটা ২ ঘণ্টা ট্রেক করে পৌঁছে যেতে পারেন। আলপাথর লেক ছাড়াও আরও বিভিন্ন হ্রদ রয়েছে এখানে, ট্রেক করে পৌঁছে যেতে পারেন সেখানেও।
গুলমার্গ গল্ফ কোর্স: সারা বিশ্বের গল্ফ কোর্সগুলির মধ্যে এটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত। গুলমার্গ গল্ফ কোর্স গল্ফ প্রেমীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যায়, সারা বিশ্বের গল্ফাররা এই জায়গায় আসেন। ১৮টি গর্তের গল্ফ কোর্সটি আলপাইন পর্বতমালার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম। গ্রীষ্মের মরসুমে প্রায় ২০ ধরনের ফুল ফুটে এই অঞ্চলটির শোভা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
গুলমার্গ গল্ফ কোর্স প্রথম ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে, এটি ছিল ৬টি গর্তযুক্ত একটি গল্ফ কোর্স। পরে ২০১১ সালে, গল্ফ কোর্সটি নতুন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এখানে আপনি ঘোড়ায় চড়েও গল্ফ কোর্সটি ঘুরে দেখতে পারেন। কেবল গল্ফপ্রেমীরাই নন, প্রকৃতিপ্রেমীরাও এই স্থানের সৌন্দর্য দেখার জন্য এক বার এই ঠিকানায় ঢুঁ মারতেই পারেন।
নিঙ্গল নালার শান্ত পরিবেশে পিকনিক: এটি গুলমার্গ শহরে অবস্থিত একটি মনোরম আল্পাইন স্রোত। আদি হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত, এই মনোমুগ্ধকর জলধারাটি প্রকৃতিপ্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। গুলমার্গের আফারওয়াত পর্বতশৃঙ্গে বরফ গলে এই জলধারার উত্স তৈরি হয়েছে। জলে স্রোতের শব্দ, তুষার-ঢাকা পাহাড় এবং সবুজে ঢাকা পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। পাহাড় ও উপত্যকার মাঝ দিয়ে শেষ পর্যন্ত জল মিশেছে ঝিলম নদীতে।
পিকনিকের জন্য আদর্শ এই স্থানটি। এখানে ক্যাম্পিং করারও সুযোগ আছে। আপনি জলের ধারে বসে ট্রাউট মাছও ধরতে পারেন। সারা বছরই নিঙ্গল নালা পরিদর্শন করতে পারেন, তবে এই স্থানটি দেখার সেরা সময় গ্রীষ্মকাল। ছবি তোলার জন্যও এই স্থান আদর্শ। স্রোতের স্ফটিক-স্বচ্ছ জল মৃদু ভাবে প্রবাহিত হয়, একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করে, যা মন কাড়বে আপনার।
মহারানি মন্দির: এই মোহিনীশ্বর শিবালয় নামেও পরিচিত। এই মন্দির গুলমার্গের অন্যতম আকর্ষণ। তুষার-ঢাকা চূড়া এবং সবুজ তৃণভূমি দ্বারা বেষ্টিত এই মন্দিরের পরিবেশ আপনার নজর কাড়বে। মন্দিরটি মহারাজা হরি সিং এর স্ত্রী রানি মোহিনী বাই সিসোধিয়া ২০ শতকের গোড়ার দিকে তৈরি করেছিলেন। এখানে শিব-পার্বতীর পুজো করা হয়।
গুলমার্গের মাঝখানে একটি ছোট টিলার উপর অবস্থিত, এই মন্দিরের আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার মতো। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই মন্দির খোলা থাকে। বলিউডের বিখ্যাত গান ‘জয় জয় শিব শঙ্কর’-এর শুটিং এই মন্দিরেই করা হয়েছিল।
সব ছবি: সংগৃহীত।