অন্যের বাড়িতে গেলে কেমন হবে আপনার আচরণ? ছবি: সংগৃহীত।
আপনার বাড়িতে অতিথি এলে তাঁর যথাযোগ্য আপ্যায়ন করেন, সে ঠিক আছে। আপনি যখন অন্যের বাড়িতে অতিথি হয়ে যাচ্ছেন, তখন আচার-ব্যবহার, কথাবার্তায় শিষ্টাচার মেনে চলেন তো? যতই ঘনিষ্ঠ জন হোক না কেন, অন্যের বাড়িতে গিয়েও সহবত মেনে চলাই রীতি। এমন কোনও কাজ করবেন না, যাতে আপনার প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হয় অথবা আপনার আচরণ নিয়ে তাঁরা অভিযোগ করেন বা আড়ালে হাসাহাসি করেন। তা হলে চলুন জেনে নিই কী ভাবে অন্যের বাড়িতে গিয়ে আচরণ করবেন।
না বলে শোয়ার ঘরে ঢুকবেন না
যতই পরিচিত জনের বাড়ি যান না কেন, কখনও অনুমতি না নিয়ে তাঁদের শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়বেন না। এই আচরণ শিষ্টাচারের পরিচয় নয়। প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত পরিসর থাকে। সেখানে অনুমতি না নিয়ে যাওয়া কাজের কথা নয়। যদি একান্তই যেতে হয় তা হলে দরজায় টোকা দিয়ে অনুমতি চান অথবা বাইরে থেকে জানতে চান যে আপনি ঢুকবেন কি না।
জুতো খুলে রেখে ঢোকেন তো?
আপনার জুতো যতই পরিচ্ছন্ন হোক না কেন, অন্যের বাড়িতে গেলে দরজার বাইরে জুতো খুলে তবেই ঢুকবেন। আমাদের দেশে সাধারণত বাইরের জুতো পরে কেউ ঘরে ঢোকেন না। আমন্ত্রণকারী যদি অনুমতি দেন, তা হলেই জুতো পরে ঢুকবেন। যদি দেখেন, আমন্ত্রণকারী নিজেও জুতো পরে আছেন, তা হলেও আপনি জুতো খুলেই ঢুকবেন। তা হলে আপনার প্রতি সম্মান আরও বেড়ে যাবে।
সারা বাড়ি ঘুরে দেখবেন না
যদি কেউ নিজে থেকে দেখাতে চান তা হলেই যাবেন। না হলে নিজে নিজে সারা বাড়ি বা ঘর ঘুরে দেখা শুরু করবেন না। নিজে থেকে এ দিক-সে দিকে উঁকিঝুঁকি মারা, প্রতিটি জিনিস খুঁটিয়ে দেখা দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে শোয়ার ঘর ও বাথরুমে উঁকি মারা একেবারেই উচিত নয়।
খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না
আমন্ত্রণকারী সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছেন আপনাকে, আর আপনিও খাবার টেবিলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন, এটি কখনওই করবেন না। ধরুন, আপনি কারও বাড়িতে গেলেন, সেই সময়ে তাঁরা খেতে বসেছেন, তা হলেও খাবার টেবিলের দিকে বারে বারে তাকাবেন না বা টেবিলের কাছাকাছি গিয়ে কথা বলবেন না। বসার জায়গায় অপেক্ষা করুন। তা হলেই শিষ্টাচার বজায় থাকবে। যাঁর বাড়িতে গিয়েছেন, তাঁরাও অস্বস্তিতে পড়বেন না।
ফ্রিজ খুলবেন না কিন্তু
আপনি যখন অতিথি হয়ে যাচ্ছেন, তখন এই কাজটি ভুলেও করবেন না। জল নিয়ে গিয়ে অনেকেই ফ্রিজ খুলে ফেলেন। এটি বদভ্যাস। হতেই পারে অন্যের বাড়ির ফ্রিজটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। তা হলেও নিজে থেকে ফ্রিজ খুলে দেখবেন না।
ম্যাগাজ়িন পড়তে গিয়ে জরুরি কাগজ খুলবেন না
বসার জায়গায় অনেকেই খবরের কাগজ, বিভিন্ন রকম ম্যাগাজ়িন রেখে দেন। সেগুলি পড়তে পারেন। কিন্তু যদি জরুরি কোনও কাগজ বা ফাইল থাকে, অথবা বিদ্যুতের বিল বা জরুরি কোনও বিল, তা হলে সেগুলি খুলে দেখবেন না বা পড়তে শুরু করবেন না। হতেই পারে নিজের জরুরি কাগজ তিনি সরিয়ে রাখতে ভুলে গিয়েছেন আর কাউকে দেখাতেও আগ্রহী নন। আপনি সেটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলে তিনি বিরক্তও হতে পারেন।
এসির সুইচ অন করে দেন কি?
গরমের সময়ে এই কাজটি অনেকেই করে থাকেন। ধরুন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়িতেও গিয়েছেন, তা হলেও নিজে থেকে এসির সুইচ অন করে দেবেন না। সৌজন্যের খাতিরে হয়তো তিনি কিছু বলবেন না, কিন্তু মনে মনে বিরক্ত হতে পারেন। এখন যে ভাবে সকলের বাড়িতে বাতানুকূল যন্ত্র চলছে, তাতে বড় অঙ্কের বিদ্যুতের বিলই আসছে। তাই আপনি গিয়ে তাঁদের অপ্রস্তুতে ফেলে দেবেন না।
ধূমপান করবেন না একেবারেই
আপনি ধূমপায়ী হতেই পারেন, যাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি হয়তো ধূমপান করেন না অথবা বাড়িতে বয়স্ক বা শিশু রয়েছে, যাদের জন্য সিগারেটের ধোঁয়া ক্ষতিকর। তাই ধূমপান করতে হলে বাইরে গিয়ে করুন অথবা অনুমতি চেয়ে নিন। সেই বাড়িতে শিশু থাকলে এবং আপনার কাছাকাছি বসে থাকলে, কখনওই ধূমপান করা ঠিক নয়। এই অভ্যাস মেনে চললে আমন্ত্রণকারীরও আপনার প্রতি শ্রদ্ধা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
পোষ্যকে নিজে থেকে আদর করতে যাবেন না
যাঁর বাড়িতে অতিথি হয়ে গিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে পোষ্য থাকতেই পারে। সে হয়তো ভারী সুন্দর একটি কুকুর বা বিড়াল। আপনার ভীষণ ইচ্ছে করছে তাকে একটু আদর করতে। ভুলেও নিজে থেকে আদর করতে যাবেন না। পোষ্যটি আপনার শারীরিক ক্ষতি করতে পারে, কারণ দিনের শেষে তার কাছে আপনি অচেনা। অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে পদক্ষেপটি করুন, নতুবা কখনও নয়।