প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
করোনা আক্রান্ত হলে বা কারুর উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলে যে বারবার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা উচিত, তা এখন প্রায় সকলেই জানেন। এই প্রেক্ষিতেই জনপ্রিয় হচ্ছে ৬ মিনিট হাঁটার পরীক্ষা বা সিক্স মিনিট ওয়াকিং টেস্ট। সেটা কী জেনে নেওয়া যাক।
৬ মিনিট হাঁটা পরীক্ষা
করোনা রোগীদের নিভৃতবাসে থাকলে নিয়মিত রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে হয়। তবে অনেক সময় একবার মাপলে সেটা ভুলও আসতে পারে। তাই একাধিক রি়ডিং নিতে বলা হয়। এবং একবার হয়ে গেলে ঘরের মধ্যে ৬ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে ফের পাল্স অক্সিমিটার ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয় বার মাপার পর যদি ৯৩% বা মোট ৩%’র কম রিডিং আসে, তা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু এই পরীক্ষা কী সকলেই করতে পারেন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
চিকিৎসকদের মত
এমনিতে যে কেউ এই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অনেকের অক্সিজেনের মাত্রা পাল্স অক্সিমিটারে মাপলে হয়ত স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু তাঁদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে কি না, সেটা বোঝার জন্য এই পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। এটাকে বলে ‘সাইলেন্ট হাইপক্সিয়া’। তবে করোনা রোগীদের অসুস্থ অবস্থায় কী এই পরীক্ষা করানো উচিত? ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল এ বিষয়ে বললেন, ‘‘করোনার মৃদু উপসর্গ দেখলে আমরা অনেক রোগীকে এই পরীক্ষা করে দেখতে বলছি। স্থির ভাবে বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেন মাপলে, অনেকের ক্ষেত্রে হাইপক্সিয়া ধরা পড়ে না। তাই একটু হাঁটিয়ে দেখতে হয়। হাঁপিয়ে যাওয়ার পর অক্সেজেনর মাত্রা কতটা পড়ল, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। নিভৃতবাসে থাকা রোগীরা এই পরীক্ষা করে যদি দেখেন তাঁদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা আগের তুলনায় ৩%’র বেশি পড়ে গিয়েছে, তক্ষুণি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে।’’
নিভৃতবাসে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থা না বুঝে এই পরীক্ষা করলে কোনও বিপদও হয়ে যেতে পারে। তাই অনেক চিকিৎসক এই বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। বেলেঘাটা আইডি’র চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বললেন, ‘‘বাড়িতে যাঁরা একা রয়েছেন, তাঁদের এই পরীক্ষা করতে গিয়ে যদি হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়, তা হলে তাঁকে কে দেখবেন? এই ধরনের পরীক্ষা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে করাই ভাল। তাই করার আগে অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে।’’
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এবং যাঁদের বয়স ৬০’এর বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা করা উচি়ত কি না, করলেও সেটা ৬ মিনিট নাকি তার কম সময় ধরে করবেন, তা চিকিৎসকই জানিয়ে দেবেন। শিশুরোগ চিকিৎসক মউপিয়া চক্রবর্তী বললেন, ‘‘খুব ছোট বাচ্চাদের এই পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়। ১০-১১ বছর হলে করিয়ে দেখতে পারেন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যে বাচ্চাদের অ্যাজমা রয়েছে, তাদের এমনি সময়ও এই পরীক্ষা করালে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমই দেখাবে। তাই এই পরীক্ষার বদলে সঠিক রিডিং পাওয়ার অন্য উপায় রয়েছে। পাল্স অক্সিমিটার আঙুলে লাগিয়েই রিডিং নেবেন না। এক মিনিট পর যখন একটা স্পষ্ট কার্ভ দেখা যাবে, তখনকার রিডিংটাই ঠিক বলে ধরে নিতে হবে।’’