পুজোয় কোন রেস্তরাঁর মেনুতে কী চমক থাকছে? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দুর্গাপুজোর ক’দিন অনেকেই বাড়িতে রান্নার পাট রাখেন না। ঠাকুর দেখার ফাঁকে ফাঁকে রেস্তরাঁতেই ঢুঁ মারতে পছন্দ করেন। এক দিন পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, এক দিন পরিবারের সঙ্গে, অন্য দিনগুলি প্রিয়জনের সঙ্গে ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন? তবে, কেবল ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা করলে হবে না, আগে থেকেই স্থির করে রাখুন, ঠাকুর দেখার মাঝে কোথায় খাওয়াদাওয়াটা সারবেন। গোটা শহরের মতোই পুজো উপলক্ষে সেজে উঠছে কলকাতার রেস্তরাঁগুলিও। উত্তর থেকে দক্ষিণ— শহরবাসীর রসনা তৃপ্তিতে যাতে কোনও রকম খামতি না থাকে, রেস্তরাঁগুলিতে চলছে তারই প্রস্তুতি পর্ব। কলকাতার কোন দিকে ঠাকুর দেখতে গেলে কোথায় খাবেন, রইল তার সুলুকসন্ধান।
ভেনেতো বার অ্যান্ড কিচেন: দক্ষিণের দিকে ঠাকুর দেখার ফাঁকে সাউথ সিটির এই রেস্তরাঁয় ঢুঁ মারতেই পারেন। এখানে গেলে ভেনেতো ইটালিয়ান লাভা গ্রিল, ভেনেতো ইনস্যালাটা সিজ়ার স্যালাড, উড-ফায়ারড পিৎজ়া চেখে দেখতে পারেন। শেষপাতে তিরামিসু, ডাবল চকোলেট ব্রাউনির স্বাদ উপভোগ করতে ভুলবেন না যেন। এই রেস্তরাঁয় মদ্যপানেরও ব্যবস্থা রয়েছে। মদ্যপান না করলে দু’জনের খাওয়াদাওয়ার খরচ পড়বে ১,২০০ টাকার আশপাশে।
ওয়্যার হাউস ক্যাফে: দুর্গাপুজোর ক’দিন সাউথ সিটির এই রেস্তরাঁয় পাওয়া যাবে পুজো স্পেশাল মেনু। পুজোয় ফিউশন খাবার খেতে হলে এই রেস্তরাঁটি রাখতেই পারেন পছন্দের তালিকায়। ক্র্যাব মিট অ্যান্ড ফিলাডেলফিয়া সিগার, আম-কাসুন্দি ফিশ টিক্কা, কষা মাংস পরোটা ট্যাকোজ়ের স্বাদ নিতে হলে এখানে ঢুঁ মারতেই পারেন এই রেস্তরাঁয়। এ ছাড়াও এখানকার ট্যাংরা স্টাইল চিলি পর্ক, মুর্গ অওধি কোর্মা, গ্রিল্ড জাম্বো প্রনের স্বাদও অসাধারণ। শেষপাতে নিউ ইয়র্ক চিজ় কেকের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। এদের মেনুতেও অ্যালকোহল রয়েছে। মদ্যপান না করলে খাওয়াদাওয়া করতে দু’জনের খরচ পড়বে আনুমানিক ১২০০ টাকা।
দ্য ইয়ালো স্ট্র: পুজোতেও ডায়েটের সঙ্গে আপস করতে চান না? তা হলে খাওয়াদাওয়ার জন্য আপনার গন্তব্য হতে পারে এই রেস্তরাঁ। সাউথ সিটি, অ্যাক্রোপলিস, শরৎ বোস রোড, লেক মল, আর সল্টলেকের সেক্টর ওয়ানে রয়েছে এই রেস্তরাঁর শাখা। এদের মেনুতে আপনি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রকম স্যালাড, জুস, শেক, র্যাপ। তাই স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য এই রেস্তরাঁ কিন্তু বেশ ভাল বিকল্প হতে পারে। দু’জনে ৩৫০ টাকার মধ্যেই খাওয়াদাওয়া সেরে ফেলতে পারেন এই ঠিকানায়।
পটবয়লার কফি: দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলার এই ক্যাফেতে গেলে তাদের পুজো স্পেশাল সুইট ফেস্টিভ লাতে চেখে দেখতে ভুলবেন না। এ ছাড়াও এখানে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের কফি। কফির স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি চেখে দেখতে পারেন স্পাইসি মিসো নুডলস, ম্যাগি খাউ সে। ৮৫০ টাকা খরচ করলেই দু’জনে পেট ভরে খাওয়াদাওয়া সারতে পারেন এই রেস্তরাঁয়।
আমিনিয়া: দুর্গাপুজোয় বাঙালি বিরিয়ানি খাবে না, তা আবার হয় নাকি! ভাল বিরিয়ানির স্বাদ নিতে আমিনিয়ায় ঢুঁ মারতেই পারেন। শহর জুড়ে রয়েছে আমিনিয়ার একাধিক শাখা। উত্তর থেকে দক্ষিণ, যেখানেই ঠাকুর দেখতে যান না কেন, আমিনিয়ার শাখা পেয়েই যাবেন। চিকেন কিংবা মটন বিরিয়ানি ছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের কবাব, রেজ়ালা, রোলের স্বাদ নিতে আমিনিয়ায় যেতেই পারেন। শেষপাতে ফিরনিটা না খেলে কিন্তু আফসোস করবেন। ৮০০ টাকার মধ্যেই দু’জনের খাওয়াদাওয়া হয়ে যাবে এই রেস্তরাঁয়।
পিঙ্ক সুগারস: সল্টলেক সেক্টর ওয়ানের এই রেস্তরাঁটি তাদের ইটালীয় খাবারের জন্যই বেশি জনপ্রিয়। তবে পুজোর ক’দিন এখানে পেয়ে যাবেন হায়দরাবাদি খানার স্বাদও। পুজোয় ভাল বিরিয়ানির খোঁজ করলে ঢুঁ মারতে পারেন এই ঠিকানায়। চেখে দেখতে পারেন এদের পিঙ্ক শক্তি মেনু। হায়দরাবাদি বিরিয়ানি, স্যালাড, রায়তা, সালান আর গুলাব জামুন পেয়ে যাবেন একই সঙ্গে। পুজোয় ইটালিয়ান খাবারের সঙ্গে ভারতীয় খাবারের মিশেলেই জমে উঠতে পারে ভোজ। এখানে দু’জনের খাওয়ার খরচ পড়বে প্রায় ১২০০ টাকা।
লর্ড অফ দ্য ড্রিঙ্কস: পুজোয় বিরিয়ানি, চাইনিজ ছেড়ে একটু স্বাদবদল করতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন সাউথ সিটি মলের এই রেস্তরাঁয়। চিলি চিকেন টোস্ট, কাফির লাইম ফ্রায়েড ফিশ, ম্যাপল চিকেন ললিপপের স্বাদ পেতে পারেন এখানে। সঙ্গে অবশ্য রকমারি কবাবের স্বাদও উপভোগ করতে পারবেন এই ঠিকানায়। ১২০০ টাকার আশপাশেই হয়ে যাবে খাওয়াদাওয়া। ইচ্ছে করলে সুরাপানও করতে পারেন।
ড্রাঙ্কেন টেডি: খাঁটি বাঙালি খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন এলগিন রোডের এই রেস্তরাঁয়। ‘জলখাবার’-এ পেয়ে যাবেন আম-আদা পনির টিক্কা, ধনেপাতা-কাঁচালঙ্কা চিকেন টিক্কা, মোচার চপ, ফিশ ফ্রাই। ‘প্রধান পদ’-এ থাকছে কড়াইশুঁটির কচুরি, আলুর দম, ভাত, ভেটকি পাতুরি, মটন কষা, লুচি। শেষপাতে ‘মিষ্টি মুখ’ করতে পারেন জলভরা সন্দেশ, ছানার পায়েস, বেক্ড রসগোল্লা দিয়ে। ১২০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে খানাপিনা।
দ্য গার্ডেন লাউঞ্জ: সেক্টর ৫-এর এই রেস্তরাঁয় আপনি সব রকম খাবারদাবারই পেয়ে যাবেন। বিরিয়ানি, কবাব সিজ়লার, চিকেন বাটার মশালা, কড়াই চিকেন ছাড়াও মেনুতে থাকছে একাধিক পদ। এখানকার চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল খাবারের স্বাদও নিতে পারেন। ৮০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে ভূরিভোজ।
চাউম্যান: ভাল চাইনিজ় খেতে হলে পুজোয় চাউম্যানে ঢুঁ মারতেই পারেন। হোল ক্র্যাব, পর্ক রিব্স, চিলি ল্যাম্ব, জাম্বো প্রন ছাড়াও এদের পুজো স্পেশাল মেনুতে থাকছে চাউমিন, ফ্রায়েড রাইসের একাধিক পদ। পুজোয় ২৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন বিশেষ চাইনিজ কম্বো। পুজোর সময় চাউম্যান অ্যাপ দিয়ে বুকিং করলে ২৫০ টাকার মতো বিশেষ ছাড় পেয়ে যাবেন। চাউম্যান পে দিয়ে রেস্তরাঁয় টাকা দিলে পেয়ে যাবেন ১৫ শতাংশ মতো ছাড়। কলকাতা ২১টি শাখা ছাড়াও দিল্লি-এনসিআর, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুতেও রয়েছে এদের রেস্তরাঁ।
বাবু কালচার: পুজোর সময় বাঙালি খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন বাবু কালচার রেস্তরাঁয়। পুজোর সময় এরা আয়োজন করেছে বিশেষ ভেজ ও নন ভেজ থালির। ১৩৯৯ টাকার নন ভেজ থালিতে পেয়ে যাবেন চিংড়ি, ইলিশ, পাঁঠার মাংস। ১০৪৯ টাকার নন ভেজ থালিতে পেয়ে যাবেন চিংড়ি, পাবদা, কষা মাংস। ভেজ থালির দাম ৬৯৯ টাকা, থালিতে থাকবে ছানার কোপ্তা, রাজশাহী পটল, ফুলকপির রোস্ট, ধোঁকার ডালনা, আরও কত কী! গড়িয়াহাট, সোদপুর, নরেন্দ্রপুরে রয়েছে এই রেস্তরাঁ।