প্রভাব পড়তে শুরু করল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে। —ফাইল চিত্র।
রফতানি বাণিজ্যে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থির হতেই। এ বার সেই প্রভাব পড়তে শুরু করল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে।
আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত অগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেও পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য বাণিজ্য কার্যত স্বাভাবিক ছিল। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রফতানিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রফতানি (শ্যাসি-সহ) হয়েছিল গড়ে ৪৫০ ট্রাক। এখন ৩৫০-৪০০ ট্রাক।’’
গত বছর পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্টে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, ২০১৬-১৭ সালে ওই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য হয়েছিল ১৮,০০০ কোটি টাকার। ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩০,৫০০ কোটি। এই পড়শি দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যের ৭০ শতাংশই হয় এখান দিয়ে।
গুরুত্ব এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন পেট্রাপোল দিয়ে কমছে রফতানি?
বাণিজ্যমহলের দাবি, পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হয় দু’দেশের ব্যাঙ্ক মারফত। কিন্তু বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই এ দেশের পণ্য রফতানিকারীরা সে দেশে পাঠানো পণ্যের দাম ঠিক মতো পাওয়া নিয়ে সংশয়ী। ভারতীয় পণ্য রফতানিকারী পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রফতানি কমার কারণ বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং স্থায়ী সরকার না থাকা। আগে আমাদের ভরসা ছিল, পণ্য পাঠিয়ে পেমেন্ট পেতে অসুবিধা হলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তা পেয়ে যাব। স্থায়ী সরকার না থাকায় সেই সুযোগ নেই। আমাদের আশঙ্কা আগামী দিনে রফতানি আরও কমবে।’’ রফতানিকারীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হারে শুল্কও বাড়িয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে ফল আমদানি করলে নির্দিষ্ট যে পরিমাণের উপর সে দেশের সরকারকে ২২ লক্ষ টাকা আমদানি শুল্ক দিতে হত, তা-ই এখন হয়েছে প্রায় ২৯ লক্ষ। ফলে পড়শি দেশের আমদানিকারীরা এখান থেকে ফল কেনার উৎসাহ হারাচ্ছেন।’’ অনেকেই মনে করছেন, আমদানি কর বাড়িয়ে বাঁকা পথে ইউনূস সরকার ভারতীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিতে চাইছে।