গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সাদা অথবা কালো, একটা সময়ে পুরুষের পরণে এই দুই রঙের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তবে যুগ বদলেছে। বদল এসেছে পছন্দে। বদলে গিয়েছে রুচি, সংস্কৃতি, জীবনধারা। সাদা অথবা কালো পোশাকের প্রতি পুরুষের প্রেম এখনও অটুট আছে। সেই সঙ্গে পছন্দের তালিকায় জুড়েছে অন্য রংও। বাহারি ধরন আর রঙের পোশাক যে শুধু মেয়েদের জন্য তৈরি হয় না, তা প্রমাণিত। সাজগোজের ময়দানে নারী এবং পুরুষ কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ে না। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! বলিউডের নায়ক থেকে পাশের বাড়ির ছেলেটি— সাজপোশাক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে অনেকেই পছন্দ করেন। একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে পোশাকের রং নিয়েও পালাবদল চলতে থাকে। অনেকেই পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে ‘ট্রেন্ড’ অনুসরণ করেন। যা বিভিন্ন সময় এবং উৎসব বিশেষে বদলাতে থাকে। এই যেমন দুর্গোৎসব আসতে বাকি আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দিন। পুজো মানেই নিজেকে নানা রঙে নতুন করে সাজানো।
এ বছর পুজোয় কোন রঙের পোশাকে ঝুঁকেছেন পুরুষেরা? পোশাকশিল্পী রুদ্র সাহা বলেন, ‘‘সবুজ রঙের চাহিদা এ বছর খুব বেশি। আমার টলিউডের তারকা বন্ধুরাও সবুজ পোশাক তৈরি করে দেওয়ার বরাত দিয়েছেন আমাকে। বিশেষ করে কালচে সবুজ বেশ চলছে। তবে সবুজের অন্য শেড্সও দারুণ পছন্দ করছেন পুরুষেরা।’’ পুজো মানেই সাবেকিয়ানা আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। তবে রঙেও সেই ধারা বজায় রাখতে পারলে তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না বলে মনে করেন রুদ্র। অন্য রঙের চাহিদা যতই থাক, লাল রঙের পাঞ্জাবি এবং সাদা ধুতি কখনও পুরনো হবে না।
সে কথা বিশ্বাস করেন শহরের অন্য এক পোশাকশিল্পী নীল সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর রং হল লাল এবং সাদা। তবে তার সঙ্গে সোনালি রঙের মিশেল মন্দ হবে না। তা ছাড়াও ট্রেন্ডে গা ভাসাতে চাইলে মেটালিক প্যাস্টেল কিংবা মাল্টিকালার বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও গাঢ় সবুজ কিংবা পান্নার রংও এ বছরের সাজের অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে।’’ শহরের পোশাকশিল্পীরা ‘ট্রেন্ডিং’ রং হিসাবে সবুজকে এগিয়ে রাখছেন বটে। তবে জাতীয়স্তরের বিভিন্ন সমীক্ষা অন্য কথা বলছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে বেশ কিছু রঙের কথা, যেগুলি শরৎ-সাজের রং হিসাবে ধরা হচ্ছে। তালিকায় কোন কোন রং রয়েছে?
ঘিয়ে
লিনেন শার্ট কিংবা সিল্কের পাঞ্জাবিতে অফ-হোয়াইট রং খুব ভাল যায়। দিন কয়েক আগেই সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে সস্ত্রীক পুজো দিতে গিয়েছিলেন রণবীর সিংহ। সে দিন রণবীরের পরনেও ছিল ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি। শরতের আবহাওয়া এমনিতে মনোরম থাকে। তবে খুব বেশি গাঢ় রং অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। যাতে উদ্যাপন আর হুল্লোড়েও যাতে স্বস্তি বজায় থাকে, সে ক্ষেত্রে এই রং বেছে নিতে পারেন পুরুষেরা।
ক্রিম রঙা
ক্রিম কিংবা বেজ রঙের পোশাকের প্রবল চাহিদা রয়েছে নারী-পুরষ উভয়েরই। এই রঙের প্রতি কমবয়সিদের ঝোঁক বেশি। মধ্যবয়স কিংবা প্রৌঢ়ত্বেও এই রং চোখ বন্ধ করে বেছে নিতে পারেন পুরুষেরা। ক্রিম রঙা কুর্তার সঙ্গে কালো জিন্স কিংবা পাটিয়ালাও মন্দ দেখাবে না। আবার বেজ রঙের ছোঁয়া আছে এমন শার্টেও নজর কাড়তে পারেন পুরুষেরা।
ধূসর
ধূসর রঙের চাহিদা সব সময়েই রয়েছে। এই রং পুরুষের ব্যক্তিত্বে আলাদা মাত্রা আনে। উৎসব মানেই যে শুধু গাঢ় রঙের উদ্যাপন, তা কিন্তু নয়। ধূসরতাও আলো-উৎসব, আনন্দের কথা বলে। ধূসর রঙের টি-শার্ট হোক কিংবা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি, সপ্রতিভ দেখায় পুরুষকে।
মেরুন
লাল, মেরুন কিংবা কালো রঙের চাহিদাকে কোনও নির্দিষ্ট সময়পর্বে ধরা যায় না। কারণ সারা বছরই এই রংগুলির বিপুল চাহিদা থাকে। অনেকেরই ধারণা, মেরুন রঙের সঙ্গে নারীর সম্পর্ক সবচেয়ে নিবি়ড়। তবে রং নিয়ে এ বছর একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইলে মেরুন রং বেছে নিতে পারেন। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় মেরুন রঙের গোলগলা টি-শার্ট কিংবা অষ্টমীর সকালে হাঁটুঝুল পাঞ্জাবি ভিড়ের মাঝে আলাদা করে চেনাবে পুরুষকে।
ধূসর আকাশি
শরতের আকাশের রং যদি পোশাকে থাকে, কেমন হয়? আকাশি রঙের সঙ্গে ধূসরতার মিশেল এ বছরের অন্যতম ট্রেন্ডিং রং। এই ধরনের রঙের চাহিদা আগের তুলনায় এখন বেড়েছে। পোশাকে রঙের কারিকুরি যাঁদের বিশেষ পছন্দ নয়, এই রঙের পোশাক তাঁরা বেছে নিতেই পারেন। সপ্তমীর সন্ধ্যা হোক কিংবা দশমীর সকাল ধূসর আকাশি রঙে নিজেকে সাজালে নজর কা়ড়বেন পুরুষেরা।