গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অন্ধকার সিনেমা হলে বসে রোম্যান্টিক দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার বদলে নিজেকে এবং নিজের সঙ্গীকে কল্পনা করার রোগ বহু পুরনো। নায়ক-নায়িকার প্রেম ভাঙার দৃশ্য দেখে নিজের পুরনো ক্ষত দগদগে হয়ে ওঠার উদাহরণও রয়েছে অনেক। বলিউড ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তেমন পোশাক বানানোর চলের ইতিহাসও লম্বা। তবে মানুষের মনে চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে গেঁথে থাকত সংলাপ, গান, বিশেষ কিছু দৃশ্য। এখন যুগ বদলেছে। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায় রাহুল, তুম নেহি সমঝোগে’ বলা ‘অঞ্জলি’রা এখন সংলাপের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন নায়ক-নায়িকাদের লুকে। আবার ‘রাজ মলহোত্র’-র মতো মনে মনে ‘অগর ইয়ে প্যায়ার করতি হে তো ইয়ে পলটকে দেখেগি... পলট... পলট’ আওড়ানো পুরুষদের মনে শুধু ‘সিমরন’-এর চোখের ভাষা নয়, গেঁথে থাকে সাজপোশাকও। অনেক সময় ছবি দেখার আগেই গানের দৃশ্য আর বিভিন্ন রিল দেখেই কোনও চরিত্রের সাজ জনপ্রিয় হয়ে যায়। তাই ‘অ্যানিম্যাল’ না দেখলেও গীতাঞ্জলির মতো লাল পাড়-সাদা দক্ষিণী শাড়ির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন পাড়ার ‘রশ্মিকারা’। এ বছর বেশ কিছু বলিউড চরিত্রের সাজ নজর কেড়েছিল আলাদা করে। তেমন পাঁচ চরিত্রকে বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন। যাঁদের লুক, শরীরী হিল্লোল— বছর জুড়ে রাজ করল সাধারণ মানুষের মনে।
১) রানি চট্টোপাধ্যায়
কে: আলিয়া ভট্ট
ছবি: রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি
ইনস্টাতে রিল হোক বা মঞ্চে নৃত্য অনুষ্ঠান, ‘হোয়াট ঝুমকা’ গানের তালে কোমর দোলাননি, এমন কমবয়সির সংখ্যা কম। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’-র বাঙালি সাংবাদিক রানি চট্টোপাধ্যায় অর্থাৎ আলিয়া ভট্টের নাচের পাশাপাশি তাঁর সাজপোশাকও মনে ধরেছিল সকলের। ‘অমব্রে’ বা ডুয়াল টোনের শিফন শাড়ি দেখলে প্রথমেই রানি চট্টোপাধ্যায়েরর কথা মাথায় আসে। গড়িয়াহাট, বড়বাজার থেকে অনলাইন শপিং সাইট— সর্বত্রই এখন রংবেরঙের শিফন শাড়ির রমরমা। আলিয়ার মতো কানের ঝুমকো, নাকের ঝুটো নাকছাবি বিক্রি হয়েছে দেদার। মোট কথা বাঙালি তরুণীদের মনে রানির চরিত্রটি পাকা হয় উঠেছিল।
২) রুবিনা মহসিন
কে: দীপিকা পাড়ুকোন
ছবি: পাঠান
‘পাঠান’ ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোনকে দেখা গিয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রাক্তন এজেন্ট হিসাবে। অ্যাকশনধর্মী ছবিতে দীপিকার সুইমস্যুট বা বিকিনি নারী-পুরুষ সকলের মনেই দোলা দিয়েছে। সমুদ্রসৈকতে রৌদ্রস্নানই নয়, হিন্দি ছবিতেও যে ছক ভেঙে বিকিনি পরে যে অ্যাকশন দৃশ্যে মারপিটও করা যায়, তা-ই দেখিয়েছিল রুবিনা। ‘রুবিনা’র বিকিনির রং গেরুয়া হওয়ায় বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। সেন্সরের কল্যাণে সে সব দৃশ্যই হলে বসে উপভোগ করেছিলেন দর্শক।
৩) পাঠান
কে: শাহরুখ খান
ছবি: পাঠান
শুধু ফ্যাশন নয়, শরীরচর্চার ক্ষেত্রেও বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। এই তালিকায় হৃতিক রোশন, সলমন খান, জন আব্রাহামের মতো অভিনেতাদের নাম প্রথম দিকে থাকলেও এ বছর সেই তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন শাহরুখ খান। চরিত্রের প্রয়োজনে যে কোনও ভাবে নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে নিতে প্রস্তুত তিনি। ‘পাঠান’-এ ৬০ ছুঁইছুঁই অভিনেতার শরীরী ভাঁজ দেখে আট থেকে আশি সকলের মনেই দোলা লেগেছিল। টানটান এইট প্যাক্সের সঙ্গে কাঁধ ছোঁয়া উস্কোখুস্কো চুলে উঁচু করে বাঁধা নট দেখে দর্শক বোধ হয় ভুলেই যেতে বসেছিলেন শাহরুখের ‘লাভার বয়’ ইমেজ। মেয়েদের মনে হিল্লোল তুলতে বয়স যে কোনও ফ্যাক্টর নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছিল পাঠান।
৪) রকি
কে: রণবীর সিংহ
ছবি: রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি
‘রকি অউর রানি...’ ছবিতে রঙিন পঞ্জাবি মুন্ডা রকি অর্থাৎ অভিনেতা রণবীর সিংহকে বহু দিন মনে থাকবে। নাচগান, অভিনয় ছাড়াও তাঁর রঙিন সাজপোশাক নজর কেড়েছিল সকলের। ছবির বিভিন্ন দৃশ্যে মানানসই পোশাক পরিকল্পনার দায়িত্ব কস্টিউম ডিরেক্টরের হলেও পোশাক ‘ক্যারি’ করার দক্ষতা কিন্তু রণবীরের। কখনও চকমকে আঁটসাঁট পোশাকে পশ্চিমি নাচ, আবার কখনও লম্বা ঝুলের আংগারখা পরে কত্থক— সবেতেই তিনি সাবলীল। নিওন রঙের পোশাক বা বুকখোলা চকচকে গোলাপি জ্যাকেট, ছবির সব লুকই চমকপ্রদ।
৫) ভেরোনিকা লজ
কে: সুহানা খান
ছবি: দি আর্চিস
বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের কন্যা তিনি। তবে অভিনেত্রী হিসাবে সুহানা খানের আত্মপ্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করা আর হাতেনাতে কাজ করা— দুটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। অভিনেত্রী হিসাবে আনকোরা হলেও দর্শকের মনে ধরেছে ভেরোনিকার সাজপোশাক। ‘জেনজ়ি’ হয়ে ষাটের দশকের আদবকায়দা রপ্ত করা সহজ ছিল না। কখনও ফ্রিল দেওয়া হাঁটু ঝুলের ফ্রক, মাথায় মানানসই ফিতে। আবার কখনও ববি প্রিন্টের টপ-স্কার্ট কিংবা টিউনিক পরিহিতা ‘ভেরোনিকা’কে দেখে ষাটের দশকের রেট্রো স্টাইলের জন্য মনকেমন হতেই পারে।