পুজোর ভিড়ে নজর কাড়তে আলিয়া, কৃতির মতো কুর্তিতে নিজেকে সাজান। ছবি: সংগৃহীত।
পুজো আসতে এখনও মাস খানেক বাকি। অথচ দোকানে দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। এক ঝলক দেখলে মনে হবে যেন, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। পুজোর সাজে কোনও খামতি রাখতে চান না বলেই হাতে সময় নিয়ে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন অনেকেই। পুজোর সাজ মানেই অনেকের কাছে ব্যাগভর্তি করে শাড়ি কেনা। পুজোর চারটি দিন শাড়ি পরতেই পছন্দ করেন অনেকে। তবে পুজোর সকাল-বিকেল শাড়ি পরা বেশ ঝক্কির বিষয়। সপ্তমীর সকালে হঠাৎ প্রিয়জনের ডাক পড়লে শাড়ি পরতে গিয়ে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। বরং চটজলদি পরে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যায়, তেমন কিছু পোশাকও কিন্তু সংগ্রহে রাখতে পারেন। পুজোর বাজার করতে গিয়ে তাই বাহারি শাড়ির পাশাপাশি, কিছু কুর্তিও কিনে নিতে পারেন। কুর্তি মানেই যে তা দামি হতে হবে, তার কোনও মানে নেই। ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করলেই কিন্তু নতুন কুর্তি হতে পারে। ৫০০ টাকার মধ্যে কী কী ধরনের কুর্তি পাবেন? কোথা থেকেই বা কিনবেন? রইল তার খোঁজ।
চিকনকারি
কম বয়সিদের মধ্যে চিকনের কাজ করা পোশাকের প্রতি বেশ প্রেম রয়েছে। পুজোয় কিন্তু একটা চিকনকারির পোশাক কিনতে পারেন। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগনি— চিকনকারি কুর্তি পেয়ে যাবেন নানা রঙে। পরলে দেখতেও মন্দ লাগে না। তা ছাড়া, চিকনকারি কুর্তির সঙ্গে সব সময়ে লেগিংস পরতে হবে, তার কোনও মানে নেই। লেগিংস ছাড়াও পালাজ়ো, সারারা এমনকি, জিনসের সঙ্গেও পরতে পারেন। চিকনকারি কুর্তির সঙ্গে কানে ভারী একটা দুল, হালকা মেক আপ, হাতে সরু সরু চুড়ি— পুজোর সকালে এমন করে সেজে মণ্ডপে সকলের নজর যে আপনার দিকেই থাকবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হগ মার্কেট আর নিউ মার্কেটের ভিতরে চিকনকারি কুর্তির বেশ কিছু দোকান রয়েছে। তবে সেগুলির দাম খানিকটা বেশি। তার চেয়ে শ্রীরাম আর্কেডের সামনে কিছু অস্থায়ী দোকানে চিকনকারি কুর্তি পাওয়া যায়। দরদাম করে কিনলে ৪০০-৪৫০ টাকা পড়বে। শুধু ধর্মতলা নয়, গড়িয়াহাটেও ঢালাও বিক্রি হয় এ ধরনের কুর্তি। তবে সেখানে এক দাম ৫০০ টাকা। ৫০০ টাকার মধ্যে চিকনকারি কিনতে এক বার ঢুঁ মারতে পারেন ব়়ড়বাজারেও। নুরমাল লোহিয়া লেনে চিকনকারির পোশাকের হোলসেল দোকান আছে। সেখানে অনেক কম দামে চিকনকারি কুর্তি পাবেন।
ইক্কত
ইক্কত এখন ফ্যাশনে ‘ইন’। ইক্কতের চাহিদা চিরন্তন। এই ধরনের কাপড়ের প্রতি ভালবাসা রয়েছে কম বয়সিদের মধ্যেও। ইক্কতের শাড়ি, ব্লাউজ অনেকের কাছেই রয়েছে। পুজোর সকালে সাবেকি সাজে সেজে উঠতে চাইলে একটা ইক্কতের কুর্তি কিনতে পারেন। ইক্কত প্রাণের আরাম, মনের আরাম। পরলে দেখতেও সুন্দর লাগে। ইক্কতের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কুর্তি পাবেন। হাঁটু ঝুল, ফিশ কাট, রুমাল কাট, স্ট্রেট লাইন— ইক্কতের কুর্তির ক্ষেত্রে নকশায় বৈচিত্র্য আছে। এ ছাড়া, ইক্কতের কাপড় দিয়ে তৈরি আনারকলিও বেশ সু্ন্দর লাগে। কম দামে ভাল মানের ইক্কতের কুর্তি পাবেন দক্ষিণাপনে। বিশ্ব বাংলার দোকানটি পিছনে ফেলে সামনের দিকে একটু হাঁটলেই বাঁ দিকে দু’-একটি দোকান রয়েছে। বেশ মনকাড়া রঙের ইক্কতের কুর্তি ৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন। এ ছাড়াও বেশ ভাল ভাল ইক্কতের কুর্তি অবিশ্বাস্য দামে পাবেন অনলাইন অ্যাপ মিশোতে। কোনওটির দাম ৩৪৩ তো, কোনওটি আবার ৪১৫ টাকা। মিন্ত্রাতেও বেশ ‘ফ্যাশনেবল’ ইক্কতের কুর্তি পাবেন। দামের খানিক হেরফের আছে। তবে ৫০০ টাকার মধ্যে যে নেই, তা নয়। একটু খুঁজতে হবে। তা না হলে দাম ফিল্টার করে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই।
বাটিক
শরৎকালেও যে কপালে ঘামের রেখা দেখা যাবে, তার পূর্বাভাস ইতিমধ্যেই দিয়েছে হাওয়া অফিস। তাই পুজোর হুল্লোড়ে নিজেকে স্বস্তিতে রাখতে বাটিকের কাজ করা সুতির কুর্তি কিনে রাখতে পারেন। ইদানীং বাটিকের কাজেও বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। বাটিকের সঙ্গে ব্লক, বাঁধনি মিশিয়ে নতুন নকশা তৈরি হচ্ছে। চাইলে সঙ্গে একটা ওড়না নিতে পারেন। ‘ফিশ কাট’ ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কুর্তির নীচটা মাছের লেজের মতো বলে এমন নাম। অনেকে এ-লাইনও বলে থাকেন। বাটিকের কাজ করা এ লাইন কুর্তিও কিন্তু বেশ উঠেছে বাজারে। লেগিংস, পাটিয়ালার সঙ্গে বেশ ভাল দেখাবে। সঙ্গে জিন্স পরলেও মন্দ দেখাবে না। বাটিকের কাজ করা কুর্তি বিভিন্ন বুটিকে দাম বেশি পড়বে। তবে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে চাইলে হাতিবাগানে যেতে পারেন। হাতিবাগানের সুভাষ কর্নারে বাটিকের কুর্তি ৫০০ টাকার মধ্যেই পাবেন। শ্যামবাজার মোড় থেকে স্টার থিয়েটারের দিকে যাওয়ার পথে বাঁ দিকে সুতির পোশাকের কয়েকটি দোকান রয়েছে। সেখানেও বাটিকের কুর্তির দাম ওই ৫০০ টাকার ধার-কাছেই। তা ছাড়া, অনলাইন তো আছেই। গোটা কলকাতা চষে ফেলেও যদি ৫০০ টাকায় বাটিক না পান, অনলাইনে ঠিক পেয়ে যাবেন। অ্যামাজ়নে বাটিকের কুর্তির দাম ৩৯৯ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। মিশোতে বাটিকের কুর্তির দাম আরও কম। ৩৬৮, ৪২৮, ৪৪০ টাকা দামে বাটিকের ভাল ভাল কুর্তি পাওয়া যাবে।
সেমি মোডাল
এ বার পুজোয় মোডাল সিল্ক শাড়ির বেশ চাহিদা। তসর, কাঁথা স্টিচের মতো দামি শাড়ির পাশাপাশি একটি সেমি মোডালও কিনছেন অনেকেই। এই কাপড়ের কুর্তিও কিন্তু বেশ সুন্দর। ৫০০ টাকার মধ্যে একেবারে আসল মোডালের কুর্তি পাওয়া সম্ভব নয়। আসল না হলেও সেমি মোডালের কুর্তি কিন্তু সাধ্যের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। পুজোয় শপিং করবেন আর একটিও সেমি মোডালের কুর্তি কিনবেন না, তা কী করে হয়! সেমি মোডালের মধ্যে বেশির ভাগ কুর্তিই স্ট্রেট লাইন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসিমেট্রিক্যালও জায়গা করে নিয়েছে। সুতির উপর সেমি মোডালের কাজ করা কুর্তির দাম অনলাইনে ৫০০ টাকার ধার-কাছেই। কিছু কিছু জায়গায় ৫০০ টাকার নীচেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই দামে দোকান থেকে সেমি মোডাল কিনতে গেলে যেতে হবে বড়বাজারে। সেখানে কুর্তির কিছু হোলসেল দোকান আছে। ৫০০ টাকায় সেমি মোডাল ঘরে আনতে গেলে বড়বাজারই অন্যতম ভরসা। এ ছাড়া, বাজেটের মধ্যে সেমি মোডালের কুর্তি পাবেন বিয়িং গর্জাস, ফ্যাশন সোয়াপের মতো ফেসবুক গ্রুপগুলিতেও।
সুতির উপর সুতোর কাজ
সুতির উপর সুতোর কাজ করা কুর্তি কমদামে কিনতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ট্রেন্ডস, জুডিয়ো, সিটি মার্টের মতো কিছু শপিং মলে। অনেক সময়ে পোশাকের নকশা পছন্দ হয়, তো দাম সাধ্যের বাইরে চলে যায়। আবার দাম সাধ্যের মধ্যে হলেও পোশাকের নকশা পছন্দ হয় না। মনের মতো কুর্তি মনের মতো দামে পেতে হলে এই জায়গাগুলিতে এক বার ঢুঁ দিতে পারেন। ট্রেন্ডস্-এ যেমন ৩৯৯, ৪৯৯ দামে ভাল ভাল কুর্তি পাবেন। সিটি মার্টেও কুর্তির দাম ৫০০ টাকার আশপাশে। তা ছাড়া পুজো উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ও থাকে। অনেক সময়ে দু’টি কুর্তি একসঙ্গে কিনলে দাম অনেক কম পড়ে। জুডিয়োতেও ৫০০-র মধ্যে নানা ধরনের কুর্তি পাবেন। সুতির বিভিন্ন নকশা করা কুর্তি অনলাইনে অনেক সস্তায় পাবেন। অনলাইনে অ্যামাজ়ন, মিশো তো আছেই, এ ছাড়া লুকস গুড, স্পর্শ, অজিয়ো-র মতো কিছু অনলাইন স্টোরেও ৫০০ টাকার মধ্যে মনপসন্দ কুর্তি পেয়ে যাবেন।