মহুয়ার সাজের সাত-সতেরো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
মহুয়া মৈত্রের ঠোঁটকাটা বক্তব্য যেমন বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তেমনই তৃণমূল নেত্রীর সাজ থেকেছে আলোচনার কেন্দ্রে। সংসদেই হোক কিংবা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, পাড়ায় পাড়ায় ভোট প্রচার হোক কিংবা জনসভা— মহুয়ার সাজ বরাবরই হয় বাকিদের থেকে আলাদা। ব্রিগেডের ময়দানে এ বছরের লোকসভা নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে মহুয়ার নাম যে দিন ঘোষণা করে তৃণমূল, সে দিনও নজর ফেরানো যায়নি মহুয়ার দিক থেকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটার সময়ে তাবড় নায়িকাদের ভিড়েও হারিয়ে যায়নি মহুয়ার উপস্থিতির দাপট। মহুয়ার পরনে ছিল হালকা গোলাপি রঙের চেক লিনেন শাড়ি, খোলা চুল, চোখে রোদচশমা, বড় টিপ! নেত্রীর সাজ দেখে দূর থেকেও তাঁকে চিনে নেওয়া কঠিন ছিল না।
আনন্দবাজার অনলাইন নজর রেখেছিল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মহুয়া মৈত্রের সাজগোজের উপর। কোন ৫ বিষয় মহুয়ার সাজকে আলাদা করেছে আর পাঁচ জন প্রার্থীর সাজ থেকে?
বাঙালি
অন্য সময়ে পশ্চিমি পোশাকে দেখা গেলেও রাজনীতির ময়দানে মহুয়ার সাজ কিন্তু একেবারে বাঙালি। এই গরমে নির্বাচনের প্রচারে মহুয়াকে দেখা যায় শুধুই শাড়িতে। নির্বাচনী কেন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকেই ২০২৪-এর লোকসভার প্রচার শুরু করেন মমতা। সে দিন মহুয়ার পরনে ছিল শাড়ি, বড় লাল টিপ, লালচে লিপস্টিক, চোখে কাজল আর কানে ছোট্ট একটা হিরের দুল। আমেরিকা- ফেরত কর্পোরেট কর্ত্রী কিন্তু তখন একেবারে বাঙালি আধুনিকা।
হ্যান্ডলুম
শাড়ি তো পরেনই, তবে যে সে নয়। বাংলার হ্যান্ডলুম শাড়ির প্রতি মহুয়ার আলাদা টানই প্রকাশ পায়। সংসদ থেকে পার্টি অফিস, কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান থেকে জনসভা মহুয়ার পরনে দেখা গিয়েছে নানা রঙের টাঙাইল শাড়ি। এ বারের নির্বাচনী প্রচারেও বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডলুম শাড়িতে নজর কেড়েছেন তিনি। গরম যতই হোক না কেন, সুন্দর প্লিট করা আঁচল, সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ় বা সাদা শার্ট— মহুয়ার সাজপোশাকে এতটুকুও খুঁত বার করা যাবে না। কখনও সাধারণ হ্যান্ডলুম, কখনও আবার জামদানির নকশা করা শাড়ি— এক এক দিনের প্রচারে মহুয়াকে দেখা যাচ্ছে এক এক অবতারে। একই শাড়ি দু’দিন পরছেন না তিনি, রঙের সঙ্গে শাড়ির নকশাও বদলাচ্ছে প্রতি দিন। কোনও দিন ইক্কত, কোনও দিন আবার হালকা সোনালি পাড়ের একরঙা শাড়িতেই নজর কাড়ছেন নেত্রী।
রং
প্রচারে এক এক দিন এক এক রঙের শাড়িতে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছেন মহুয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একরঙা শাড়িতেই রাজনীতির ময়দানে মহুয়ার দাপট দেখা যায়। তবে দাপট দেখাতে গিয়ে কিন্তু কালো কিংবা গাঢ় রং বাছাই করছেন না নেত্রী। গরমের দাপটকেও যে উপেক্ষা করলে চলবে না। তীব্র গরমের সঙ্গে মানানসই রঙের শাড়ি বাছাই করছেন মহুয়া। আকাশি-গোলাপির মতো হালকা রং কিংবা হলুদ-ক্রিমের মতো প্যাস্টেল শেডের শাড়িতে বেশি দেখা যাচ্ছে মহুয়াকে। কখনও উজ্জ্বল হলুদ, কখনও নীল, কখনও পেস্তা সবুজ, কখনও আবার গোলাপি রঙের শাড়ি জড়িয়ে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন কৃষ্ণনগরের ‘মহুয়াদি’। তাপপ্রবাহের মাঝে এ ভাবেই ‘কুল’ আছেন মহুয়া।
রোদচশমা
এক এক দিন চোখে এক একটি রোদচশমা! হুডখোলা গাড়িতে চেপে কৃষ্ণনগরের অলিগলিতে ছবি উঠছে সে সব পরেই। মহুয়ার প্রচারে এখনও কোনও বড় নায়ক-নায়িকাকে দেখা যায়নি। মহুয়া একাই একশো। আর রোদচশমাটি তাঁর দিনের প্রচারের নিত্যসঙ্গী। ছায়ায় গেলেই রোদচশমাটি মাথায় উঠে যাচ্ছে, আবার সময় বুঝেই চোখে পরে নিচ্ছেন। এত দিনে বোঝা গিয়েছে, রোদচশমার ক্ষেত্রে বড় ফ্রেমই পছন্দ করেন মহুয়া। রং বদলালেও ফ্রেমের ধাঁচটা কিন্তু একই থাকছে। গলায় ফুলের মালা, চোখে রোদচশমা আর একগাল হাসিতেই ভোটারদের মন জয় করছেন।
ঘোমটা
একরঙা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, চোখে রোদচশমা— মহুয়ার এই সাজ মনে করিয়ে দিচ্ছে আর এক রাজনীতিবিদের কথা। তৃণমূলের নেত্রীর ফ্যাশনে কোথাও যেন ধরা পড়ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোঁয়া। তিনিও তো এমন ভাবেই ঘোমটা দিয়ে প্রচারে বেরোতেন। বড় ফ্রেমের চশমা কিংবা সানগ্লাস পরতেন। প্রচারে বেরোলে অনুরাগীরা ভালবেসে গলায় যে ফুলের মালা পরিয়ে দিতেন, সযত্নে তা পরেই বাকি প্রচারটা সারতেন। মহুয়ার সাজ সে কালের কংগ্রেস নেত্রীর কথা মনে করাচ্ছে।