পুজোয় সাবেকি সাজের পাশাপাশি পশ্চিমী পোশাকও কিন্তু সমানতালে পাল্লা দেয়। ছবি- সংগৃহীত
পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা। বাতাসে পুজোর গন্ধ। হাতে আর মাত্র কিছু দিন। তার পরে মা আসছেন। চারিদিকে সাজো সাজো রব। পুজোর বাজারও চলছে জোরকদমে।
ঘরে ঘরে চলছে দুর্গা আবাহনের প্রস্তুতি। শহর সেজে উঠছে উৎসবের রোশনাইয়ে। সেই সঙ্গে জোর কদমে চলছে পুজোর জন্য নিজেকে সাজিয়ে তোলার প্রস্তুতি। শহরের ফুটপাথ থেকে বিলাসবহুল শপিং মল— পুজোর কেনাকাটায় থিকথিক করছে ভিড়।
বিগত দু’বছরে অতিমারির কারণে উৎসবের জৌলুসটাই কেমন যেন ম্লান হয়ে গিয়েছিল। পুজোর দিনগুলিতেও অনেককেই কাটাতে হয়েছিল নিভৃতবাসে। উৎসবের আলো থেকে দূরে ছিলেন— এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। এ বছর কিছুটা হলেও কোভিড স্থিতিশীল। তাই প্রাণখুলে আনন্দ করার জন্য তৈরি হচ্ছেন সকলে।
পুজো মানেই জমিয়ে সাজগোজ। অষ্টমীর ধুনুচি নাচ কিংবা নবমীর সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা— রকমারি পোশাকের বাহারে পুজো যেন অন্য রূপ পায়। পুজোয় সাবেকি সাজের পাশাপাশি পশ্চিমী পোশাকও কিন্তু সমানতালে পাল্লা দেয়। অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া ছাড়া পুজোর বাকি দিনগুলিতে শাড়ির বদলে কেতাদুরস্ত নানা ধরনের পোশাক পরতে অনেকে পছন্দ করেন। কারণ শাড়ি পরলেই তা সামলানো নিয়ে মাথায় আলাদা একটা চিন্তা থাকে। পশ্চিমী পোশাকের ক্ষেত্রে সে সবের ঝক্কি নেই। দেখতেও সপ্রতিভ লাগে। এ বার পুজোর ফ্যাশানে কী ধরনের পোশাক বেশি জনপ্রিয়? কোন পোশাকগুলো সে ভাবে চলছে না? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল টলিপাড়ার অন্যতম প্রিয় তারকা-স্টাইলিস্ট নীল সাহার সঙ্গে।
নীল বললেন, ‘‘এ বার পুজোয় পোশাকে রঙের একটা বৈচিত্র আছে। রংমিলান্তিটাই এখন চলছে। মেটালিক রং খুব চলছে। পপ নিয়ন রয়েছে। ইদানীং নিয়ন খুব জনপ্রিয় হয়েছে। নিয়ন কমলা, নিয়ন সবুজ, নিয়ন গোলাপি সকলেরই চোখে ধরছে। বিভিন্ন ধরনের পোশাকেই নিয়নের খোঁজ করছেন মানুষ। এ ছাড়াও এখন ফুলহাতা শার্ট এবং স্কার্টের একটা চাহিদা রয়েছে। একরঙা শার্টের সঙ্গে মানানসই রঙের নকশা করা লম্বাঝুলের স্কার্ট এখন ভীষণ চলছে। মিলিটারি প্রিন্টের ক্রপ টপ, শার্ট অনেকেই পছন্দ করছেন। এই ধরনের পোশাকে বেশ স্মার্ট দেখতে লাগে। এখন আসলে সকলেই খুব হালকা এবং আরামদায়ক পোশাকের খোঁজ করে। পুজো মানেই হইহুল্লোড়, হাঁটাহাঁটি, যেখানে-সেখানে বসে পড়া, তাই মানুষ এমন পোশাক পরতে চান, যেখানে পোশাক সামলানোর আলাদা ঝক্কি থাকবে না। ফলে জাম্পশ্যুট, ওয়ান পিস, জেগিংসের মতো পোশাকও কিন্তু পুজোতে মানুষ কিনছেন। শাড়ি হোক বা ওয়ান পিস— এক রঙের পোশাকের চাহিদা সব সময়ই বেশি। ‘পাওয়ার শোল্ডার’-এর একটা চাহিদা আছে এই পুজোয়। জামদানির কাজ করা পোশাকও এখন ট্রেন্ডে রয়েছে। সুতির সঙ্গে জামদানির কারুকাজ বেশ চলছে। জামদানির সঙ্গে কাঁথাস্টিচ মিশিয়েও একটা একেবারে নতুন স্বাদের পোশাকের চাহিদা তৈরি হয়েছে।’’
টলিপাড়ার অনেক অভিনেতা রকমারি পোশাকের ক্ষেত্রে ভরসা রাখেন নীলের উপর। এই পুজোয় তাঁরা কী ধরনের পোশাক চাইছেন? এ প্রসঙ্গে নীলের উত্তর, ‘‘জামদানি কাপড়ের তৈরি পোশাকের চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি মনামির (ঘোষ, অভিনেত্রী) জন্য সাদা জামদানি দিয়ে একটি পোশাক বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেটা খুব জনপ্রিয় হয়েছে। অনেকেই ওই ধরনের পোশাক বানিয়ে দিতে বলেছেন। কিছু দিন আগেই মনামির জন্যেই কমলা পাড়ের পাটের একটি শাড়ি তৈরি করেছিলাম। সেটা তো ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। পোশাকে পাটের ব্যবহার এই প্রথম এমন নয়। তবে গোটা শাড়িটাই পাটের তৈরি— এটা খানিকটা নতুন। পাটের তৈরি পোশাকের চাহিদা তাই রয়েছে এই পুজোয়।’’
নীল আরও বলেন, ‘‘এ ছাড়া একই রঙের টপ এবং প্যান্টও বেশ ট্রেন্ডিং। ফুলছাপের নকশা ছাড়াও এমব্রয়ডারিতেও আসে। কিছু ক্ষেত্রে নানা রঙের আঁকিবুঁকি থাকে। ক্রেপ করা অর্থাৎ প্রচুর প্লিট দেওয়া পোশাকেরও চাহিদা রয়েছে। কাফতান, বোহো জ্যাকেটও ধোতি প্যান্টের সঙ্গে কেউ কেউ পরছেন।’’