সারা শরীর মাসাজে শুধু আরাম মেলে না, উপকারও আছে অনেক। ছবি: ফ্রি পিক।
দিনভর ঘরে-বাইরে হাজার ঝক্কি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু কাজ নয়, অফিস যেতে ভিড় ঠেলতে হয়, সকাল-রাত। সপ্তাহের ছ’টা দিন হুড়মুড়িয়ে কেটে যায়। একটা ছুটির দিনে উদ্যম নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করার ইচ্ছা হলেও, শরীর সঙ্গ দেয় না। বাড়তি পাওনা তো রয়েছেই-- দুশ্চিন্তা, কাজ নিয়ে ভাবনা। তাই ছুটি পেলেই শরীর চায় একটু আরাম ও বিশ্রাম।
তবে এই বিশ্রামের উপায় নিয়ে নতুন কিছু ভাবলে, একইসঙ্গে শরীর-মন চাঙ্গা হতে পারে। পাশাপাশি গায়ে ব্যথাও উধাও হতে পারে। ৫০ মিনিট থেকে ঘণ্টা খানেক সারা শরীরে মাসাজ করালেই মিলবে নানা উপকার।
ভারতে ভেষজ তেল দিয়ে শরীর, গায়ে মাসাজের চল বেশ পুরনো। দক্ষিণ ভারতে গেলে, এমন অনেক তেল মাসাজের জায়গা পাওয়া যায়। শুধু শহর নয়, শহরতলিতেও এখন বড় বড় স্যালোঁতে শরীর মাসাজের ব্যবস্থা রয়েছে। নানা রকম তেল দিয়ে যেমন মাসাজ হয়, তেমন মাসাজের নানা রকম পদ্ধতিও রয়েছে। যার মধ্যে ‘থাই মাসাজ’ বেশ জনপ্রিয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে হালকা চাপ দিয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মাসাজ করা হয়। নারী ও পুরুষ দু’জনেই মাসাজ করাতে পারেন।
উপকারিতা
১. সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক ভাবে মাসাজ করালে সারা শরীর শিথিল হয়ে যায়। রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। পাশাপাশি কর্টিসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায়, ধীরে ধীরে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা কমে যেতে থাকে। মাসাজের ফলে সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। যা মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ কমে যায়।
২. মাসাজের ফলে সারা শরীরেই রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। রক্ত সঞ্চালন ভাল হলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। পাশাপাশি প্রতিটি কোষে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন, অক্সিজেন সরবরাহ হওয়ায় শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৩. শরীরে নমনীয়তা বাড়াতেও সাহায্য করে মাসাজ। সঠিক মাসাজে সাধারণ ব্যথাও কমে যায় অনেক সময়।
৪. মাসাজে ‘লিম্ফোটিক ড্রেনেজ’ ভাল হওয়ায় শরীর ঝরঝরে লাগে। পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়। তার উপর কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।
৫. সঠিক পদ্ধতিতে মাসাজ করা হলে মাথা ব্যথা, কষ্ট কমে যায়। ক্লান্তি দূর হয়।
শুধু এটুকুই নয়, শরীর ও মনের উপর মাসাজের একাধিক ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পেশির ব্যথা, এমনকি গাঁটের ব্যথাতেও আরাম দিতে পারে মাসাজ।
সতর্কতা
১. সঠিক মাসাজ যেমন শরীরের পক্ষে ভাল, ঠিক তেমন মাসাজে ভুল ভ্রান্তিতে ক্ষতি হতে পারে। মাসাজ মানে সঠিক জায়গায়, সঠিক চাপ। তেল দিয়ে গায়ের জোরে ঘষাঘষি করলে সেটা সঠিক মাসাজ নয়। তাই মাসাজ যিনি করবেন তিনি কতটা অভিজ্ঞ জেনে নেওয়া দরকার।
২. সকলের শরীরে সমস্ত রকম তেল সহ্য হয় না। তাই মাসাজ করার আগে জেনে নিন সেই তেলে কোনও রকম অ্যালার্জি আছে কি না।
৩. ত্বকে কোনও সংক্রমণ থাকলে, সে সময় তেল দিয়ে মাসাজ না করাই ভাল। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাসাজ করানো উচিত। যেহেতু মাসাজে রক্তসঞ্চালন ভাল হয়, সামান্য হলেও রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৫. শারীরিক কোনও সমস্যা থাকলে মাসাজ যিনি করবেন, তাঁর সঙ্গে আগাম কথা বলে নেওয়া দরকার।
৬. মাসাজের আগে স্নান করে নেওয়া বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নোংরা মুছে নেওয়া দরকার।