চাইলেই কি সহজে মেলে মুক্তি? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সদ্য স্বাধীনতা দিবস গেল। স্বাধীনতা আর মুক্তি সমার্থক দু’টি শব্দ। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে দৈনন্দিন জীবনের ঘেরাটোপে আদতে সকলেই কি মুক্ত? একাকিত্বে, বেকারত্বে, অপছন্দের চাকরিতে, প্রাণহীন সম্পর্কে— কোথাও না কোথাও বন্দি আছেন অনেকেই। বাস, ট্রেন, রাস্তাঘাট, পরিবার, সম্পর্কে— মুক্তি হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে চলেছেন বহু মানুষ। চাইলেই কি সহজে মেলে মুক্তি?
মুক্তির এই অন্বেষণের সংলাপ নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্যাপনের মাসে ‘লোকে কী বলবে’তে মুক্তির একটি ধারাবাহিক পর্ব চলছে। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ‘জেল থেকে মুক্তি’। প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। তবে অনুত্তমা একা নন, এই পর্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংশোধনাগারের মনোবিদ বসুন্ধরা গোস্বামী।
এক জন লিখেছেন, ‘জেল থেকে ফেরা ব্যক্তিকে সমাজ কী চোখে দেখে, তা নিয়ে আলোচনা নিশ্চয় প্রয়োজন। কিন্তু সংশোধনের জন্য যেখানে পাঠানো হচ্ছে, সেখানের পরিবেশ কতটা পরিবর্তিত হল? কারারক্ষী এবং পুলিশকর্মীরা আজও তাঁদের উপর অত্যাচার করেন কি? জেলের ভিতরে যদি প্রতি মুহূর্তে অত্যাচার চলে, তা হলে বাইরে আসার পরে কি সত্যিই তার পক্ষে সমাজের মূলস্রোতে ফেরা সম্ভব? কিংবা সম্মানজনক ভাবে মেশা সম্ভব কি? আমার নিজের মনে হয় জেলের ভিতরের পরিবেশের একটি বড় পরিবর্তন আসা দরকার।’
দীর্ঘ দিন ধরে জেলবন্দিদের মনের শুশ্রূষা করেছেন বসুন্ধরা। জেলের ভিতরের পরিবেশ, বন্দিদের দৈনন্দিন যাপন সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। সবটা দেখেছেন। তাই এই প্রশ্নটি অনুত্তমা ছুড়ে দিলেন তাঁর দিকেই। বসুন্ধরা বললেন, ‘‘সংশোধনাগারের মূল উদ্দেশ্য হল অপরাধীর মন থেকে অপরাধমূলক চিন্তা-ভাবনার বীজ সমূলে বিনষ্ট করা। বিভিন্ন ঔপনিবেশিক আইনে বদল আনার চেষ্টা চলছে স্বাধীনতার পর থেকেই। এখনও সে চেষ্টা জারি আছে। জেলের ভিতরের বহু নিয়ম বদলেছে। কর্তৃপক্ষের আচরণ বদলেছে। কারণ জেলে যাঁরা বন্দি আছেন, তাঁরা তো কেউ প্রজা নন। তাঁদের হয়তো ভোটাধিকার নেই। তাঁরাও তো দেশের নাগরিক। এক সময় পর তো নাগরিক জীবনে তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর তাকে যখন বন্দি করা হল, জেল কর্তৃপক্ষের প্রথম লক্ষ্য হয় তাকে নতুন করে গড়ে তোলা। বিভিন্ন কিছু শেখানো, অপরাধপ্রবণতা থেকে বার করে আনার চিকিৎসা। এক বার অপরাধ করেছেন বলে কারও উপর সারা জীবনের জন্য অপরাধীর তকমা সেঁটে দেওয়া আরও একটি অপরাধ। কাজের শুরুতে আমি নিজেও এ রকম একটি মনোভাবের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে ওই পরিবেশে এবং ওই মানুষগুলির সঙ্গে অভিযোজিত করার চেষ্টা করেছি। সফলও হয়েছি।’’