‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই পর্বের বিষয় ছিল ‘টাকার লোভ! কী করে বলব!’ গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
সময়টাই বড় গোলমেলে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টাকার এক অন্য রূপ সামনে আসছে। যা শঙ্কিত করেছে অনেককেই। একসঙ্গে লজ্জা আর অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তার একটা সার্বিক প্রেক্ষাপট আছে। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’র আজকের যে বিষয়, সে আলোচনায় উঠে এল নিজেদের সঙ্গে টাকার সম্পর্কের কিছু দিক।
অনেক সময়ে অন্যের জীবনে ঘনিয়ে আসা বিপদ, নিজেদের সম্ভাব্য সঙ্কটের কথা মনে করিয়ে দেয়। তেমনই কিছু সমস্যা নিয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই পর্বের বিষয় ছিল ‘টাকার লোভ! কী করে বলব!’
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। দেবশ্রী নামে এক শ্রোতা জানিয়েছেন, তিনি পেশাগত ভাবে অত্যন্ত সফল। শারীরিক কিছু অসুস্থতা আছে। শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করেও অনেক কাজ করে গিয়েছেন। কোনও সুযোগ ছাড়েননি। শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, তা বুঝতে পেরেও অর্থ উপার্জনের আসক্তি ক্রমশ চেপে বসেছে তাঁর মধ্যে। তবে আইনবিরুদ্ধ কোনও কাজের মাধ্যমে উপার্জনের কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু শরীরের কথা না ভেবে টাকার পিছনে ধাওয়া করাও তো এক ধরনের লোভ।
দেবশ্রীর প্রশ্নের একই অনুরণন পাওয়া গেল বারাসতের বাসিন্দা রমেন দাসের কথাতেও। রমেন জানিয়েছেন, ভাল লাগার কোনও কাজ তিনি করতে পারছেন না। মা, সংসার, পরিবারের সব দায়িত্ব একা হাতে সামলাতে হয়। টাকার প্রয়োজন নেই, এমন নয়। কিন্তু রোজগার করতে গিয়ে পছন্দের কিছুই আর করা হয়ে উঠছে না। অনেকের রাশি রাশি টাকা। অনেকের অনেক কিছু পাওয়ার মধ্যে নিজেকে কেমন হতাশাগ্রস্ত লাগে।
দু’জনের প্রশ্ন থেকেই একটি জিনিস উঠে এল যে— টাকার প্রয়োজন আছে। টাকা যে অপ্রয়োজনীয় নয়, সে সম্পর্কে প্রত্যেকেই অবগত। এমনকি, কোনও শিশুকেও টাকা দিলে সে বেশ আনন্দিত হয়। কিন্তু লোভ আর প্রয়োজন আলাদা বিষয়। লোভ অনেক কিছুর প্রতি থাকতে পারে। সেখানে টাকার একটা বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, তা আরও অনেক প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের জোগান দেয়। টাকা সুখ আর নিরাপত্তা, দুই-ই এনে দিতে পারে। যা আর কোনও কিছুর বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয়। কঠিন বাস্তব হলেও এটি সত্য। গোটা সমাজের ক্ষেত্রেও সত্য। এ তো গেল প্রয়োজনের কথা। একেবারে সংজ্ঞার জায়গা থেকে যদি লোভকে দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে লোভ তখনই জন্মায়, যখন আগমনকে আর প্রয়োজন দিয়ে বাঁধা যায় না। এ যেন এক অতৃপ্ত তাড়না। যতই থাক, কিছুতেই যেন তৃপ্ত হচ্ছে না মন। মনে হচ্ছে আরও প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন এমন জায়গায় চলে যাচ্ছে যে, কোন পথ দিয়ে সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছচ্ছে, তা বিবেচনা করা ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে। এখানে তিনটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক, উপার্জনের মাধ্যম। দুই, কী ভাবে তা ব্যয় করা হচ্ছে। তিন, কী ভাবে সে টাকা রাখা হচ্ছে। এই তিনটিরই দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই তিনটিকে কতটা প্রয়োজনের নিরিখে দেখা হচ্ছে, আর কোথায় তা প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্য আচরণে লিপ্ত হতে বাধ্য করছে— যেখানে সম্পত্তি বিপত্তি হয়ে উঠতে না পারে, তা দেখতে হবে। নিজের ভিতরের যে একটা নৈতিকতার বাঁধ, তা লোভের পিছনে ছুটতে গিয়ে কোথায় কখন ভেঙে যায়, তা অনেক সময়ে ধরতেও পারা যায় না। এমনই মনে করালেন অনুত্তমা।