Anuttama Banerjee

উৎসবের আড়ম্বর শেষে একাকিত্বে ভুগছি! লোককে কী করে বলব? আলোচনায় মনোবিদ

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই পর্বের বিষয় ‘বড় একা লাগে!’

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ২০:৪১
একাকিত্বের সংলাপে অনুত্তমা।

একাকিত্বের সংলাপে অনুত্তমা। নিজস্ব চিত্র।

উৎসব মানে উদ‌্‌যাপন। অনেক মানুষের সমাগম। অনেক অনেক দিন যাঁদের সঙ্গে দেখা হয় না, তাঁদের সঙ্গে আড্ডা, একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো। কিন্তু তার পর? ঠিক যখন দুর্গাপুজোর শেষে পাড়ার আলোগুলি নিভে যায়, মাইকের শব্দগুলি যখন কমে আসে, তখন যে একাকিত্ব অনুভব হয়, তা কাউকে বলা যায় না! বড় একা লাগে! একাকিত্বে গুমরে মরি আমরা! তবে নিজের সঙ্গে নিজের একা থাকা কি কেবল উৎসব বা উৎসবহীনতার সঙ্গে যুক্ত, না কি তার আরও অনেক অধ্যায় থাকে? অনেক সময়ে ভিড়ের মধ্যেও একা লাগে, আবার অনেকের কাছে একাকিত্ব কিন্তু খুব কাঙ্খিত। তা হলে কোন একাকিত্ব আমাদের কাছে যন্ত্রণার? কোন একাকিত্ব আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়? এই সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বড় একা লাগে!’

Advertisement

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। মধুরা লিখেছেন, ‘‘উৎসবের সময়ে বেশ হুল্লোড় করে কাটল কিছু দিন। কিন্তু যেন পলক পড়তেই চলে গেল সেই উচ্ছ্বাস। বিদেশ থেকে দেশে পাড়ি দিয়ে অনেক বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেশ ভালই সময় কাটল, কিন্তু আবার কাজের জায়গায় ফেরত যাওয়ার নামেই মনটা হু হু করে উঠল। হঠাৎ মনে হতে লাগল, কেন এলাম এই এক চিলতে আনন্দের খোঁজে! দিব্যি তো ছিলাম ওখানে একা। আবারও ফিরতে হবে সেই একাকিত্বের জীবনে। অথচ বাড়িতে এই একাকিত্বের কথা বলতেই পারছি না, বললেই বলবে বিয়ে করে ফেললেই হবে মুশকিল আসান। কী যে করি?’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘‘উৎসবের মেজাতে ভালই ছিলাম। তবে এখন যেন সব নিস্তব্ধ! কিছু একটা গিলে খেতে আসছে। সারা ক্ষণ সিনেমা বা গান চালিয়ে রাখছি। বই পড়লে যেন আরও বেশি একা লাগছে। খালি কান্না পাচ্ছে। কারণটা নিজেও জানি না। আমি এক জন ছাত্রী। খুব কাছের বন্ধু বা প্রিয়জন কেউ নেই। কেবল আমরই কি এমনটা হচ্ছে? আমি কি অসুস্থ?’’

এই প্রশ্নের উত্তরে মনোবিদ বললেন, ‘‘উৎসবের মধ্যে আমাদের এক ঝাঁক অন্য উত্তেজনার উপাদান থাকে। ভেবে দেখবেন, ছোটবেলায় লম্বা ছুটির পর যখন স্কুল খুলত, তখন আমাদের মনে একই রকম অনুভূতি হত। মনটা একেবারেই ভাল লাগত না। হোমওয়ার্কের ঠেলায় যে দারুণ ছুটি কাটত, তেমনটা নয়। তবুও স্কুল খোলার অনুভূতিটা মোটেই সুখকর হত না। উৎসবের মরসুমে এতটাই জাঁকজমক থাকে যে, এর রেশ কাটতে অনেকটা সময় লাগে।

আমার উত্তেজনা কমে আসছে। আমি আর চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারছি না মানেই কিন্তু অবসাদ নয়। আদতে উৎসব শেষে আমাদের যত না একা লাগে, তাঁর থেকে অনেক বেশি ফাঁকা লাগে। কারণ, আমদের চারপাশটা অনেক কিছু দিয়ে ভরাট করা ছিল। এই মনোভাব যদি আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক সঙ্গী হয়, তা হলেও কিন্তু ক্লান্তি আসবে। এই ফাঁকা লাগাকে কী ভাবে পূরণ করতে পারি, সেটা বরং জানা যাক। আমারা কিন্তু অনেকেই উৎসবের শেষে মরসুমি অবসাদে ভুগি। এমনটা হলে পছন্দের গান কিংবা ঢাকর বাদ্যি শুনুন না, দেখবেন ভাল লাগছে। খানিকটা হলেও উৎসবের মেজাজ ফিরে পাবেন। কাজকর্মের মাঝেও সপ্তাহান্তে নিজের সঙ্গে নিজের মন ভোলানো সময়ও কাটাতে হবে। যেই পরিবেশে আছেন, তারই চারপাশে নিজের আনন্দটুকু খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন। ফাঁকা থাকাটাকে একা থাকার সঙ্গে যদি আমরা না গুলিয়ে ফেলি, তা হলে দেখুন তো নিজের সঙ্গে নিজের আবার একটু ভরে ওঠা সম্ভব হয় কি না?’’

আরও পড়ুন
Advertisement