Anuttama Banerjee

আমার কোনও কাজেই বস্ খুশি হন না, টাকা থাকলেও সুখ নেই চাকরিতে, লোককে কী করে বলব? আলোচনায় মনোবিদ

‘লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই পর্বের বিষয় ‘এই চাকরি ভাল লাগছে না!’

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৩০
লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা

লোকে কী বলবে! সঙ্গে অনুত্তমা

চাকরি না থাকলে দুর্বিষহ লাগে, কিন্তু চাকরি থাকলেও কি সব সময় সুখী থাকি আমরা? কখনও সহকর্মীর সঙ্গে মনোমালিন্য। কখনও বসের সঙ্গে অসুবিধা কখনও আবার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা— নানা কারণেই আমাদের মনে হয় ইস, আজ যদি অফিসটা না থাকত! পর মুহূর্তেই আবার মনে হয়, কত লোকের তো চাকরিই নেই, এত সুখের চাকরি আমার ভাল লাগছে তা আর পাঁচজনকে বলব কী করে! চাকরি জীবনের নানা সংকট নানা বিপন্নতা নিয়ে আমরা অনেক সময়ই হিমশিম খাই। কিন্তু ইস্তফাই কি একমাত্র সমাধান? না কি আরও কোনও পথ আছে— তা নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘এই চাকরি ভাল লাগছে না’।

Advertisement

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমনই কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ।

এক জন লিখেছেন, ‘আমি একটি বহুজাতিক সংস্থায় ডেটা অ্যানালিস্টের কাজ করি। প্রথমে সবটা ঠিকই ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, আমার এই চাকরির থেকে মন উঠে যাচ্ছে। আমার টিম লিডার অকারণে আমার সঙ্গে ঝামেলা করেন। আমার কাজ কখনওই তাঁর নজরে পড়ে না। আমার মনে হয় তিনি পক্ষপাতিত্য করেন। বসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার নানা চেষ্টা করেছি। কোনও কিছুতেই কোনও লাভ হয়নি। ভাবি চাকরিটা ছেড়ে দেব, কিন্তু চাকরি ছাড়লে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির খরচ কী ভাবে উঠবে সেই ভেবেই পিছিয়ে আসি’।

শর্মি লিখেছেন, ‘আমার বস্‌ আমার উপর এত কাজের চাপ দেন, যে আমার স্বামী তা মেনে নিতে পারছেন না। আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাইছি। তবে হাতে আর কোনও চাকরিও নেই। কী করব’?

এই প্রশ্নের উত্তরে মনোবিদ বললেন,‘‘এই সব ক্ষেত্রেই সমস্যাটা সহকর্মীর সঙ্গে নয়, যাঁর অধীনে কাজ করছেন, সমস্যাটা তাঁকে নিয়েই। আমাদের বসে কাজ করার ধরন অবধারিত ভাবে আমাদের মনের উপর ও কাজের উপর পড়ে। এমন অনেক বস্‌ আছেন, যাঁরা কাজের চাপ হয়তো বেশি দেন। কিন্তু তিনি সকলের মধ্যেই কাজটা সমান ভাগে ভাগ করেন। অর্থাৎ নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের ক্লান্তি আসতে পারে, আমাদের মনে বিরক্তি জাগতে পারে, কিন্তু একটা কথা ভেবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি কেবল আপনার সঙ্গেই কঠোর নন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যেন সেই মানসিক তৃপ্তিটা পাচ্ছেন না লোকজন। কোথাও কাজ করতে গেলে আমরা কেবল আর্থিক লাভ টুকুই দেখি না। পদোন্নতি কিংবা কোনও কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও আমাদের ভাল লাগে। আপনি কোনও কাজে যতটা সময় দিচ্ছেন, যতটা পরিশ্রম করছি তার পরিবর্তে আপনার যা প্রাপ্য, সেটা কি আদৌ আপনি পাচ্ছেন, সেটাও কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মাস গেলে ব্যাঙ্কে মাইনে ঠিকঠাক ঢুকলেও সারা মাসের শেষে যদি আপনার কাজের মূল্যায়ন ঠিক মতো না হয়, তা হলে গায়ে লাগে বইকি!’’

অনুত্তমা আরও বললেন, ‘‘চাকরি ছাড়াটা কিন্তু কোনও সমাধান নয়। কে বলতে পারে, আপনি নতুন যে চাকরিতে যোগ দিলেন সেখানেও আপনার পুরনো বসের সঙ্গে আপনার দেখা হবে না! বসের কোনও আচরণ খারাপ লাগলে বসের উপরে যিনি আছেন, তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দেখুন। আপনি নিজের জায়গায় ঠিক থাকলে আপনার কথাগুলি নিশ্চয়ই সংস্থার উপর মহলের দ্বারা বিবেচনা করা হবে। একটু ধৈর্য ধরুন। হঠকারি সিদ্ধান্ত নেবেন না। যদি দেখেন চাকরি ছাড়লে আপনার আর্থিক ভাবে যা ক্ষতি হবে তাতে আপনি আরও খারাপ থাকবেন, তা হলে বলব কিছু দিনেন জন্য বসের মূল্যায়নের বিচারে নিজের মূল্যায়ন করবেন না। প্রতিষ্ঠান অনেক বড়। কোনও এক জন ব্যক্তির মন জুগিয়ে চলা আপনার কাজ নয়। বসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে খানিকটা মানসিক দূরত্ব রেখেই দেখুন না কেমন হয়?’’

আরও পড়ুন
Advertisement