ভারতীয় নেকড়ে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চারটি নেকড়েকে খাঁচাবন্দি করার পরেও থামল না হামলা। উত্তরপ্রদেশের বহরাইচে বৃহস্পতিবার রাতে ফের হানা দিল মানুষখেকো। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘরের ভিতর ঢুকে ১২ বছরের এক ঘুমন্ত বালককে ঘাড় কামড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটি নেকড়ে। চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যেরা জেগে উঠলে শিকার ছেড়ে পালায় সে।
গত দু’মাসে বহরাইচ জেলার একাধিক গ্রামে নেকড়ের হামলার ঘটনায় এক মহিলা এবং ন’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মূলত মাহসি ব্লকের সিসিয়া পঞ্চায়েত এবং আশপাশের অঞ্চলগুলিতেই গত দু’মাসে মূলত ঘটছে নেকড়ে হানার ঘটনা। বহরাইচ জেলার নেপাল সীমান্তবর্তী কাটার্নিয়াঘাট ব্যাঘ্রপ্রকল্পের বাফার জ়োনে নেকড়ের উপস্থিতি রয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, ওই নেকড়েগুলি সেখান থেকেই লোকালয়ে এসে ডেরা বেঁধেছে।
কিন্তু কেন তারা মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে? ফরেস্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠকের মতে, মানুষের দ্বারা কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই নেকড়ের পাল। এ ক্ষেত্রে ‘প্রতিশোধের তত্ত্ব’ উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। সঞ্জয় বলেন, ‘‘নেকড়েদের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা আছে। কেউ যদি তাদের বাসা বা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করে, তবে তারা মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়।’’
সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে বহরাইচের রামুয়াপুর এলাকায় একটি বাসা জলপ্লাবিত হয়ে কয়েকটি নেকড়েশিশুর মৃত্যু হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে, তার পরেই শুরু হয় হামলার ঘটনা। বহরাইচের মানুষখেকো নেকড়েদের গুলি করে মারার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। নেকড়েদের এমন আচরণের কারণ অনুসন্ধান করতে পৌঁছেছেন, দেহরাদূনের ‘ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’ (ডব্লিউআইআই)-র বিশেষজ্ঞেরা।
১৯৯৬ সালে উত্তরপ্রদেশেরই প্রতাপগড় জেলায় ‘মানুষখেকো’ সন্দেহে কয়েকটি নেকড়েকে গুলি করে মারা হয়েছিল। কিন্তু তারা আদৌ মানুষখেকো ছিল কি না, তা নিয়ে পরবর্তী কালে বিতর্ক দানা বাঁধে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘ন্যাশনাল চিতা অ্যাকশন প্ল্যান’ (জাতীয় চিতা পুনঃস্থাপন কর্মসূচি)-এর প্রাক্তন প্রধান তথা বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ যাদবেন্দ্রনাথ ঝালা বহরাইচের ঘটনার জন্য নেকড়ের দল দায়ী কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নেকড়েরা সাধারণ ভাবে লাজুক প্রাণী। মানুষকে আক্রমণের নজির খুবই কম।’’