(বাঁ দিকে) এম কে স্ট্যালিনের পুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নিধি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। —ফাইল চিত্র।
‘সনাতন ধর্ম’ সংক্রান্ত মন্তব্যের বিরোধিতা করতে গিয়ে এ বার বেফাঁস কথা বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। অভিযোগ, রাজস্থানের বাড়মেরে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রায় বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘যাঁরা সনাতন ধর্মের বিরোধিতা করবেন, তাঁদের জিভ টেনে ছিঁড়ে নেওয়া হবে। চোখ উপড়ে নেওয়া হবে।’’ গজেন্দ্রের ওই মন্তব্যের একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন যার সত্যতা যাচাই করেনি) ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে সামাজমাধ্যমে।
সনাতন ধর্মকে অপমান করার অভিযোগ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিজেপি এবং বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। উদয়নিধিকে চড় মারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে পোস্টারও পড়েছে। এই আবহে গজেন্দ্রের মতো প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য পুরো বিষয়টিকে ‘অন্য মাত্রা’ দিল বলে মনে করা হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর স্ট্যালিন মন্ত্রিসভার সদস্য তথা জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা উদয়নিধি চেন্নাইয়ে লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার এই অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানোয় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। এই সনাতন প্রথা সামাজিক ন্যায় এবং সাম্যের বিরোধী।’’ অভিযোগ, ওই অনুষ্ঠানে উদয়নিধি জানিয়েছিলেন যে, কিছু জিনিস আছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও মুছে ফেলা দরকার।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, উদয়নিধির ওই বক্তব্যকে তাঁরা সমর্থন করেন না। স্ট্যালিন-পুত্রও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, কোনও ধর্মকে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রচারে আনতে তৎপর বিজেপি। গোটা বিষয়টিকে হিন্দু ধর্মের উপরে আঘাত বলে অভিযোগ তুলে প্রচারে নেমেছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি ‘ইন্ডিয়া’কে হিন্দু-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নাম না-করে উদয়নিধিকে নিশানা করেছেন।
পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে উদয়নিধির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তাঁকে গ্রেফতারির দাবিও উঠেছে। প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণ্যবাদ, জাতপাত-সহ হিন্দুধর্মের বিভিন্ন প্রথা, মতাদর্শ এবং রীতিনীতির সমালোচনায় বরাবরই সরব পেরিয়ারের অনুগামী ডিএমকে নেতৃত্ব। প্রয়াত আন্নাদুরাইয়ের জমানা থেকেই ‘নাস্তিকতা’ দলের ঘোষিত লাইন।