পঞ্জাবি গায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসেওয়ালা খুন হয়েছেন গত রবিবার সন্ধ্যায়। পঞ্জাবের মানসার জাওয়াহারকে গ্রামের রাস্তাতেই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় গ্যাংস্টার বিষ্ণোই লরেন্স-ঘনিষ্ঠ গোল্ডি ব্রারের নাম উঠে এসেছে।
আগামী ১৭ জুন মুসেওয়ালার জন্মদিন ছিল। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল সঙ্গরেড্ডি গ্রামের আমনদীপ কউরের সঙ্গে। মাস কয়েক আগেই মুসেওয়ালার মা চরণ কউর জানিয়েছিলেন যে, পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের পরই তাঁর ছেলের বিয়ে দেবেন। আয়োজনও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চরণ।
মুসেওয়ালার মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত গোটা সঙ্গীতজগৎ। তাঁকে খুনের অভিযোগ উঠেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের গোল্ডি ব্রারের বিরুদ্ধে। মুসেওয়ালা খুনের পর পরই একটি ফেসবুক পোস্ট প্রকাশ্যে আসে। সেই পোস্টটি বিষ্ণোইয়ের বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
বিষ্ণোইয়ের নামে ওই ফেসবুক পোস্টে লেখা ছিল— ‘সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যার দায় নিচ্ছি আমি এবং আমার ভাই গোল্ডি ব্রার। জনসাধারণ অনেক কিছুই বলছে বলুক। কিন্তু আমরা আমাদের ভাই ভিকি মিদুখেরার খুনের বদলা নিয়েছি। সিধু মুসেওয়ালা আমার ভাইয়ের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল।’
ওই ফেসবুক পোস্টে আরও লেখা হয়েছে— ‘আমি মুসেওয়ালাকে বলেছিলাম, তুমি কিন্তু ভাল কাজ করলে না। কিন্তু ও আমাকে পাল্টা বলেছিল, আমি কাউকে পরোয়া করি না। শুধু তাই-ই নয়, বলেছিল যে, ও বন্দুকে গুলি ভরে রেখেছে। আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বদলা নিতে পেরেছি। তবে এটা সবে শুরু। ভাইয়ের হত্যার যারা যারা জড়িত, তাদেরও সতর্ক করছি।’ যদিও এই পোস্ট লরেন্সের কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তবে বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মুসেওয়ালার ম্যানেজার সঙ্গনপ্রীত সিংহ নাকি ভিকি মিদুখেরার খুনের সঙ্গে জড়িত। যদিও পুলিশ মিদুখেরার খুনের সঙ্গে মুসেওয়ালার কোনও যোগসূত্র খুঁজে পায়নি বলে দাবি।
মুসেওয়ালার খুনে যে গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের নাম উঠে এসেছে, তাঁর আসল পরিচয় কী?
গোল্ডি ব্রারের আসল নাম সতীন্দ্র সিংহ। ১৯৯৪ সালে পঞ্জাবের ফরিদকোটে জন্ম। স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। এ প্লাস ক্যাটেগরির গ্যাংস্টার। রাজস্থানের জয়পুরের গ্যাংস্টার বিষ্ণোই লরেন্সের ‘ডান হাত’ এই গোল্ডি।
পঞ্জাবে খুন, খুনের চেষ্টা, তোলাবাজি-সহ একাধিক মামলা রয়েছে গোল্ডির বিরুদ্ধে। মোট ১৬টি ফৌজদারি মামলার মধ্যে চারটিতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মাঝে কানাডায় পালান গোল্ডি। সেখান থেকেই অপরাধের নেটওয়ার্ক চালাচ্ছেন তিনি।
২০২১-এ ফরিদকোটের যুব কংগ্রেসের সভাপতি গুরলাল সিংহ পহেলবানকে খুনের অভিযোগে পুলিশের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় রয়েছে গোল্ডির নাম। সেই ঘটনার পর পরই কানাডায় পালিয়ে যান গোল্ডি।
গোল্ডির ভাই গুরলাল ব্রার খুন হন ২০২১-এর জুলাইয়ে। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভাইয়ের খুনের বদলা নিতেই যুব কংগ্রেস নেতা গুরলাল সিংহ পহেলবানকে খুন করেন গোল্ডি।
পুলিশ সূত্রে খবর, লরেন্স বিষ্ণোই গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে গোল্ডি তাঁর গ্যাং পরিচালনা করছেন কানাডা থেকে। পুলিশকে ধোঁকা দিতে বার বার নিজের রূপ বদল করেছেন গোল্ডি।
সূত্রের খবর, গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই এবং কালা জাঠেড়ির নির্দেশে কানাডায় বসেই ভারতে ‘হিট স্কোয়াড’ ভাড়া করেছিলেন গোল্ডি। সেই ‘হিট স্কোয়াড’ই মুসেওয়ালাকে গুলি করে খুন করেছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের।
সূত্রের খবর, দিল্লির তিহাড় জেলে বসেই মুসেওয়ালার খুনের ছক তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি সেই তিহাড় জেলে বন্দি লরেন্স বিষ্ণোই।
কয়েক দিন আগেই দিল্লি পুলিশ শাহরুখ নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, শাহরুখের ফোন থেকে যে মেসেজ উদ্ধার হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে, গোল্ডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শাহরুখ। এবং গোল্ডির নির্দেশ পালন করতেন।
গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল চার জন শ্যুটারকে গ্রেফতার করেছিল। জিতেন্দ্র গোগী গোষ্ঠীর শ্যুটার ছিল তারা। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন গোগী। তাঁর খুনের বদলা নিতেই দিল্লিতে হাজির হয়েছিল ওই চার জন। গোল্ডির নির্দেশেই খুনের বদলা নিতে হাজির হয়েছিল ওই শ্যুটাররা।
গোল্ডি যাঁর নির্দেশে কাজ করেন, সেই বিষ্ণোই লরেন্স কে?
খুন, অপহরণ-সহ একাধিক অপরাধের ‘কিংপিন’ লরেন্স বিষ্ণোই। ১৯৯৩ সালে পঞ্জাবের ফিরোজপুরে জন্ম। ২০০৯ সালে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন লরেন্স।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন অব পঞ্জাব ইউনিভার্সিটি (সোপু)-র মাথা হয়ে ওঠেন। ছাত্র রাজনীতি করতে করতেই অপরাধের দুনিয়ায় পা রাখেন লরেন্স।
ছাত্র রাজনীতি করার সময় ভিকি মিদদুখেড়ার সঙ্গে পরিচয় হয় লরেন্সের। এর পর ভিকি শিরোমণি অকালি দলে যোগ দেন। অন্য দিকে, লরেন্স পুরোপুরি অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েন।