‘র’ এবং আইবি রিপোর্ট প্রকাশ্য়ে আনায় সুপ্রিম কোর্টকে নিশানা রিজিজুর। ফাইল চিত্র।
বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কলেজিয়াম পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আগেই। এ বার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সেই কলেজিয়ামের বিরুদ্ধে গোপন সরকারি তথ্য ফাঁসের অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আপত্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক বৈঠকে রিজিজু বলেন, ‘‘জনসমক্ষে ‘র’ (ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা) এবং আইবি (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ)-র রিপোর্ট চলে আসা আমাদের কাছে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’’ এর ফলে বাহিনীর কর্মক্ষমতায় আঘাত আসতে পারে জানিয়ে রিজিজুর মন্তব্য, ‘‘যদি কোনও গোয়েন্দা আধিকারিক আগে থেকে আঁচ পান, তাঁর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসবে, তবে তিনি দু’বার ভাববেন।’’
কেন্দ্রের এই আপত্তির কথা তিনি প্রধান বিচারপতিকে জানাবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে রিজিজু বলেন, ‘‘আমি সব সময়ই ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। উনি বিচার বিভাগের প্রধান, আমি সরকার এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সেতুর কাজ করি। আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করতে পারি না। এটি একটি বড় সমস্যা। অন্য দিনের জন্য এটি ছেড়ে রাখা যাক।’’
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদী জমানায় কলেজিয়াম ব্যবস্থা বাতিল করার উদ্দেশ্যে সংসদে পাশ হওয়া জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন (এনজেএসি) আইনকে সুপ্রিম কোর্ট কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এই আবহে কলেজিয়ামের সুপারিশ করা কয়েক জন আইনজীবীকে কোন কারণে বিচারপতি হিসেবে আইন মন্ত্রক নিয়োগ করতে চাইছে না, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম গত সপ্তাহে তা প্রকাশ্যে জানায়।
দিল্লি হাই কোর্টের আইনজীবী সৌরভ কৃপাল সমকামী বলেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তাঁকে হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে আপত্তি তুলেছিল। মাদ্রাজ হাই কোর্টের আইনজীবী আর জন সথ্যান এবং বম্বে হাই কোর্টের আইনজীবী সোমশেখর সুন্দরেসন সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী সরকারের সমালোচনা করেছিলেন বলে আইন মন্ত্রকের আপত্তি ছিল। এই তথ্য প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার আইন মন্ত্রক প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে।
এ নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। দাবি উঠেছে, কেন এক জন ভারতীয় নাগরিকের যৌনসঙ্গী নির্বাচন বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের উপর গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এবং গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইবি’ নজরদারি চালাচ্ছে সে বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে কৈফিয়ত তলব করুক সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ‘নিরাপত্তার ঢাল’ দিয়ে বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিতে সক্রিয় হয়েছেন বলে বিরোধীদের একাংশের ধারণা।