ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবং তিপ্রা মথা প্রধান প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।
যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে মঙ্গলবার বিকেল ৪টেতে ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্ব শেষ হল। আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সে রাজ্যের ৬০টি আসনের সব ক’টিতেই ভোটগ্রহণ হবে। গণনা আগামী ২ মার্চ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য দুই রাজ্য মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে।
গত বছরের জুন মাসে রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিরোধীরা জোট বাঁধলে সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি। এর পর আংশিক বিরোধী ঐক্য হয়েছে। একদা প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ১৩টি এবং নির্দল প্রার্থীকে ১টি আসন ছেড়ে ৪৬টিতে লড়ছে বামেরা। যদিও মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেন, ‘‘নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে আবার ত্রিপুরায় সরকার গড়বে বিজেপি।’’
১৯৮৮-তে সিপিএম এ রাজ্যে হেরেছিল কংগ্রেস-টিইউজেএস জোটের কাছে। ১৯৯৩ সালে তারা আবার ক্ষমতায় ফেরে। তার পর থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর সিপিএমকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে বিজেপি ‘ঝড়ে’ পতন ঘটে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার ভোটে প্রার্থীই হননি মানিক। অন্য দিকে, রাজ্যের প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবও এ বার ভোটে লড়ছেন না।
মঙ্গলবার প্রচারের শেষ দিনে রাজধানী আগরতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন উত্তেজনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জি কে দীনাকর রাও। যদিও বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট, তৃণমূল এবং জনজাতি দল তিপ্রা মথার তরফে ইতিমধ্যেই শাসক পদ্ম-শিবিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে স্বশাসিত জনজাতি পরিষদের (এডিসি) এলাকায়। সেখানে বিজেপি-আইপিএফটি জোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিপুরার রাজ পরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের দল তিপ্রা মথা। ভোট প্রচারের সময় প্রদ্যোত দাবি করেছেন, কোনও শিবিরই গরিষ্ঠতা পারে না। সে ক্ষেত্রে তিপ্রাই ‘কিং মেকার’ হতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ। দলের জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।
২০১৮-র বিধানসভা ভোটে ৩৬টি আসনে জিতে একাই গরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটি জিতেছিল ৮টিতে। আড়াই দশক শাসন চালানোর পরে মাত্র ১৬টি বিধানসভা আসনে জয় পায় বামেরা। গত জুনের উপনির্বাচনে হাতছাড়া হয় আরও একটি আসন। অন্য দিকে ওই উপনির্বাচনে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস।
এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরার দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দু’টি আসনেই দ্বিতীয় হয়েছিল কংগ্রেস। ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বামেরা। রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫১টিতে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। ৯টিতে কংগ্রেস। ২০১৮ পর্যন্ত ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকা বামেরা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাবে রাজ্যের একটি বিধানসভা আসনেও এগিয়ে নেই!