(বাঁ দিকে) শিশুটিকে উদ্ধার করার মুহূর্তের ছবি এবং তিন বছরের চেতনা (ডান দিকে) ছবি: পিটিআই।
টানা ১০ দিন চেষ্টা চলছিল। বিভিন্ন কৌশল বদল করে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। অবশেষে বুধবার রাজস্থানের ৭০০ ফুট কুয়ো থেকে তিন বছরের সেই শিশুকে উদ্ধার করল র্যাট-হোল খননকারী দল। উদ্ধারের পর তড়িঘড়ি ওই শিশুকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সে জীবিত আছে না মৃত, তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। পরে হাসপাতালের তরফে ওই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এনডিআরএফ কমান্ড্যান্ট যোগেশ মীনা জানান, যখন শিশুটিকে কুয়োর মধ্যে থেকে বাইরে বার করে আনা হয় তখন তার জ্ঞান ছিল না। নড়াচড়া করছিল না সে। মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক চৈতন্য রাওয়াত বলেন, ‘‘আমরা ওই শিশুর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’’ বুধবার রাতেই ওই শিশুর ময়নাতদন্ত হবে। কখন ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট হবে বলে জানান চৈতন্য।
গত ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে রাজস্থানের কোটওয়ালেতে খেলতে খেলতে ৭০০ ফুট গভীর ওই কুয়োয় পড়ে যায় তিন বছরের চেতনা। প্রথমে সে কুয়োর ১৫ ফুট গভীরে আটকে ছিল। পরিবারের লোকেরা তাকে টেনে বার করার চেষ্টা করতে গেলে উল্টে আরও ১৫০ ফুট গভীরে পড়ে যায় সে। এর পর শুরু হয় উদ্ধারকাজ। টানা ১০ দিন ধরে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছিল গ্রামবাসীদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অনেকেই ওই কুয়োর কাছে ভিড় করেছিলেন। বাবা-মায়ের চোখেমুখে ছিল আতঙ্ক। সকলের মনে ঘুরছিল একটাই প্রশ্ন, ‘‘বাঁচবে তো মেয়েটা?’’ শুধু ওই গ্রামের লোকেদের নয় গোটা দেশের নজর ছিল উদ্ধারকাজের দিকে। বুধবার উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা পৌঁছে গিয়েছিল শিশুর কাছে। বুধবার ওই শিশুকে কুয়োর বাইরে বার করে আনেন তাঁরা। চেতনার পরিবারের অভিযোগ, উদ্ধারকাজ ঠিক মতো হয়নি। যদিও সেই অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা প্রশাসন। তাদের দাবি, যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে উদ্ধারকাজ করা হয়েছে। সব রকম প্রচেষ্টা করেছে উদ্ধারকারী দল। তবে বৃষ্টির জন্য সমস্যাও হয়েছিল বলে দাবি প্রশাসনের।
কুয়োয় পড়ে যাওয়ার পরই উদ্ধারকাজ শুরু করে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পরে আসে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরাও। যদিও সাত দিন লাগাতার সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাই শেষ চেষ্টা করতে মাঠে নামেন দক্ষ খনি-শ্রমিকেরা। নিষিদ্ধ ‘র্যাট-হোল মাইনিং’ অর্থাৎ ইঁদুর-গর্ত খনন পদ্ধতিতে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন তাঁরা। তিন দিন চেষ্টার পর বাচ্চাটিকে উদ্ধার করা হয়।
কুয়োর মধ্যে যাতে চেতনার শ্বাস-প্রশ্বাসের অভাব না হয়, তার জন্য কুয়োর মুখ দিয়ে একটি অক্সিজেন পাইপও প্রবেশ করানো হয়। একটি পাইলিং মেশিনের সাহায্যে শুরু হয় খননের কাজ। শিশুকে উদ্ধার করতে ২০ ফুট দূরে কুয়োর সমান্তরালে ১৭০ ফুট গভীর সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়। তবে প্রথমে উদ্ধারকারী দল শিশুটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। জেলা প্রশাসন প্রথম থেকেই উদ্ধারকাজে নজরদারি চালায়। শিশুটি যাতে ১৭০ ফুট থেকে আরও নীচে চলে না যায়, তার জন্য ‘জে’ আকৃতির হুক এবং ‘আমব্রেলা বেস’ তৈরি করে আটকে রাখার ব্যবস্থা করে উদ্ধারকারী দল। তার পর ধীরে ধীরে কুয়োর ২০ ফুট দূরের গর্ত দিয়ে কুয়োর মধ্যে প্রবেশ করে তারা। বুধবার উদ্ধার করা হয় চেতনাকে।